কানাইঘাটে পাথর উত্তোলনকালে ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার মূল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে

30

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট লোভাছড়া পাথর কোয়ারী সংলগ্ন বাংলা টিলা ও সুলটুনি মহাল থেকে দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রভাবশালী চক্র কর্তৃক টিলার উপরে বসবাসরত অনেককে নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে টিলার লোভানদীর তীরবর্তী এলাকা ও উপর থেকে পাথর উত্তোলনের ঘটনার মূল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন বলে স্থানীয় সচেতন মহল জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার সুলটুনি মহাল ও বাংলা টিলার লোভানদীর তীরবর্তী নিচ অংশ থেকে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে ৪ শিক্ষার্থী সহ ৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় কানাইঘাট থানায় দন্ডবিধি ৩০৪ ধারায় ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। উক্ত মামলার এজাহার ভুক্ত ৩নং আসামী বাংলা টিলার উপরে বসবাসরত মৃত নজির হোসেনের ছেলে যুবদল নেতা নুরুল আম্বিয়া (৩৪) কে গত বুধবার পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু থানায় দায়েরকৃত মামলায় যে ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এ ব্যাপারে থানা পুলিশ কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে যাচ্ছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা পর্যন্ত মামলায় কাদের আসামী করা হয়েছে এ ব্যাপারে কোন তথ্য থানা থেকে পাচ্ছেন না। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এজমালী সম্পত্তি সুলটুনি মহাল ও বন বিভাগের সম্পত্তি বাংলাটিলার মালিকানা নিয়ে যাদের মধ্যে মামলা চলছে সেই বাদী ও বিবাদী পক্ষের ৮ জনকে আসামী করা হয়েছে। আসামীদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাটিলা ও সুলটুনি মহাল থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের সাথে জড়িত রয়েছেন বলে জানা গেছে। আবার এলাকার অনেকে জানিয়েছেন, পাথর ও টিলা বেষ্টিত সুলটুনি মহাল ও বাংলা টিলার মালিকানা দখল টিকিয়ে রাখতে সিলেটের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি এবং কানাইঘাট উপজেলার অনেক রাঘব গোয়ালদের নামে সেখানে প্রায় ২শ’ বিঘা জায়গা তাদের নামে দেওয়া হয়েছে, এরা কারা, তাদের পরিচয় উদ্ঘাটনের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। কিন্তু স্থানীয় সচেতন মহল জানিয়েছেন বাংলাটিলা ও সুলটুনি মহালের পরিবেশ বিধ্বংস করে যারা দীর্ঘদিন ধরে সেখান থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের মূলহোতো ও খরিদদার তারা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। আবার এলাকার অনেক পাথর ব্যবসায়ী পুলিশি গ্রেফতারের ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের দুর্ঘটনায় ৪ শিশু শিক্ষার্থী সহ ৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় থানায় এ ব্যাপারে হত্যা মামলা দায়েরের পর থেকে পাথর ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের গ্রেফতার আতংক বিরাজ করছে। এক শ্রেণীর ভাটপার প্রকৃতির কিছু লোকজন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অনৈতিক ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অনেক পাথর ব্যবসায়ীর নাম বলে তাদের মামলায় আসামী করা হয়েছে বলে নানা ধরনের ভয়ভীতি সৃষ্টি করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পাথর ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তারা আতংকের রয়েছেন, তাদের নানা ভাবে মামলায় আসামী করা হয়েছে এ ধরনের ভয় দেখানো হচ্ছে। এলাকার সচেতন মহল জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে লোভাছড়া পাথর কোয়ারীর মূল উৎসস্থল মাঞ্জরি এলাকা থেকে পাথর উত্তোলন স্থানীয় বিজিবি বন্ধ করে দেওয়ায় বর্ষা মৌসুমে ঐ এলাকার বেশির ভাগ খেটে খাওয়া মানুষ পাথর উত্তোলন থেকে বঞ্চিত থাকেন। গত দু’বছর থেকে কিছু প্রভাবশালী পাথর খেকো ও ব্যবসায়ী স্থানীয় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে অর্থের নানা ধরনের প্রলোভন দিয়ে তাদের বাড়ীঘর থেকে পাথর উত্তোলনে উৎসাহিত করায় বাংলা টিলা, সুলটুনি মহাল, ডাউকেরগুল, বাখালছড়া, পাতাসার মোকাম, মনিপুর সহ আশপাশ পাহাড় ও টিলা বেষ্টিত গ্রামের বেশির ভাগ লোকজন তাদের বাড়ীর আঙ্গিনা ও আবাদী জমি খুড়ে পাথর উত্তোলন শুরু করায় লোভাছড়া পাথর কোয়ারীর আশপাশ এলাকায় মারাত্মক ভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটেছে। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে এসব এলাকা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে চেষ্টা করলেও যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোন ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন সেখানে বন্ধ হয়নি। বিশেষ করে বাংলাটিলা ও সুলটুনি মহাল এই এলাকার একটি সৌন্দর্য মন্ডিত টিলা বেষ্টিত এলাকা। সেখান থেকে দীর্ঘদিন ধরে গভীর গর্ত করে এবং লোভানদীর তীর ঘেষা এলাকা থেকে এক ধরনের সুড়ঙ্গ তৈরি করে পাথর উত্তোলন করায় যে কোন সময় সেখানে বড় ধরনের প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এদিকে গত মঙ্গলবার টিলা ধসে ৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের টনক নড়েছে। দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনের জন্য জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশের উদ্যোগে পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৮ জনের বিরুদ্ধে কানাইঘাট থানায় মামলা দায়েরের পর দুর্ঘটনা কবলিত এলাকা ও আশপাশে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাংলাটিলা, সুলটুনি মহাল সহ আশপাশ এলাকা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ করার জন্য বাংলাটিলার আশপাশ এলাকায় সবধরনের নৌযান ও জনসাধারণের চলাফেরা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। সেখানে থানা পুলিশের উদ্যোগে সতর্কীকরণ নোটিশ বোর্ড টাঙ্গানো হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার ওসি আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের ৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় থানায় ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিরাপরাধ কাউকে আমরা হয়রানী করছি না। পুলিশি তদন্তের মাধ্যমে বাংলাটিলা থেকে যারা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন এবং এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আসামী করা হয়েছে তদন্তে যাদের নাম বেরিয়ে আসবে তাদেরকে আমরা আইনের আওতায় আনবো এর কোন ব্যপ্তয় ঘটবে না বলে তিনি জানান।