আজ পবিত্র হজ্ব

107

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ পবিত্র হজ্ব। কাল শুক্রবার সৌদি আরবে পবিত্র ঈদ-উল আযহা। এ উপলক্ষে বিশ্বের ২০ লাখেরও বেশি 1470666627_10হজ্বযাত্রী আজ মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে যাবেন। মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করেই লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক ধ্বনিতে হজ্বযাত্রীরা আরাফাতের ময়দানে গিয়ে নিজ নিজ খিমায় আশ্রয় নেবেন। এখানেই দিনভর এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন তাঁরা। আল্লাহর অশেষ রহমতের ময়দান আরাফাতে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করার নামই হজ। এর আগে-পরে অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ করার মাধ্যমে হজের পরিপূর্ণতা দেয়া হয়। আরাফাত ময়দানে মুসলিম উম্মাহ ‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা, লাব্বায়েক, লাব্বায়েকা লা-শারিকা লাকা লাব্বায়েক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা-শারিকা লাক’ সাহেবগণ যথানিয়মে এখন আরাফাতে অবস্থান করছেন। হজের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে এ দিবসটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়, ঝুঁকিপূর্ণ ও ইবাদতপ্রধান। সাধারণত বর্তমানে ৮ জিলহজ্ব গভীর রাত থেকে হাজী সাহেবগণ এখানে সমবেত হতে থাকেন। পরদিন বাদ জোহর থেকে মাগরিব পর্যন্ত ওকুফে আরাফা বা পবিত্র আরাফা অবস্থান করে ইবাদত বন্দেগীর মূল সময়। এ সময় হাজী সাহেবদের দেখা যায়, সন্ধ্যার পর মুযদালিফায় ফেরার গাড়িঘোড়া প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নানা বেচাইনী ও উদ্বিগ্নতা। আরাফা দিবসের সঙ্গে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা জড়িয়ে আছে। আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে এখানে আখেরি নবী হযরত মুহম্মদ (স.) তাঁর লাখো সাহাবি-ভক্তের সামনে জীবনের শেষ আনুষ্ঠানিক নসীহত-উপদেশ পেশ করেছিলেন। ঐতিহাসিক বিদায় হজ্বের সময় আজকের এ দিনে মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) মদিনা শরীফ হতে মক্কা শরীফে পৌঁছেন। গমন করেন আরাফার পবিত্র ময়দানে।
স্বর্তব্য, দশম হিজরীর জিলকদ মাস। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মায়া’যকে (রা.) ইয়েমেনের গভর্ণর নিযুক্ত করে প্রেরণ করার সময় অন্যান্য প্রয়োজনীয় কথার পর বললেন, হে মায়া’য সম্ভবত এই বছরের পর আমার সঙ্গে তোমার আর সাক্ষাত হবে না। হয়ত এরপর তুমি আমার মসজিদ এবং কবরের কাছে দিয়ে অতিক্রম করবে। সাহাবী হযরত মায়া’য (রা.) একথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চিরবিদায়ের কথা ভেবে কাঁদতে শুরু করলেন।
এক শনিবার দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কার পথে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। জিলকদ মাসের তখনও চারদিন বাকি ছিল। তিনি মাথায় তেল দিলেন, চুল আঁচড়ালেন, তহবন্দ পরলেন, চাদর গায়ে জড়ালেন, কোরবানির পশুকে সজ্জিত করলেন এবং যোহরের পর রওনা হলেন। আছরের আগেই তিনি যুল হুলাইফা নামক জায়গায় পৌঁছলেন। সেখানে আছরের দুই রাকাত নামায আদায় করলেন। রাত যাপনের জন্য তাঁবু স্থাপন করলেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরপর তাঁর সফর অব্যাহত রাখলেন। এক সপ্তাহ পর তিনি এক বিকেলে মক্কার কাছে পৌঁছে যি’তুবা নামক জায়গায় অবস্থান করলেন এবং ফজরের নামায আদায়ের পর গোসল করলেন। এরপর মক্কায় প্রবেশ করলেন। সেদিন ছিল দশম হিজরীর জিলহজ মাসের চার তারিখ রবিবার।
জিলহজ্ব মাসের আট তারিখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিনায় গমন করলেন। সেখানে ৯ জিলহজ্ব পর্যন্ত অবস্থান করলেন। জোহর, আছর, মাগরিব, এশা এবং ফজর এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে সেখানে সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। পরে আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে রওনা হলেন। সেখানে পৌঁছে দেখেন নামিরাহ প্রান্তরে তাঁবু প্রস্তুত রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপবেশন করলেন। সূর্য ঢলে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশে উটনীর পিঠে আসন লাগানো হলো। তিনি প্রান্তরের মাঝামাঝি স্থানে গমন করলেন। সেই সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারদিকে এক লাখ চব্বিশ হাজার মতান্তরে এক লাখ চুয়াল্লিশ হাজার মানুষের সমুদ্র বিদ্যমান ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমবেত জনসমুদ্রের উদ্দেশে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন; যা আমাদের দেশে বিদায় হজের ভাষণ নামে পরিচিত। ভাষণে তিনি এক পর্যায়ে বলেন: হে জনস্রোত! তোমাদের রক্ত এবং ধনসম্পদ পরস্পরের জন্য আজকের দিন, বর্তমান মাস এবং বর্তমান শহরের মতোই নিষিদ্ধ…। এ ভাষণে তিনি সাদাকালো, আরব-আজমের বিভেদ মিটিয়ে দেন। নারী ও অধস্তন কর্মচারীদের অধিকার ঘোষণা করেন। আজ আমাদের সমাজে মানুষের অধিকার ভূলণ্ঠিত। নারীরা নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত হচ্ছে অহর্নিশ। খুনখারাবি যেন জাহিলিয়াতের পরিস্থিতিকেও হার মানিয়েছে। আজ এমনই দিনে, এমনই পরিবেশে প্রিয় হুজুরের (স.) ঐতিহাসিক ভাষণ শিক্ষা, তালিম, তরবিয়ত বেশি বেশি প্রচার করা দরকার ইলেক্ট্রনিকসহ প্রিন্ট মিডিয়া এবং সকল মসজিদের জুম্মার খুতবায়।