হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
চুনারুঘাটে কৃষি ভর্তুকির টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ উস্তার ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলামসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন রানীগাঁও ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাইয়ুম। মামলা দায়েরের পর জেলা ও দায়রা জজ আতাবুল্লাহ্ মামলাটি তদন্তের জন্য হবিগঞ্জের দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালককে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে বুধবার সকাল ১০টায় রানীগাঁও ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বড়জুষ বাজারে দুদকের সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল কর্মকর্তা তদন্তের জন্য উপস্থিত হন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এলাকার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, মামলায় অভিযুক্ত চুনারুঘাটের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম, মেম্বার আব্দুর রউফ উস্তার, বাদী মোঃ আব্দুল কাইয়ূম, মামলার সাক্ষীসহ ওই এলাকার শতাধিক কৃষক। তদন্তকালে বড়জুষ বাজারে উভয়পক্ষের শতাধিক মানুষ জড়ো হয়েছিল। অনেক বাকবিতন্ডার মধ্যে দিয়ে মামলাটির তদন্ত কাজ অনুষ্ঠিত হয়। তদন্ত শেষে আগামী ২৯ আগষ্ট সকাল ১০টায় বাদীপক্ষকে হবিগঞ্জ দুর্নীতি দমন কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য একটি নোটিশ প্রদান করা হয়। মামলা তদন্তের কার্যক্রম জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম জানান, মামলার তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলা সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রউফ উস্তার ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম প্রান্তিক কৃষকদের কৃষি ভর্তুকির টাকা আত্মসাতের বিষয়ে ওই ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের আব্দুল কাইয়ুম নামে এক কৃষক তাদের বিরুদ্ধে গত ৬ জুন হবিগঞ্জ সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে দুর্নীতি দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলায় চুনারুঘাটের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম, ৬নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার আব্দুর রউফ উস্তারসহ চুনারুঘাট বাজারের মা টেলিকমের স্বত্ত্বাধিকারী সেলিম আহমেদকে আসামী করা হয়। অভিযোগে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের খরিপ ১/২০১৬-১৭ মৌসুমে উফশী ও নেরিকা আউশ আবাদ বৃদ্ধির প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় কৃষকদের ভর্তুকির টাকা বিকাশে প্রেরণের পরিপত্র জারি করা হয়। সেই মোতাবেক চুনারুঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মা টেলিকমকে ১৮ লাখ টাকার চেক প্রদান করেন কৃষকদের বিকাশে টাকা প্রেরণের জন্য। কিন্তু মা টেলিকম থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৬০ জন কৃষকের ৩৪ হাজার টাকা ইউপি মেম্বার আব্দুর রউফ উস্তার চুনারুঘাটের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম ও চুনারুঘাটের মা টেলিকমের স্বত্ত্বাধিকারী সেলিম আহমেদের সহযোগিতায় আত্মসাৎ করেন। মামলার বাদী আব্দুল কাইয়ুমের আইনজীবী ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া জানান, সরকার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং দ্রুত সময়ে জনগণকে সেবা দিতে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিভিন্ন কর্মসূচির টাকা পরিশোধ করছে। কিন্তু আসামী উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম ও ইউপি মেম্বার আব্দুর রউফ উস্তার সরকারের এই মহৎ উদ্দেশ্যকে বাধাগ্রস্থ করে দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করেছে। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালককে দায়িত্ব দেন। এ প্রেক্ষিতে গতকাল দুদকের একদল তদন্তকারী কর্মকর্তা এ মামলাটির তদন্ত করেন। ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, প্রজ্ঞাপনের নিময়ানুযায়ী বিকাশের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করার কথা থাকলেও ওই ইউপি সদস্য নিয়ম বহির্ভূতভাবে কৃষকদের টাকা মা টেলিকমের বিকাশ থেকে নিজেই উত্তোলন করেন। পরে তার নিজস্ব গুটিকয়েক কৃষকের মাঝে টাকা বিতরণ করেন। এতে অধিকাংশ কৃষক ওই টাকা থেকে বঞ্চিত হন। কৃষকরা আরও জানান, দুদকের তদন্তে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।