বাবরুল হাসান বাবলু, তাহিরপুর থেকে :
সুনামগঞ্জে বছরের শুরুতেই আগাম বন্যায় হাওরে বোরো ধান ডুবে যাওয়ার শোক কাটতে না কাটতেই এখন বসত-বাড়িতে দুর্যোগ নেমে এসেছে। বন্যার পানি বাড়ার কারণে উপজেলার দ্বীপ সাদৃশ্য গ্রাম গুলোতে বসবাসকারী মানুষ রয়েছেন উদ্ধেগ আর উৎকন্ঠা মধ্যে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে বতসবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় এখন বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যাবার উপক্রম হয়েছে। রৈরী আবহাওয়ায় হাওরপারের বিশাল আকৃতির ডেউ আছড়ে পড়ছে শেষ সম্ভল মাটির ঘরে আর ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙ্গে মিশে যাচ্ছে হাওরের সাথেই। আর জানান দিচ্ছে বসত বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার। এ যেন মরার উপড় খাড়ার ঘাঁ। অনেকেই নিজ বসত বিটা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। বাকিরা নিজেদের বসতবাড়ি রক্ষায় বিশাল আকৃতির ঢেউ আর পানির সাথে করছে যুদ্ধ দিন-রাত হাওর পারের লাখ লাখ মানুষ। এখনো পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পায়নি জেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। জানা যায়, জেলার পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টির পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগড়, দোয়ারা, ছাতক, দিরাই-শাল্লা উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টরের অধিক রোপা আমনের ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। রোপা আমনের ৬শ ৬৫টি হেক্টর বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলার নিন্মা অঞ্চলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হাট-বাজার, বসত-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট পানিতে ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া হাট-বাজারের দোকানের মালামাল অনত্র সরিয়ে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। বন্যায় সড়ক গুলো ব্যাপক হারে ভাঙ্গন ও ডুবে থাকায় উপজেলা ও জেলা সদরের সাথে সড়ক পথের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে যাওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা আসতে না পারার কারণে জেলার ২৮৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ। এছাড়াও জেলার ৭টি উপজেলার পরীক্ষা প্রাথমিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। উপজেলা গুলো হল, সুনামগঞ্জ সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ার বাজার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই ও ধর্মপাশা। আরো জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে দু শতাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। সীমান্তের যাদুকাটা নদী দিয়ে পাহাড়ী ঢলের পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়ায় নদী তীরবর্তী বিন্নাকুলি বাজার আংশিক ও আনোয়ারপুর বাজারের সড়ক ও বাজারের প্রায় ৫০টি দোকান পানির চাপে ভেঙ্গে গেছে। আনোয়ারপুর বাজার সংলগ্ন ব্রীজ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাহিরপুর-আনোয়ারপুর-শক্তিয়ারখলা সড়কের পাকা রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ একবারেই বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও নদীর র্তীরবর্তী বসত বাড়ি গুলো পানির চাপে ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করার জন্য এলাকার লোকজন করছে পানির সাথে যুদ্ধ। কর্মজীবী ও দিন মজুর শ্রমিকগণ রয়েছে একবাইে অসহায় অবস্থায়। তাহিরপুর উপজেলার বীরনগর গ্রামের সাদেক আলী সহ স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি বাড়তে থাকায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে আছে উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। বোরো ধান অকাল বন্যায় বছরের শুরুতেই পানিতে ৯০ ভাগ ক্ষতির শোক কাটতে না কাটতেই এই দুর্যোগ শুরু হয়েছে। সরকারী সহযোগীর এখন খুবেই প্রয়োজন। দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের জাকির হোসেন সহ স্থানীয়রা জানান, এমন দুর্যোগের সময় জনপ্রনিধিরা দূরে রয়েছে। তারা কেউই পানিবন্দী কিংবা আশ্রয়হীন মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায় নি। উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের কাদির মিয়া সহ স্থানীয়রা বলেন, ভোট দেওয়ার সময় মেম্বার, চেয়ারম্যানরা বাড়িতে এসে ধরে। আর আমরা বিপদে পড়লে তারা সাহায্য তো দূরের কথা একবার আইসা দেখারই সুযোগ পায় নি। বন্যার কারণে আমরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছি। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম আখঞ্জি জানান-গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাড়ি থেকে বেড় হতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারী সহায়তা দেওয়া এখন খুবেই প্রয়োজন।