স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর সোবহানীঘাটে প্রকাশ্য দিবালোকে ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনা ঘটেছে। হামলার ঘটনার জন্য ছাত্রশিবিরকে দায়ী করছে ছাত্রলীগ। গতকাল সোমবার দুপুর ১টার দিকে সোবহানীঘাটস্থ জালালাবাদ কলেজের সামনের রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আহত দুইজনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌছুল হোসেন সোবহানিঘাটে দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে আহত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এ ঘটনায় এখনও কেউ আটক বা মামলা হয়নি।
আহতরা হলেন- মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী সিলেট সদর উপজেলার পীরপুর টুকেরবাজারের নূরুল আমিনের ছেলে শাহীন আহমদ (২২) ও জালালাবাদ কলেজের ছাত্র, ছাত্রলীগকর্মী আবুল কালাম আসিফ (১৮)। আসিফ নগরীর উপশহরের জালাল উদ্দিনের ছেলে। গুরুতর আহত শাহিন আহমদকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার দুপুর ১টার দিকে ৫-৬টি মোটর সাইকেলে হেলমেট পরিহিত কয়েকজন যুবক এসে ছাত্রলীগের ওই দুই কর্মীর উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। তারা কুপিয়ে শাহীনের ডান হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এছাড়া বাম হাতের একাধিক স্থান ও দুই পায়ের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। অপরদিকে ছাত্রলীগ কর্মী আসিফের ডান পায়ের গোড়ালিসহ হাত ও পায়ের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ২২নং ওয়ার্ড কৃষকলীগের সভাপতি সোহেল তালুকদার।
আহত ছাত্রলীগ কর্মীরা সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাহাত তরফদার গ্র“পের কর্মী বলে জানা গেছে।
মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষার বলেন, আহত দু’জন ছাত্রলীগের কর্মী। তাদের অবস্থা খুবই গুরুতর। এদের মধ্যে শাহীনকে দুপুর আড়্ইাটার দিকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, হামলাকারী শিবির সন্ত্রাসী বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুসা জানিয়েছেন, সোবহানীঘাটে ছাত্রলীগের দুইকর্মীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে বলে তাকে কোতোয়ালী থানার ওসি গৌছুল হোসেন অবগত করেছেন। হামলাকারীদের পরিচয় শনাক্ত করা না গেলেও আহতরা ছাত্রলীগ কর্মী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা। জেদান জানান, হামলাকারীদের মধ্যে ফাত্তাহ নামের একজন ছিল। সে শিবির কর্মী বলে ছাত্রলীগ দাবি করেছে। আহতদের মধ্যে শাহীনের অবস্থা গুরুতর বলে জানান জেদান।
এদিকে ছাত্রলীগের দুই কর্মীর উপর শিবির ক্যাডারদের হামলার ঘটনায় তাৎক্ষণিক মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল সোমবার বিকেল ৪টার দিকে নগরীর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় এ বিক্ষোভ মিছিল ও পরবর্তী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি হাসপাতাল এলাকার জরুরী বিভাগের সামনে থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ শেষে হাসপাতালের সম্মুখে গিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল বাছিত রুম্মানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষারের পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন- মহানগর যুবলীগ নেতা সালেহ আহমদ লিমন, জেলা যুবলীগ নেতা দুলাল আহমদ, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি জিয়াউল হক জিয়া, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক মঞ্জুর মোরশেদ অসীম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ইমদাদুল হক জায়েদ, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা এহিয়া আহমদ সুমন, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক জুবায়ের আহমদ, সাবেক সদস্য কিশোআর জাহান সৌরভ, আলী হোসেন আলম, ল’কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আহমদ, ২৩ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ আহমদ, ৫ নং ওয়ার্ড সভাপতি আহসান হাবীব শিপন, ১৪নং ওয়ার্ড সভাপতি রাবিব মুক্তাদির, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা মনোয়ার হোসেন মঞ্জু, আরিফুল শিহাব, আকাশ দেব প্রমুখ। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, শিবির ক্যাডাররা দিনে দুপুরে ছাত্রলীগের নিরীহ নেতকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এমন বর্বোরিচত ঘটনা নৃশংসতার প্রমাণ দেয়। এ সময় বক্তারা অবিলম্বে হামলার ঘটনায় জড়িত শিবির ক্যাডারদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানান। তা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
হামলার দায় অস্বীকার করলো শিবির : ছাত্রলীগের দুই কর্মীর উপর হামলার ঘটনা অস্বীকার করেছে ছাত্রশিবির। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবী করে তারা। বিকেলে মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, সেক্রেটারী নজরুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দায় অস্বীকার করেন। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়- বিগত কয়েকদিন ধরে ওই এলাকার কতিপয় কলেজ ছাত্রদের মধ্যে সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এই দ্বন্দ্বের জের ধরেই কয়েকদিন আগেও দুই গ্র“পের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে ছাত্রলীগ কর্মী নাবিল আহমদসহ কয়েকজন আহতের ঘটনা ঘটে। মূলত পূর্বের হামলার বদলা নিতেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সাথে শিবিরের কোন নেতাকর্মীর সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন তারা।