কীর্তিমান পুরুষ বিমলেন্দু দাস সাধু বাবু

13

(পূর্বে প্রকাশের পর)
বন্দরবাজার জামে মসজিদ: বন্দরবাজার জামে মসজিদের জায়গার জন্য সাধু বাবুর কাছে আসেন হাজী মোবারক বখত, হাজী জহুর বখত, গোলাম হোসেন (মাক্কু মিয়া), মডার্ণ রেস্টুরেন্টের মালিক হামিদ মিয়া, ইদ্্িরছ কোম্পানির মালিক ইদ্রিস মিয়া, সুরুজ মিয়াসহ নাম না জানা অনেকেই। সাধু বাবু তখন লালকুঠির (দানকুঠি) মালিক কুসুম কুমারী দাস, নির্মল চৌধুরী এবং সাধু বাবু নিজেরাই এই জামে মসজিদের জায়গা বাড়ানোর জন্য জায়গা দেন।
মির্জাজাঙ্গাল প্রাইমারী স্কুল: সাধু বাবু এই স্কুলের সেক্রেটারী ছিলেন তখন এ.ডি.সি ছিলেন সভাপতি। তারপর কিছুদিন পর এ.ডি.সি সভাপতির পদ ছাড়ার পর সাধু বাবু এই স্কুলের সভাপতি হন। এ.ডি.সি আব্দুল মুমিনের সহযোগিতায় সাধু বাবু প্রাথমিক থেকে জুনিয়র স্কুল করেন। প্রথমে তিনি এই স্কুলের চারিদিকের দেয়াল নির্মাণ করেন। এরপর রুম এবং ব্যথরুমের কাজ করান। তখন এ স্কুলের হেড মাস্টার ছিলেন আব্দুল শহীদ। এই স্কুলের দালান যখন সরকার নির্মাণ করে তখনও সাধু বাবু এই স্কুলের সহ-সভাপতি ছিলেন।
মইনুন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়: পৌরসভা থেকে সাধু বাবুকে এই স্কুলের সদস্য নিযুক্ত করা হয়। স্কুলের অবস্থা দেখে সাধু বাবু পৌরসভা থেকে মাসিক অনুদানের ব্যবস্থা করেন দেন। তারপর দীর্ঘদিন সাধু বাবু স্কুলের সদস্য ছিলেন। সদস্য থাকাকালে স্কুলের জায়গার অভাব থাকায় স্কুল কমিটি সভা করে এই স্কুলের জায়গা বিক্রি করে অন্য কোনো বড় জায়গা নিয়ে স্কুল করার প্রস্তাব করেন। তখন খবর পান ডা: সাজিদ আলীর বাসার পিছনে একটি বড় বাসা বিক্রি হবে। এই বাসার মালিক ফজলুর নুর ও সামছুর নুর (এইচ.ডি. হাইস্কুলের শিক্ষক)। সাধু বাবু, ওহাজা বারি মিয়া, হাজী মাসুদ আলী (লবির ইমনে আজিজ), রাজা, হাজী রশীদ মিয়াসহ সকলে মিলে ফজলুর নুর এর বাসায় যান এবং তাকে তারা বলেন, তিনি কি বাড়ি বিক্রি করবেন? তখন তিনি এই বাড়ি বিক্রি করবেন বলে তাদেরকে জানান। পরে এই বাড়ি ৭০ হাজার টাকা দিয়ে স্কুলের জন্য কিনা হলো। স্কুলের জায়গা ছিলো ৪৯ শতক। তখন তারা স্কুল বিক্রি করেন ৯০ হাজার টাকা দিয়ে। এর আগে তারা স্কুল বিক্রির জন্য নিলাম ডেকেছিলেন। নিলামে দাম উঠে ৫০ হাজার টাকা। তারপর আবার নিলাম ডাকা হলে তখন সাধু বাবু যারা নিলামে অংশ নিয়েছিলেন তাদের বলেন আপনারা এক হয়ে গেছেন, দু’দল তাই আপোষে সমঝোতা করে ঠিক দাম বলেন। তখন তার এই স্কুলের জায়গার দাম ৯০ হাজার টাকা বলেন। তারপর তারা বিক্রি করেন। পরে স্কুলের আশেপাশের লোকদের আমন্ত্রণ করেন এবং তাদের বলেন আপনারা স্কুল করার লক্ষ্যে চাঁদা দেওয়ার জন্য। তারপর স্কুল তৈরীর জন্য চাঁদা উঠলো ১ লক্ষ টাকা। বাসা থাকার কারণে তারা প্রথমেই বাসা দিয়েই স্কুল আরম্ভ করলেন। পুরানো স্কুল বিক্রির টাকা দিয়ে তারা নতুন স্কুল তৈরীর কাজ শুরু করেন। স্কুল তৈরীর যে জায়গাটি কিনেছিলেন সেই জায়গার পিছনে এডভোকেট আব্দুল মালিকের খালি জায়গা ছিল। তারা কথা বলেন স্কুলের জন্য এই জায়গাটি দেওয়ার জন্য। পরে এডভোকেট আব্দুল মালিক মারা গেলে তারা স্ত্রীর কাছ থেকে এই খালি জায়গাটি কেনা হয়। আগের পুরানো স্কুল ভেঙ্গে জিতু মিয়ার পয়েন্টের সামনে নতুন স্কুল বানানো হয়। একদিন সাধু বাবু শিক্ষা সচিব হেদায়েত হোসেন চৌধুরীকে নিয়ে এসে স্কুল পরিদর্শন করান। তখন তাকে সাধু বাবু স্কুলের উন্নয়নের কর্মকান্ড তুলে ধরলে শিক্ষা সচিব এই স্কুলের জন্য ১ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করেন। তখন এই স্কুলের হেড মিসেস ছিলে উষারাণী পাল। এছাড়াও যখন কোন গণ্যমান্য ব্যক্তি স্কুল পরিদর্শনে আসতেন তখন সাধু বাবুকে আমন্ত্রণ করা হতো। মার্কেটের জন্য স্কুলের যে জায়গা ছাড়া হয় তার ক্ষতিপুরণ স্বরূপ সাধু বাবু লালদিঘীরপারে মাত্র ৬ হাজার টাকায় বেশ কিছু জায়গা দেন এই স্কুলের ইনকামের জন্য।
রাজা জি.সি হাই স্কুল: এই স্কুলের কমিটিতে সাধু বাবু দীর্ঘদিন ছিলেন। তখন স্কুলের সামনে দোকান ছিলো। ডি.সি ওয়াসিম স্কুলের সামনের দোকান দেখে ভাঙ্গার নির্দেশ দেন। তখন সাধু বাবু ডি.সিকে বলেন দোকানগুলো ভেঙ্গে ফেলা হলে দোকানের লোকজন বেকার হয়ে যাবে। তখন ডিসি বললেন, ‘আমার অফিসের সামনের দোকান, পৌরসভার সামনের দোকান, পোস্ট অফিসের সামনের দোকান যখন ভাঙ্গা হবে তখন এই লোক কি করবে? পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তোতা উল্ল্যাহ খান কিছুদিনের জন্য তখন ওয়েস্ট পাকিস্তান যান। তখন ডি.সি আব্দুল ওয়াহিদ খান পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। সাধু বাবুকে এ.ডি.সি এবং পৌরসভার মেম্বারগণের মতামত নিয়ে পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বানানো হয়। এ সময় পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান পৌরসভা পরিদর্শন করে কয়েক লক্ষ টাকা অনুদান দেন। এই টাকা দিয়ে সাধু বাবু শাহী ঈদগাহ রাস্তা, এইডেড স্কুলের রাস্তা, রায়নগরের বাবু লেইন, শেখঘাট, কুয়ারপুর, বিলপার এবং ভাতালিয়া রাস্তা রিটেইনিং ওয়ালসহ রাস্তার কাজ করান। তখন সিলেটের আওয়াজ পত্রিকার এডিটর মান্নান এত অল্প সময়ে বিমলেন্দ্র দাস (সাধু বাবু) এতগুলো রাস্তার কাজ হয়েছে বলে পত্রিকায় একটি লেখা প্রকাশ করেন। এরপর সাধু বাবু মানসালিশি বোর্ডের চেয়ারম্যান হন। প্রায় ৯ বছর তিনি মানসালিশি বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তখন প্রায় হাজার হাজার মামলা (কেউস) নিষ্পত্তি হয়েছে। (চলমান)