কমলগঞ্জে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে চা শ্রমিকরা

33

কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার চা শ্রমিকরা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। চা শ্রমিকের ঘাম জড়ানো চায়ের Pic--Kamalgonj Teaবাগানে কলোনী সমুহে গাদাগাদিভাবে বসবাস করেন শ্রমিক পরিবার সদস্যরা। শ্রমিকরা অপুষ্টিকর খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করছেন। ভালো মানের পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় তাদের একটি বড় অংশ এখনও খোলা ও উন্মুক্ত স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করেন। রয়েছে পানীয় জলের সমস্যা। পরিচ্ছন্ন পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব, মাদকাসক্ত, অপুষ্টি, নালা ও খালের পানির ব্যবহারে ডায়রিয়াসহ অপুষ্টির শিকার হচ্ছেন শিশুরা। নাজুক এই পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন শ্রমিকরা। কমলগঞ্জ উপজেলার চা বাগান এলাকা ঘুরে শ্রমিকদের অভিযোগে এসব চিত্র পাওয়া গেছে।
জানা যায়, অধিকাংশ চা শ্রমিক পরিবারে একজনের দৈনিক ৮৫ টাকা মজুরির উপর নির্ভরশীল ৫ থেকে ৮ সদস্যের পরিবার। ফলে খাবারে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টির অভাব। অপরদিকে মানসম্মত পয়:নিষ্কাশনের অভাবে কলাপাতা, পলিথিন দিয়ে বেড়া দিয়ে আর উন্মুক্ত স্থানে মলমূত্র ত্যাগের কারনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই বেড়ে উঠছে চা শ্রমিক সন্তানরা। পুষ্টিকর খাবার, শিক্ষা, চিকিৎসার অভাব, বাসস্থান ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের অপর্যাপ্ততার কারনে চা শ্রমিকরা জীবনমান উন্নত করতে পারছে না। আর্থিক অস্বচ্ছলতা, ভূমির সমস্যা, লোকবল বৃদ্ধি ও কিছুটা অভ্যাসগত কারনে চা বাগানের শ্রমিক কলোনী ও পরিবার সমুহের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা নাজুক। বাগান কর্তৃপক্ষ, ইউনিয়ন পরিষদ ও এনজিও সমূহের মাধ্যমে কিছু ল্যাট্রিন বিতরণ করা হলেও বিশাল শ্রমিক পরিবারের মধ্যে সেগুলো পর্যাপ্ত নয়। বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার গোলটেবিল বৈঠক সূত্রে জানা যায়, চা শ্রমিকদের পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা এখনও বড় সমস্যা। তাদের জীবনমান উন্নয়ন হওয়া জরুরি। বাগানে চিকিৎসা ব্যবস্থাও নাজুক। অধিকাংশ রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসা হয় প্যারাসিটামলের মাধ্যমে। বাগানে বেশিরভাগ মানুষ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করে। নালা কিংবা চা বাগানের মধ্যে মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাস তাদের সামগ্রিক পরিবেশকে অস্বাস্থ্যকর করে তোলে। তবে সব বাগানে একই অবস্থা নয় বলে তারা দাবি করেন। সরকার, মালিক ও শ্রমিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চা শ্রমিকদের জীবনমানে পরিবর্তন আসবে। খাদ্য নিরাপত্তা, অশিক্ষা-অসচেতনতা-কুসংস্কার ও দারিদ্র্য এই তিনটি সমস্যা প্রকট। পরিচ্ছন্ন পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার অভাব, মাদকাসক্ত, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার না খাওয়ানো, নালা ও খালের পানির ব্যবহার ইত্যাদি কারনে পানিবাহিত, ডায়রিয়াসহ অপুষ্টির শিকার হয় শিশুরা। চা শ্রমিকদের ৮০ শতাংশ নিরক্ষর, ৫০ শতাংশ উন্মুক্ত স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করে আর ৩৫ শতাংশের স্যানিটেশন সুবিধা আছে বলে বিভিন্ন গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনাকালে তোলে ধরা হয়।
চা বাগানের শ্রমিকরা বলেন, আমরা বাগানের বেশিরভাগ মানুষ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করছি। অবহেলিত থাকায় এখনও আমাদের নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের পুরোপুরি সুবিধা পাওয়া সম্ভব হয়নি। কুরমা চা বাগানের শ্রমিক গীতা রানী বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজ করলেও আমাদের কর্মস্থলে ল্যাট্রিন ও বাথরুম নেই। চা বাগানে কাজ চলাকালীন সময়েও আমাদের টিলা কিংবা চা গাছের আড়ালে উন্মুক্ত স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করতে হয়। মৌলভীবাজার চা শ্রমিক সংঘের নেতা শ্যামল অলমিক বলেন, এখনও চা বাগানের ৫০ শতাংশ শ্রমিকের স্বাস্থ্যসম্মত পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। এরা খোলা জায়গায় আনাচে-কানাচে মলমূত্র ত্যাগ করে। শ্রম আইন, সংবিধান, ইউনিয়ন পরিষদসহ সকল আইনে পয়:নিষ্কাশন নিশ্চিত করার কথা থাকলেও বাস্তবে চা বাগানে রয়েছে ভিন্ন চিত্র।
ডানকান ব্রাদার্স শমসেরনগর এর ফাঁড়ি দেওছড়া বাগানের শ্রমিক দেওরাজ রবিদাস, ফুলন্তি রবিদাস, আলীনগরের ছোটুয়া বৈদ্য, চাতলাপুর চা বাগানের স্বপন মৃধা, মিরা রিকিয়াশন, ন্যাশনাল টি কোম্পানির কুরমা চা বাগানের ষোলরাম কর্ম্মকার, গীতা রবিদাস, দীনেশ র‌্যালী বলেন, ‘মাত্র ৮৫ টাকা মজুরিতে পরিবার সদস্যদের তিন বেলা খাবার চালানোই সম্ভব হয় না। টাকার অভাব ও জায়গা সংকুলানের কারনে ল্যাট্রিন বানাবো কিভাবে? তাই বাধ্য হয়েই খোলা স্থানে মলমূত্র সারতে হয়। শত শত পরিবারের মধ্যে বাগান মালিক প্রতিবছর মাত্র পাঁচ থেকে দশটি পরিবারে ল্যাট্রিন দিচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চা বাগান ম্যানেজমেন্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবস্থাপক বলেন, শ্রমিকদের ল্যাট্রিন দেয়া হলেও তারা উন্মুক্ত স্থানেই মলমূত্র ত্যাগ করে।