মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবিতে “ডব ঋড়ৎ ইধহমষধফবংয’ আয়োজনে মৌলভীবাজার মানববন্ধন কর্মসূচী পালণ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সম্মুখে শাহ ফাহিমের সভাপতিত্বে প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ‘উই ফর বাংলাদেশ’ এর সদস্যবৃন্দ, তরুণ-তরুণী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, চিকিৎসক, আইনজীবী, সমাজকর্মীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
২ হাজার ৭৯৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ২৫ লাখ মানুষের বসবাসরত মৌলভীবাজার জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে মৌলভীবাজারবাসী।
৯২টি বাগান, উঁচু-নিচু পাহাড়-টিলা, নদী-নালা, খাল-বিল আর হাওর বেষ্টিত মৌলভীবাজার জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী মৌলভীবাজারে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যায় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের।
৪২৭টি জলমহাল, ১টি নদীবন্দর, ১৮টি রেলওয়ে স্টেশন, ১টি অর্থনৈতিক অঞ্চল (নির্মাণাধীন),
জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে জনপ্রতিনিধিরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যায় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের আশ্বাস দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসছেন। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তীকালে আর তেমন কোন উল্লেখ্যযোগ্য অবদান রাখছেন না।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও মৌলভীবাজার এসে মৌলভীবাজারবাসীর দাবী পূরণের লক্ষ্যে কাজ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে আর তাদের সেই প্রতিশ্র“তি রক্ষা করেননি।
১৯৮৪ সালে মৌলভীবাজার জেলা প্রতিষ্ঠিত হলেও ইতিমধ্যে এই জেলা বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা থেকে বেশ সমৃদ্ধশালী। আবাসনখাত, যোগাযোগ ক্ষেত্র ও পর্যটন শিল্পে অবিশ্বাস্য সাফল্য অর্জন করলেও শিক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। চায়ের রাজধানী হিসেবে খ্যাত এ জেলা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে থাকলেও নেই কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ। এই জেলার সার্বিক উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দের চাইতে বেসরকারি উদ্যোগ ও প্রবাসী অর্থের অবদান বেশি।
মৌলভীবাজার জেলায় শহরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা : মৌলভীবাজার জেলায় প্রতি বছর প্রায় দশ হাজারের উপরে শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ আসন না থাকার কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগনদের ভর্তি নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। অপরদিকে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অসুবিধা ও অস্থিতিশীলতার কারণে জেলার বাহিরে অন্যত্র ছেলেমেয়েদের পাঠাতে অভিভাবকগন রাজী হননা, বিকল্প হিসেবে বেছে নেন পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে। মেধাবী শিক্ষার্থী অন্য দেশে চলে যাওয়ার কারণে মৌলভীবাজার শহর ধীরে ধীরে মেধাশূন্য হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় মৌলভীবাজার শহরে অন্তত একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
মৌলভীবাজার শহরে মেডিকেল কলেজের প্রয়োজনীয়তা : বাংলাদেশের অনেকগুলো জেলায় মেডিকেল কলেজ থাকলেও ২৫ লক্ষ মানুষের মৌলভীবাজার জেলায় নেই কোনো মেডিকেল কলেজ। সামান্য উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীদের সিলেট যেতে হয়। এতে জেলার রোগীরা অনেক ভোগান্তিতে পড়েন। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও চিকিৎসার সরঞ্জামাদি না থাকায় বাধ্য হয়ে রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে হয়। এসব ক্ষেত্রে রোগীদের সিলেট মেডিকেল কলেজ অথবা ঢাকাতে নিয়ে যাওয়া ছাড়া রোগীর আত্মীয় স্বজনদের আর কিছুই করার থাকে না। ফলে অনেক রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই অনেক রোগী মৃত্যুবরণ করেন অথবা রোগীর অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। মৌলভীবাজার জেলায় বিভিন্ন উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মৌলভীবাজার সদরে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকলেও তাতে নামমাত্র চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়।
বর্তমান সরকার দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ অনেক কিন্তু মৌলভীবাজার জেলায় এই উন্নয়নের ছোঁয়া পৌছেনা। তাই এ জেলার ২৪ টি কলেজের ছাত্র-ছত্রীদের জন্য একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ৭ টি উপজেলা ও ৫ পৌরসভার ২৫ লক্ষ মানুষের জন্য একটি মেডিকেল কলেজ অপরিহার্য। অতিসত্ত্বর একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা মৌলভীবাজার জেলার সর্বস্তরের জনগণের প্রাণের দাবী।