কুলাউড়ায় ভিজিএফের চাল আত্মসাতের ঘটনায় ইউপি সদস্য সহ ৩ জন জেলহাজতে ॥ চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামী করে পিআইও’র মামলা

54

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে সরকারি ভিজিএফের চাল আত্মসাতের অভিযোগে এক ইউপি সদস্যসহ তিনজনকে আটক করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনায় কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তার বুবলিকে প্রধান আসামি করে মোট চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার (পিআইও) শিমুল আলী।
চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তার বুবলিকে প্রধান আসামি করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন ঘটনার মূলহোতা চেয়ারম্যানের স্বামী ও তার (চেয়ারম্যান বুবলির স্বামী) সকল কর্মকাণ্ডের পরিচালক সাবেক চেয়ারম্যান  মো. শাহজাহান।
সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের রাঙ্গিছড়া চা বাগানের বাজারে সন্ন্যাসী নাইডুর ও গ্রাম পুলিশ মিলনের দোকানে বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য অধিদপ্তরের সীলমোহরকৃত বস্তায় খোলা বাজারে চাল বিক্রয় করা হচ্ছে।
এমন খবর কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মোহাম্মদ গোলাম রাব্বী কুলাউড়া থানা পুলিশকে বাজারে অভিযানের নির্দেশ দেন। কুলাউড়া থানার এসআই মাসুদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঈদের আগের দিন রাতে রাঙ্গিছড়া বাজারে অভিযান চালিয়ে ৭ বস্তা চাল ও গ্রাম পুলিশ মিলনের দোকান থেকে ৩ বস্তাসহ মোট ১০ বস্তা সরকারি চাল এবং  ১৩টি খালি বস্তা উদ্ধার করে। এসময়  ইউপি সদস্য জমির আলী ও দোকান মালিক নাইডুকে আটক করে থানায়  নিয়ে আসেও ঈদের দিন ভোরে তিনজনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এদিকে ঘটনার চারদিন পর (২৯ জুন) চাল বিক্রয়ের অভিযোগে চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে ৪ জনর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার শিমুল আলী। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার তালিকাভুক্ত আসামি ৬নং ওয়ার্ডে মেম্বার জমির আলী, ইউনিয়নের চৌকিদার ও দোকান মালিক মিলন ও অপর দোকান মালিক সন্ন্যাসী নাইড়ুকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে এসব অপর্কমের অন্যতম হোতা চেয়ারম্যানের স্বামী ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানকে মামলায় আসামি না করায় এবং মামলার ১নং আসামি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তার বুবলি এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও তাকে গ্রেফতার না করায় জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব লুৎফুর রহমান চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি চাল আত্মসাতের ঘটনার মূল হোতা বর্তমান ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের স্বামী মো: শাহাজানকে মামলার আসামি করা হয়নি।
ইউনিয়নবাসী পক্ষ থেকে আমরা অভিযোগ দেওয়ার পরও চেয়ারম্যানের স্বামী মো: শাহাজানকে মামলার আসামি না করায় জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কারণ নার্গিস আক্তার বুবলী চেয়ারম্যান হলেও সকল বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন তার স্বামী মো: শাহাজান। এমনকি চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসে সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা  করেন। তার বিরুদ্ধে সরকারের প্রদত্ত অনান্য বরাদ্দের সিংহভাগ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।
এমন অনিয়মের বিষয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তার বুবলীর স্বামী (সাবেক চেয়ারম্যান) শাহাজানের কাছে জানতে তার উপর আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব একটি বডি আছে। কোনো অনিয়ম হলে দায় তাদের আমার না।
চেয়ারম্যান না হয়েও চেয়ারে কেন বসেন এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি জানান, চেয়াম্যানের চেয়ারে অন্য কেউ বসতে পারে না। বর্তমান চেয়ারম্যান আমার স্ত্রী, আমি সাবেক চেয়ারম্যান। উনার সাথে আমার সম্পর্ক শুধুই স্বামী-স্ত্রী। যে দিন আমি ক্ষমতা হস্তান্তর করেছি, সে দিন থেকে আমার দায় শেষ। চেয়ারে বসার প্রশ্নই আসে না।
বর্তমান চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলার ইচ্ছা পোষণ করলে সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, তিনি ফোন ব্যবহার থেকে বিচ্ছিন্ন আছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মাসুদ জানান, মামলায় তিন আসামিকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। প্রধান আসামি গ্রেফতারের বিলম্ব জানতে চাইলে এ তদন্ত কর্মকর্তা বলেন প্রধান আসামি চেয়ারম্যানকে আটক করতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনর্চাজ সামছুদ্দোহা পিপিএম বলেন, আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলাহাজতে পাঠানো হয়েছে।  প্রধান আসামি পলাতক রয়েছে।