ছাতক থেকে সংবাদদাতা :
ছাতকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ভিজিএফ ও ভিজিডিসহ অন্যান্য সরকারি ত্রাণ সামগ্রী না পেয়ে একটি ইউনিয়নের হতদরিদ্র লোকজনের ঈদের আনন্দ নিরানন্দে পরিণত হয়েছে। এদের মধ্যে ঈদের দিনেও চুলোয় হাড়ি বসেনি সহ¯্রাধিক গরিব পরিবারের। সরকার নগদ টাকা দেয়ার পরও হাতে ছিল না তাদের সওদা ক্রয়ের টাকা। এভাবে সরকার একের পর এক বরাদ্দ দিয়ে ফসলহারা দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ালেও এবারের ঈদে গোটা ইউনিয়নে রহস্যজনক কারণে গরীবদের বরাদ্দ হাতে পৌছায়নি। জানা গেছে, উপজেলার দুর্গম এলাকা খ্যাত ভাতগাঁও ইউপির দরিদ্রদের মধ্যে ঈদের আগেই বিতরণের জন্যে ৩০ কেজি চাল ও নগদ ৫শ’ টাকা করে ৮শ’ ২০টি ভিজিএফ কার্ড বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু এগুলো এখনো বিতরণ না করায় হতদরিদ্র পরিবারে ঈদের আনন্দ যেন নিরানন্দে পরিণত হয়। তবে ইউনিয়নে জনপ্রতি ১০ কেজি করে ভিজিডির আড়াই হাজার কার্ডের মধ্যে ৪নং ওয়ার্ডের হায়দর গ্রামের সিংহভাগ দরিদ্র পায়নি। ফলে বৃহস্পতিবার বিকেলে হাজি মরম আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ত্রান বঞ্চিত মানুষের প্রতিবাদ সভায় এসব অভিযোগ করা হয়। ৪ গোষ্ঠির সমন্বয়ে গঠিত হায়দরপুর গ্রামের ৩ গোষ্ঠির লোকজন আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস মিয়া, সাবেক সদস্য চন্দন মিয়া, আবদুল কুদ্দুছ, মধু মিয়া, মতিউর রহমান,জিতু মিয়া, আবুল খয়ের, হুশিয়ার উদ্দিন, খালিক উদ্দিন, সুনা মিয়া, আবুল কালাম, হাজি আব্দুর রজাক, সিজিল মিয়া, আবদুল করিম, প্রবসী সিরিল আহমদ, নূর উদ্দিন, জনি মিয়া, সাবু মিয়া, আনা মিয়া, হাফিজুল হক, আবদুল হক, হাজি আবদুল আহাদ প্রমুখ। বক্তারা ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রামের ৩ গোষ্ঠির গরীবদের সমুদয় মালামাল আত্মসাতের অভিযোগ এনে বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার থেকে সরকারি সব ত্রাণ সহায়তা গ্রামবাসীর মধ্যে বিতরণ না করে নিজেই আত্মসাৎ করেন। এ সময় সড়কের ১শ’টি গাছ কেটে বিক্রির করে তিনি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। সভায় মাছও ধানে ভরপুর ফাটার হাওর গ্রামের কৃষকদের আশা-আশাক্সক্ষার প্রতীক উল্লেখ করে বলেন, বৃহৎ জনস্বার্থ উপেক্ষা করে গ্রামের জনৈক মানিক মিয়া নামের একজন পেশাদার দুর্নীতিবাজ কৌশলগতভাবে গ্রামবাসীর নিয়ন্ত্রণ থেকে হাওরটি ছিনিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এদের অপতৎপরতা রুখতে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বক্তারা। এ ব্যাপারে ৩ গোষ্ঠির লোকজন আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, গোপালপুর, শ্রীপতিপুর ও হায়দরপুর নিয়ে গঠিত ওয়ার্ডে জনপ্রতি ১০ কেজির ২শ’ ৭৫টি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। তবে গ্রামে ৪ গোষ্ঠির মধ্যে ৩ গোষ্ঠির লোকজনকে বঞ্চিত কার প্রশ্নই আসে না। যা নিয়েছেন প্রত্যেকে ট্যাগ অফিসারের সামনেই টিপ সহি দিয়ে মালামাল গ্রহণ করেছেন। এছাড়া সড়কের গাছ কাটার ৩০ হাজার টাকা তিনি এখনো জমা দেননি বলেও জানান। ইউপি চেয়ারম্যান আওলাদ হোসেন বলেন, যানবাহন এমনকি নৌকা যোগে ভাতগাঁও ইউপি কমপ্লেক্সে মালামাল নেয়ার ব্যবস্থা না থাকায় অনেক দূরবর্তী জাউয়া ইউনিয়নে যুগ যুগ থেকে মালামাল বিতরণ করা হচ্ছে। এবারেও এলাকাবাসীর বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঈদের আগে নগদ টাকাও ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ স্থগিত করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাসিরুল্লাহ খান বলেন, নোটিশের মাধ্যমে উপজেলার ১৩ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে ঈদের আগেই মালামাল বিতরণের তাগিদ করা হয়েছে। বিতরণ না করলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে জানান তিনি।