কানাইঘাটে পরকীয়া সম্পর্কের জেরে যুবক খুনের ঘটনা ॥ প্রেমিকা সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

51

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউপির দক্ষিণ লক্ষ্মীপ্রসাদ গ্রামে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের জেরে গত শুক্রবার প্রকাশ্যে দিবালোকে হাবিবুর রহমানকে নির্মম হত্যাকান্ডেরর ঘটনায় কানাইঘাট থানায় ৬ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের বড় ভাই আজিজুর রহমান গ্রেফতারকৃত এ সাবেক ইউপি সদস্য শরিফ উদ্দিন, প্রেমিকা সুরমা বেগম সহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতনামা ৩/৪জনকে আসামী করে গতকাল শনিবার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানার মামলা নং- ১২, তাং- ২৪/০৬/২০১৭ইং। পরকীয়া সম্পর্কের জেরে হবিবুর রহমানকে তার পরকীয়া প্রেমিকা দুই সন্তানের জননী সুরমা বেগমের পিতা একই গ্রামের মুহিবুর রহমান @ মড়া মিয়া ও তার পুত্র আম্বিয়া, ভাতিজা ইকবাল সহ কয়েকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ী কুপিয়ে গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রকাশ্যে হত্যাকান্ডের ঘটনায় এলাকা জুড়ে জনমনে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ ধরনের পৈশাচিক হত্যাকান্ড দক্ষিণ লক্ষ্মীপ্রসাদ এলাকায় কখনও ঘটেনি বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। এদিকে কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল আহাদ সরেজমিনে গতকাল শনিবার বিকেল ৩টায় হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে যান। এ সময় গ্রামের অসংখ্য মানুষের উপস্থিতিতে ওসি আব্দুল আহাদ কিভাবে হবিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে এ নিয়ে অনেকের সাথে কথা বলেন। হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী কিশোর সহ কয়েকজনের মৌখিক সাক্ষী তিনি গ্রহণ করেন। ওসি আব্দুল আহাদ দক্ষিণ লক্ষ্মীপ্রসাদ গ্রাম সহ আশপাশ এলাকার লোকজনদের উপস্থিতিতে সবাইকে আশ^স্থ করেন বলেন যারা হবিবুর রহমানকে হত্যা করেছে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্ত পূর্বক প্রত্যেক আসামীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। কারা এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। তাদের গ্রেফতার করা হবে। তিনি বলেন, প্রকাশ্যে এ ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে আপনারা তাৎক্ষণিক হবিবুর রহমানকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। এ নিয়ে এলাকায় যাতে করে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এ জন্য সবাইকে তিনি শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশকে সহযোগিতা করুন, তাদের তথ্য আমাদের দিন। তিনি নিহতের পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দিয়ে বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সবধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন, নিহত হবিবুর রহমানের বাড়ী দক্ষিণ লক্ষ্মীপ্রসাদ গ্রামে হলেও সে কয়েক বছর ধরে তার মামার বাড়ী দনা গ্রামে বসবাস করে আসছিল এবং এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামী দক্ষিণ লক্ষ্মীপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা। হবিবুর রহমান দরিদ্র পরিবারের সন্তান, অপরদিকে মুহিবুর রহমান @ মড়া মিয়া প্রভাবশালী। মুহিবুর রহমানের মেয়ে সুরমা বেগমের সাথে বিয়ের পূর্ব থেকে হবিবুর রহমানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জোরপূর্বক ভাবে কয়েক বছর পূর্বে সুরমা বেগমকে বড়চতুল ইউপির লখাইরগ্রামের এক সৌদি প্রবাসীর সাথে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পরেও সুরমা বেগম দু’টি ছেলে সন্তানের মা হওয়ার পরও হবিবুর রহমানের সাথে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তুলে। একবছর পূর্বে সুরমা বেগম তার দু’টি সন্তানকে পিত্রালয়ে রেখে হবিবুর রহমানের সাথে পালিয়ে যায়। পরে সুরমা বেগমকে হবিবুর রহমানের সাথে বিয়ে দিবেন বলে সুরমা বেগমকে তার আত্মীয় স্বজনরা পিত্রালয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু তারপরও সুরমা বেগম তার প্রেমিক হবিবুর রহমানের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রাখলে এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে সুরমা বেগমের বাবা মুহিবুর রহমান ও পরিবারের সদস্যরা। গত বৃহস্পতিবার হবিবুর রহমান তার নিজ বাড়ী দক্ষিণ লক্ষ্মীপ্রসাদ গ্রামে বেড়াতে আসলে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হবিবুর রহমান ও তার পুত্র আম্বিয়া, ভাতিজা ইকবাল সহ কয়েকজন তাদের বাড়ীর পাশে হবিবুর রহমানকে আটক করে এলোপাতাড়ী ভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রাখে। কেউ ভয়ে হবিবুর রহমানকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। সিলেট সিওমেক হাসাতালে নেওয়ার পথে হবিবুর রহমান পথিমধ্যে মারা যায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এ ঘটনার পর থেকে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামীরা তাদের বাড়ী ঘর ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছে।