পিন্টু দেবনাথ, কমলগঞ্জ থেকে :
“দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ” বৃহত্তর সিলেটের ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্যতম বিশ্বনন্দিত সাংস্কৃতিক ধারক মণিপুরী সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব “রাসলীলা” পূর্ণিমা তিথিতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ১৭৩তম মাধবপুর জোড়াম-প ও ৩০তম আদমপুর সানাঠাকুর ম-পে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রাতভর রাধাকৃষ্ণের প্রণয়োপখ্যানের সে রাসলীলা উপভোগ করতে সারাদেশ থেকে ছুটে আসেন হাজারো নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, কবি-সাংবাদিক, দেশি- বিদেশি পর্যটকসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষজন। বর্ণাঢ্য আয়োজন ও কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ২৫ নভেম্বর বুধবার সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয় মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধানতম ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা। বৃহস্পতিবার ২৬ নভেম্বর ঊষালগ্নে সমাপ্ত হয়েছে।
তবে এবার প্রথমবারের মত মৈতৈ মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকেরা আদমপুর এলাকায় পৃথক দুটি স্থানে এবার রাসোৎসব করছে। এ উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রাস উৎসব উপলক্ষে তিনটি স্থানেই বসেছিল বিরাট মেলা। মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মাধবপুর ও আদমপুরে রাসোৎসবের জন্য তৈরী সাদাকাগজের নকশায় সজ্জিত মন্ডপগুলো লাখো মানুষের মিলনতীর্থে পরিণত হয়। মণিপুরী শিশু নৃত্যশিল্পীদের সুনিপুন নৃত্যাভিনয় রাতভর মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে।
ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, ১৭৭৯ সালে মণিপুরের মহারাজা ভাগ্যচন্দ্রস্বপ্নদৃষ্ট হয়ে যে নৃত্যগীতের প্রর্বতন করেছিলেন তাহাই রাসোৎসব। ভাগ্যচন্দ্রের পরবর্তী রাজাগনের বেশরিভাগই ছিলেন নৃত্যগীতে পারদর্শী এবং তারা নিজেরাও রাসনৃত্যে অংশগ্রহণ করতেন। এর ফলে মণিপুরী সম্প্রদায়ের মধ্যে এ কৃষ্টির ধারাবাহিকতায় কোন ছেদ পড়েনি। অতীতের সেই ধারাবাহিকতার সূত্র ধরেই কোন রুপ বিকৃতি ছাড়াই কমলগঞ্জে উদযাপিত হয়ে আসছে মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শ্রী কৃষ্ণের মহা রাসলীলা। তুমুল হৈ-চৈ, আনন্দ-উৎসাহ, ঢাক, ঢোল, মৃদঙ্গ, করতাল এবং শঙ্খ ধ্বনির মধ্যদিয়ে রাধা-কৃষ্ণের লীলাকে ঘিরেই বছরের অন্য সব দিন থেকে ভিন্ন আমেজ ফিরে পায়।