স্পোর্টস ডেস্ক :
পার্থে অ্যাওয়ে ম্যাচে ৫-০ গোলে হার। হোম ম্যাচে বঙ্গবন্ধুতে হারের ব্যবধান কত হবে, তাই ছিল বিবেচ্য, জয় কিংবা ড্রর কথা দূরে থাক। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া বলে কথা। তবে হোম ম্যাচে দর্শকদের পুরো সমর্থনই পেল মামুনুলরা। প্রায় ২২-২৩ হাজার দর্শক গলা ফাটিয়ে উৎসাহ দিয়ে গেল লোপেজ বাহিনীকে। কিন্তু তা যে খুব কাজে লাগল, তা বলা যাবে না। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৪-০ গোলে হেরেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। স্বান্তনা একটাই, পার্থে হারের ব্যবধান ছিল ৫-০, এবার ৪-০। একটি গোল অন্তত কম হজম করতে হয়েছে স্বাগতিকদের।
দর্শকে ঠাসা গ্যালারী। বেশিরভাগই বাংলাদেশি সমর্থক। তবে নজর কেড়েছে সকারুজ সমর্থকরাও। হলুদ জার্সি পড়ে স্বদেশী পতাকা হাতে নিজ দলের সমর্থন জানাতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিল কিছু অস্ট্রেলীয় দর্শকও। সব মিলিয়ে এক প্রতিদ্বন্দ্বিতামুখর পরিবেশ। এমনটি শেষ দেখা গিয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের ফাইনালে। যেখানে দারুণ খেলেও মালয়েশিয়ার কাছে ৩-২ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। হাজার হাজার দর্শক সেদিন হারের বেদনায় ছিল ন্যুব্জ। আজও অনেকটা তাই। তবে প্রতিপক্ষ শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া বলেই গ্যালারীতে হারের হা-হুতাশ কমই শোনা গেল। বরং ফুটবলের মান বাড়াতে জোর দাবিতে যেন সোচ্চার ছিল ফুটবল অনুরাগীরা।
ম্যাচ শুরুর আগে সম্প্রতি প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করে দুই দল।এরপর শুরু হয় ময়দানী লড়াই। শুরু থেকেই আধিপত্য ছিল অস্ট্রেলিয়ার। মাঝে মধ্যে বাংলাদেশ আক্রমণে গেছে, তা সংখ্যায় খুবই কম। তবে ঐসব আক্রমণগুলোর সময় গ্যালারীতে যে দর্শকদের রব উঠেছিল, তা ছিল দেখার মতো। ভাগ্য খারাপ, বড় ব্যবধানে হারের অভিজ্ঞতা সঙ্গী করেই মাঠ ছাড়তে হয় সবাইকে।
প্রথমার্ধেই ৪-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। এই অর্ধে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে হ্যাটট্রিক করেন তারকা ফুটবলার টিম কাহিল। খেলার শুরুতেই অর্থাৎ ষষ্ঠ মিনিটেই প্রথম গোলের দেখা পায় অস্ট্রেলিয়া। অ্যারন মুইয়ের ফ্রি কিকে বক্সের ভেতর থাকা কাহিলের পা লাগিয়ে প্লেসিং (১-০)।
১৫ মিনিটে প্রথমবারের মতো আক্রমণে যায় বাংলাদেশ দল। বা প্রান্ত থেকে অধিনায়ক মামুনুলের ক্রসে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি জামাল ভুইয়া। বল তালুবন্দী করেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক অ্যাডাম ফেডেরিক। এরপর আরও একবার আক্রমণে গিয়েছিল বাংলাদেশ, তবে তা মিইয়ে যায় বক্সের মধ্যেই।
৩২ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় অস্ট্রেলিয়া। এবারও গোলের যোগানদাতা অ্যারন মুই। তার পাসে বক্সের মধ্যে জটলা থেকে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন কাহিল। ২-০তে লিড নেয় অস্ট্রেলিয়া। এর মিনিট পাঁচেক পর হ্যাটট্রিকের দেখা পান কাহিল। এবারও তার গোলের যোগানদাতা সেই অ্যারন মুই। গোল এসিস্টে তারও হ্যাটট্রিক। স্কোর তখন ৩-০।
প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে চতুর্থ গোলের দেখা পায় অস্ট্রেলিয়া। এবারও গোলের যোগানদাতা সেই মুই। বক্সের ভেতর তার করা হেডে বল এক ড্রপে বাউন্স খায়, ফিরতি হেডে বল জালে জড়ান অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক মাইল জেডিনাক। ৪-০তে লিড নেয় সকারুজ শিবির। শেষ অবধি এই স্কোরে এগিয়ে থেকেই প্রথমার্ধের বিরতিতে যায় কাহিলরা।
দ্বিতীয়ার্ধেই তুলনামূলক ভালো খেলেছে বাংলাদেশ। কারণ এই অর্ধে একটি গোলও হজম করেনি বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার মতো সমান তালে এই অর্ধে লড়েছে মামুনুলরা। তবে দক্ষতার অভাবে অস্ট্রেলিয়ার জাল খুজে পায়নি স্বাগতিক শিবিরের কোন স্ট্রাইকার।
শেষ অবধি ৪-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে অস্ট্রেলিয়া। বাছাই পর্বে সপ্তম ম্যাচে বাংলাদেশের একটি ষষ্ঠ হার। একমাত্র ড্র গত জুন তাজিকিস্তানের বিরুদ্ধে। বি গ্রুপের শেষ ম্যাচে আগামী ২৪ মার্চ জর্ডানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি হবে জর্ডানের মাঠে। হোম ম্যাচে জর্ডানের সঙ্গে ৪-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। অ্যাওয়ে ম্যাচে জর্ডানের সঙ্গে বাংলাদেশ জিতবে, তা জোর দিয়ে বলা যায় না। তার মানে, বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে বাংলাদেশের অর্জন মাত্র এক পয়েন্ট।