গুজবেই ১২জন বিদ্যুৎ কর্মী আহত, নির্বাহী প্রকৌশলী লাঞ্ছিত ॥ কুলাউড়ায় বিদ্যুৎহীনতার ঝুঁকিতে কয়েক হাজার গ্রাহক

85

শাহ আলম শামীম, কুলাউড়া থেকে :
একটি ব্রেকার প্রতিস্থাপনকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় বিদ্যুৎহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছেন কুলাউড়ার পিডিবির কয়েক হাজার গ্রাহক। কুলাউড়া পিডিবি‘র বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের ১২ জন বিদ্যুৎ কর্মী আহত  এবং নির্বাহী প্রকৌশলী জহির আহমদ লাঞ্ছিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এমন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কুলাউড়া পিডিবির কর্মকর্তা কর্মচারীরা  তাদের কাজে বাধা ও তাদের উপর কিছু উশৃঙ্খল গ্রাহকদের এমন আর্কষিক হামলার জন্য অভিযুক্ত করছেন ফেঞ্চুগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের।
কুলাউড়া পিডিবি গ্রীড স্টেশনের আহত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অভিযোগ করে জানান গত বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় স্থানীয় পল্লীবিদ্যুত অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ইন্ধনে তাদের উপর এমন আর্কষিক হামলার ঘটনা ঘটেছে।
কুলাউড়া পিডিবির সহকারী প্রকৌশলী খন্দকার কামরুজ্জামান জানান, কুলাউড়ার পিডিবির বিদ্যুৎ সঞ্চালিত লাইনের তিনটি ফিডারের মধ্যে কুলাউড়া-ইসলামগঞ্জ ফিডারের ব্রেকার গত মঙ্গলবার হঠাৎ  পুড়ে গেলে  ওই ফিডারের আওতায় থাকা এলাকা বিদ্যুৎ হীনতায় অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে তাদের নির্দেশে আপদকালীন সংকট কাটাতে আপাতত পিডিবি‘র মালিকানাধীন ফেঞ্চুগঞ্জ-কুলাউড়া (কুলাউড়া সাবেক সাবস্টেশনে ব্যাবহৃত বর্তমানে গ্রীড স্টেশন হওয়ায় তা পরিত্যাক্ত) অব্যবহৃত ১১ কেভি বিদ্যুৎ লাইন থেকে একটি ব্রেকার এনে তা ব্যাবহারের পরামর্শ ও নির্দেশ দেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এমন নির্দেশ পেয়ে ব্রেকার খুলে আনার জন্য ঘটনার দিন কুলাউড়ার পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী সহ বিদ্যুৎ কর্মীরা ফেঞ্চুগঞ্জে  যান। বিদ্যুৎ সঞ্চালিত লাইন সাট-ডাউন নিয়ে তারা ব্রেকার খোলার কাজ শুরু করলে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজসে স্থানীয় পল্লীবিদ্যুতের কিছু উশৃঙ্খল গ্রাহক উত্তেজিত হয়ে তাদের কাজে  বাধা দেয় এবং তাদের মারধর করে। কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগ ব্রেকার খুলে নিলে ওই এলাকা অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা গুজব ছড়িয়ে স্থানীয় বিদ্যুৎ গ্রাহকদের উত্তেজিত করে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। অথচ এই ব্রেকারের সাথে পল্লীবিদ্যুতের ওই এলাকার গ্রাহক হয়রানি হওয়ার মত কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এমনকি এই পরিত্যাক্ত ব্রেকারটির মালিকানাও পল্লী বিদ্যুতের নয়। তারা জানান কিছু দিন পর ওই ব্রেকারই পল্লীবিদ্যুতের কর্মকর্তারা তাদের কাজে ব্যবহার করার মতলব আটছিলেন বলেও তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তাদের আত্মসাতমূলক দূরবিসন্ধিতে ব্যাঘাত ঘটায় তারা স্থানীয় গ্রাহকদের ভুল বুঝিয়ে গুজব ছড়িয়ে কুলাউড়ার পিডিবির লোকদের উপর হামলা করায়। হামলায় আহতারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এদিকে পল্লীবিদ্যুতের কর্মকর্তাদের ইন্ধনে এমন হামলা হয়েছে এখবর শোনে কুলাউড়ার বিকল হওয়া ব্রেকারের সুবাধাভোগী গ্রাহকসহ কুলাউড়ার পিডিবির কর্মকর্তা কর্মচারী ও কয়েক হাজার গ্রাহকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। দ্রুত অভিযুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা না নিলে তারা আন্দোলনে নামবেন এবং এর জন্য যে কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটলে এর দায়দায়িত্ব এঘটনার অন্তরালে থাকা উসকানিদাতারাই নিতে হবে  বলে  তারা হুঁশিয়ারী দিয়েছেন। বিষয়টি মামলা পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এদিকে কুলাউড়ার পিডিবির কর্মকর্তারা জানান বর্তমানে তারা ২টি ফিডার কুলাউড়া ও ব্রাহ্মণবাজার এই  ফিডার ২টি একটি ব্রেকার দিয়ে ঝুঁকি নিয়েও ওই এলাকার বিদ্যুৎ সঞ্চালন করছেন। এতে যে কোন সময় ব্রেকার বিকল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি বিকল হলে কয়েক হাজার গ্রাহক বিদ্যূৎ সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকবেন বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে ফেঞ্চুগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা প্রকৌশলী আব্দুল বাছিতের কাছে জানতে চাইলে তিনি তাদের উপর আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে ওই দিনের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান ফেঞ্চুগঞ্জ-কুলাউড়া ৩৩ কেভি লাইনের ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকার কিছু গ্রাহক ব্রেকার খুলে নেওয়া নিয়ে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছে। এবিষয়ে আমাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই এবং ব্রেকার খুলে নেওয়ার ব্যাপারে পিডিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাদের কে অবগত করেননি বলেও তিনি জানান।