কমলগঞ্জের ধলাই নদীর বাঁধে ফাটল ॥ আতংকে ১৩টি গ্রামের মানুষ

49

কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের হীরামতি গ্রামে ধলাই নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধটির ফাটল দেখা দেওয়ায় ১৩ টি গ্রামের মধ্যে আতংক ও উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। নদীর একুল ভাংঙ্গে অকুল গড়ে, এইতো নদীর খেলা। নদীমাতৃক আমাদের এই দেশে ভাংগা গড়ার খেলায় কত গ্রাম যে, নদীর গর্ভে বিলিন হচ্ছে, তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। প্রতিবছরই সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার, তাই বর্ষা মৌসুম এলেই নদীর তীরবর্তী গ্রামবাসীদের মনে একটাই শঙ্কা মরা নদী ডাক দিয়েছে, এই বুঝি জোয়ার এলো। পূর্ব ও পশ্চিম ভাগে বিস্তৃর্ণ পাহাড়ী অঞ্চল টিলা ভূমি, দক্ষিণ পূর্বে রয়েছে রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চল, চা বাগান। প্রবল বৃষ্টিপাত হলেই দেখা দেয় নদী ভাঙ্গন, তেমনি ধলাই ভাঙ্গনে আজ তার রূপকার। সম্প্রতি কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইসলামপুর ও কমলগঞ্জ পৌর এলাকার ঘুরে নদী ভাঙ্গন প্রভৃতি এলাকার লোকজন ও ভাঙ্গনের আতংকে দিন কাটানো পরিবার গুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুখ দুঃখের ধলাই নদী কমলগঞ্জ বাসীকে সুখের চেয়ে দুঃখই দিয়েছে বেশি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আদীবাসি মণিপুরী, চা শ্রমিক, অধ্যুষিত মাধবপুর ইউনিয়নের হীরামতি গ্রামের পথ ধরে ধলাই নদীর পাড় দিয়ে যাবার সময় চোখে পড়ে আধাপাকা ঘরবাড়ীর ধ্বংশাবশেষ। এগুলো ২০০৪ সালে বন্যায় নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। গ্রামে নতুন আগন্তক দেখে পাশের সবজি ক্ষেত থেকে কাজ ফেলে আমার পাশে এসে দাঁড়ানো পঞ্চাষোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ তার নাম বদন সিংহ ও এই এলাকারই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ধীরেন কুমার সিংহ বলেন, হীরামতি গ্রামের তাদের বাড়ীর সামনেই এবার নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কারন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া ব্লক ও নদীর বাঁধের অধিকাংশই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এবং এবার উজানী ঢল নামলেই আমাদের তথা আরো ১২টি গ্রামবাসীর আর রক্ষা নেই, ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে দক্ষিণাঞ্চলের ১৩টি গ্রামের কৃষিজীবীদের। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষগুলো কৃষিজীবীর উপরই নির্ভরশীল। এ ব্যাপারে যেন কারও মাথা ব্যথা নেই। এলাকাবাসী জানান, ২০০৪ সালের সৃষ্ট বন্যা ও ভাঙ্গনে গ্রামের দক্ষিণ পশ্চিমাংশের রাজকুমার সিংহ, তমাল সিংহ, সুশিল সিংহ, মদন সিংহ, লোকেন্দ্র সিংহ, রিনা সিনহা, চুড়ামনি সিংহ, পুতুল সিংহ, কুঞ্জ সিংহ, গৌরমনী সিংহ, ইমানু দেবীসহ ১৩/১৪ বাড়ী ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তার বাড়ীর সামনেই গেলে দেখা যায়, বাড়ীর সীমানা প্রাচীর (বাঁশের বেড়া) ঘেষে ৮/১০ হাত দূরেই ধলাই নদীর পার ভেঙ্গে ভেঙ্গে নদীতে পড়ছে। তিনি ভাঙ্গন দেখিয়ে বলেন, এ বছর ধলাই আমাকে রক্ষা দেবে না। এরই মধ্যে ৫০/৬০ জন গ্রামবাসীর জটলা বেধে গেল। এদের মধ্যে একাধিকবার নদী ভাঙ্গনের স্বীকার কুঞ্জ সিংহ, পূর্নচাঁদ সিংহ, আবির সিংহ ও মনোরঞ্জন সিংহ বলেন, আমরা পঞ্চম বারের মতো নদী ভাঙ্গনের আশংকার প্রহর গুনছি। ব্যাংকার হরিমোহন ও নীলমনি সিংহ বলেন, এক সময়ের তিন কিলোমিটারের হীরামতি গ্রামটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে আজ পৌনে দেড় কিলোমিটারে দাড়িয়েছে। নদী ভাঙ্গনের নিঃস্ব কয়েকটি পরিবার আজ গ্রাম ছেড়ে চা বাগানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। অনেক পরিবার গ্রামের বিভিন্ন বাড়ীর আঙ্গিনায় জুপড়ি ঘর বানিয়ে ভাসমানের মত জীবন যাপন করছে। তারা বলেন, হীরামতি গ্রামের ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের ফাটল ও ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় হীরামতি, মাধবপুর চা বাগান, মাধবপুর বাজার, গকুল সিংহের গ্রাম, ছয়ছিড়ি, বাঘবাড়ী, পাঞ্জিবাড়ী, জপলারপাড়, পশ্চিম বাঘবাড়ী, গবিন্দবাড়ী, শুকুরউল্ল¬ারগাঁও, শিমুলতলা, ধলাইপাড় এলাকার লোকজন চরম আতংক ও উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। বদন সিংহের বাড়ীর নিকটে নদী ভাঙ্গনের সৃষ্টি হলে পার্শ্ববর্তী আরো কয়েক গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়ে ১২/১৪টি গ্রাম বন্যায় প্ল¬াবিত হয়ে কমলগঞ্জ পৌরসভার কিয়দ্বংশ পর্যন্ত বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ বিভিন্ন  সময় ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন। কিন্তু এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত উক্ত স্থানের জন্য কোন রকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। মাধবপুর ইউনিয়নের মণিপুরী অধ্যুষিত হীরামতি গ্রাম সহ পাশ্ববর্তী এলাকাকে ধলাই নদী করাল গ্রাস হতে রক্ষা করতে ভাঙ্গা অংশে সি সি ব্ল¬কের জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে একসময়ে এই হীরামতি গ্রামটি বিলীন হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৌলভীবাজার এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুর রব বলেন, বর্তমানে আমাদের কোন বরাদ্দ নেই। তবে বেশী সমস্যা হলে সরেজমিন তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে জরুরী ভিত্তিতে সাময়িকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।