হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ ও বানিয়াচংয়ে কালবৈশাখী ঝড়ে গাছের নীচে চাপা পড়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলো নবীগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের রমজান আলী (৪০), বানিয়াচং উপজেলা সদরের উত্তর-পূর্ব ইউনিয়নের বাদাউড়ি গ্রামের ফজল মিয়ার স্ত্রী নূরজাহান বেগম (২২), ও তার ছেলে রবিন মিয়া (৪)।
জানা যায়, মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে কালবৈশাখী ঝড়ে একটি আম গাছ নবীগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের রমজান আলীর বসতঘরের উপর ভেঙ্গে পড়লে তিনি গাছের নীচে চাপা পড়েন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। বাড়ির লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নবীগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে রাত ২টার দিকে কালবৈশাখী ঝড়ে একটি কড়ই গাছ বানিয়াচং উপজেলার বাদাউড়ি গ্রামের ফজল মিয়ার বসতঘরের উপর ভেঙ্গে পড়ে। এ সময় ফজল মিয়ার ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নূরজাহান ও ছেলে রবিন মিয়া গাছের নীচে চাপা পড়লে ঘটনাস্থলেই মা-ছেলে মারা যায়।
বানিয়াচং থানার ওসি নির্মলেন্দু চক্রবর্তী দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : সুনামগঞ্জে কাল বৈশাখী ঝড়ের কবলেপড়ে রিয়াজ আলী(২৬) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহত ড্রাইভার মোঃ রিয়াজ আলী মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পুর্ব জালালপুর গ্রামের মোঃ ছেরাগ আলীর ছেলে। সে ভোলাগঞ্জ থেকে পাথর বোঝাই ট্রাক নিয়ে দিরাই গিয়ে পাথর আনলোড করে সিলেট যাওয়ার সময় পাথারিয়া নামকস্থানে ঝড়ের সময় গাছের চাপা পড়ে সে নিহত হয়।
জানা যায়, গতকাল বুধবার ভোর রাতে দিরাই থেকে সিলেট যাওয়ার পথে দিরাই-মদনপুর রাস্তা ট্রাক চালিয়ে যাচ্ছিলেন রিয়াজ আলী। পাথারিয়া মাদ্রাসার নিকটে আসা মাত্র কাল বৈশাখী ঝড় শুরু হয়। এ সময় একটি গাছ ভেঙ্গে ট্রাকের উপর পড়লে ড্রাইভার ঘটনাস্থলে নিহত হন। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে এসে থানা পুলিশকে জানালে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আল-আমীন জানান, মোঃ রিয়াজ আলী, আÍীয় স্বজন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক’র অনুমতি ক্রমে ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ নিজ বাড়ীতে নিয়ে যান।
অপর দিকে পিন্টু দেবনাথ, কমলগঞ্জ থেকে জানিয়েছেন : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে গত মঙ্গলবার রাতে কাল বৈশাখীর ছোবল ও ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৫ শতাধিক ঘর আংশিক ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। সহ¯্রাধিক এর উপরে গাছ পালা এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়। গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল রাস্তা বন্ধ রয়েছে। এঘটনায় স্বামী ও স্ত্রী দুই জন আহত হয়েছে।
গতকাল বুধবার সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের হরিস্মরন গ্রামের সনাতন মল্লিক (৩৬) এর ঘরে গাছ উপড়ে পড়ে তিনিসহ ও তার স্ত্রী মায়া মল্লিক (২৭) গুরতর আহত হন। তাদেরকে মৌলভীবাজার সদও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তাদেও ছেলে মেয়ে সুমী (৫), অপূর্ব (৩) ও রনি (১) কোন ক্ষতি হয়নি। ঘরটি সম্পূর্ণরুপে বিধ্বস্ত হয়েছে।
এদিকে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ইউনিয়ন পরিষদের তালিকানুযায়ী ১৮৯টি ঘর সম্পূর্ণরুপে বিধ্বস্ত ও ২৮৫ ঘর আশিংক ভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। সহ¯্রাধিক গাছপালা ও বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়েছে। মাধবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে যায়। কমলগঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে সংলগ্ন স্থানে গাছ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হওয়ায় কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সিলেট-আখাউড়া সেকশনের শমসেরনগর রেলওয়ে ষ্টেশন মাস্টার মো. কবির জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে লাউয়াছড়া উদ্যান এলাকায় রেলপথে প্রায় শতাধিক গাছ ভেঙ্গে পড়ে। ফলে রাত আড়াইটা থেকে শ্রীমঙ্গল ষ্টেশনে সিলেটগামী উদয়ন, উপবন ও সিলেট থেকে ছেড়ে আসা কালনী, জালালাবাদ ও কুশিয়ারা ট্রেন লংলা, শমসেরনগর ষ্টেশনে আটকা পড়ে। রেল পথের উপর ভেঙ্গে পড়া গাছ সরিয়ে বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
এদিকে প্রচন্ড বেগে কালবৈশাখী ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে ৪র্থ বারের মতো বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে ও বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া ৩০ হেক্টর জমির বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। নি¤œাঞ্চল প্লাবিত রয়েছে।