বর্ষবরণের উৎসবে নারী নিগ্রহের ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল-সমাবেশ ॥ দেশের বিবেক বলে খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বর্বর ঘটনায় গোটা সভ্যতাই আজ প্রশ্নবিদ্ধ

59

DSC04695 copyবাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র সিলেট জেলা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট নগর এবং চারণ সাংস্কৃতি কেন্দ্র সিলেট জেলা শাখার যৌথ উদ্যোগে গতকাল রবিবার বিকাল ৪টায় সম্প্রতি দেশব্যাপী বর্ষবরণের উৎসবে ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের টিএসসি.জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে নারী নিগ্রহের প্রতিবাদে মিছিল ও সমাবেশ করে। মিছিলটি সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সিটি পয়েন্টে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সিলেট জেলার সংগঠক এড্যাভোকেট হুমায়ুন রশীদ সোয়েবের সভাপতিত্বে এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট নগর শাখার সভাপতি রেজাউর রহমান রানার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক কমরেড উজ্জ্বল রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ¯েœহাদ্রি চক্রবর্ত্তী রিন্টু, নারীমুক্তি কেন্দ্র, সিলেট জেলা শাখার সংগঠক তামান্না আহমেদ, ছাত্র ফ্রন্ট নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রুবাইয়াৎ আহমেদ প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘বর্ষবরণের উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায়সহ দেশব্যাপী নারী নিগ্রহের ঘটনায় সারা দেশের বিবেকবান মানুষরা আজ আতঙ্কিত। বিশেষ করে দেশের বিবেক বলে খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যখন এ রকম বর্বর ঘটনা সংগঠিত হয় তখন গোটা সভ্যতাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। জগন্নাথ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী নির্যাতনের ঘটনার সাথে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লোক দেখানো কিছু পদক্ষেপ নিলেও বাস্তবে তাদেরকে ছাড় দেয়া হয়েছে। এত জগন্য অপরাধ সংগঠিত করার পরও এদেরকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসি এলাকায় কথিত তিন স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার পরও সংঘটিতভাবে অপরাধীরা নারী নির্যাতনের মত ঘটনা সংগঠিত করেছে। এমন কি অপরাধীদের পুলিশের কাছে তুলে দেয়া হলেও পুলিশ তাদেরকে ছেড়ে দেয়। শুধু তাই নয় একই এলাকায় কিছুদিন পূর্বে অভিজিৎ রায়ের হত্যাকান্ডও সংগঠিত হয়েছিল কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সরকার কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।’
তারা আরও বলেন, ‘সামাজিক-সাংস্কৃতিক সমস্ত আয়োজনে নারীকে যেভাবে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, তার ফলাফলস্বরূপ সারাদেশে এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় দেশের পুলিশ প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ধরনের সন্ত্রাসীদের মদত দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিণত হয়েছে ভোগবাদী সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। অসংখ্য অপরাধের ঘটনা ঘটলেও সন্ত্রাসীরা ছাড় পাওয়ার অসংখ্য নজির আছে। তার ফলেই যৌন নিপীড়ক এমন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, নারীর অপমান মানে সভ্যতার অপমান। যে সমাজ নারীকে লাঞ্ছিত করে তা কখনও গণতান্ত্রিক সমাজ হতে পারে না। দেশব্যাপী মাদক-পর্ণোগ্রাফির বিস্তার, সিনোম-বিজ্ঞাপনে নারীকে উপস্থাপন সবকিছুই নারীকে সম্ভোগের বস্তু হিসেবে পরিগণিত করতে ভূমিকা রাখছে। এই পরিস্থিতি দিনের পর দিন চলতে পারে না। আজকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এই নির্যাতন-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে দায়ী যৌন নিপীড়কদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বিজ্ঞপ্তি