বুকফাটা আর্তনাদ ও বাংলার জমিনে কোরআনের রাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়ে হাজার হাজার জনতার উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয়েছে ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম শহীদ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের গায়েবানা জানাযা। প্রখর রোদ অপেক্ষা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ সিলেটবাসীর উপস্থিতিতে সিলেট সরকারী আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত গায়েবানা জানাযা জনসমুদ্রে রূপ লাভ করে। জানাযা পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবির সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। বেলা ২টা ১৫ মিনিটে জানাযা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও জনতার আগমনের জোয়ার দেখে গায়েবানা জানাযাটি ২টা ৩০ মিনিটে সম্পন্ন হয়। জোহরের নামাজ শেষ হতে না হতেই বিভিন্ন মসজিদ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীগণের উপস্থিতিতে আলীয়া মাদ্রাসা মাঠ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বিশাল জনতার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত গায়েবানা জানাযায় ইমামতি করেন জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী।
জানাজা পূর্ব সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, কথিত মানবতা বিরোধী অপরাধের দোহাই দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের সাহসী সিপাহ সালার বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, প্রখর মেধাবী বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে বিচারের নামে ফাঁসিতে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর কোন অপরাধ ছিল না। তাঁর অপরাধ একটাই তিনি আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়দীপ্ত কাফেলা জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারী জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালে ইন্টারমেডিয়েট পড়–য়া ১৭ বছরের এক কিশোরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বিচার বিভাগের ইতিহাসের এক চরম মিথ্যাচার। যা সুস্থ বিবেক সম্পন্ন কোন মানুষ বিশ্বাস করতে পারে না। কামারুজ্জামান শাহাদাতের তামান্না বুকে নিয়ে ইসলামী আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি মহান রবের বিশ্বাসের প্রতি ছিলেন অটল। শনিবার রাতে কামারুজ্জামানকে ফাঁসি দিলেও কয়েকদিন থেকে তাঁকে ফাঁসি কার্যকরের নামে নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল একটা তাঁর মনোবল ভেঙ্গে দেয়া কিন্তু না কামারুজ্জামান হাসতে হাসতে ফাঁসির দড়ি গলায় পড়েছেন। কোন মানুষের কাছে প্রাণভিক্ষা চাননি। তাঁর শেষ ইচ্ছা পরিবারের প্রতি ছিল না, ইচ্ছা ছিল ইসলামী আন্দোলনের কল্যাণের প্রতি। তিনি বলেছেন, তাঁর জীবনের বিনিময়ে হলেও এদেশে আল কোরআনের সমাজ নির্মিত হবে।
সিলেট মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মো: ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী মো: আব্দুর রবের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত গায়েবানা জানাযা পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক দায়িত্বশীল অধ্যাপক ফজলুর রহমান, সিলেট জেলা দক্ষিণের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, জেলা উত্তরের আমীর হাফিজ আনোয়ার হোসাইন খান, খেলাফত মজলিস সিলেট মহানগরীর সহ-সভাপতি আব্দুল হান্নান তাপাদার, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইন, জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, সিলেট মহানগরীর শিবিরের সভাপতি মু. আব্দুর রাজ্জাক, সিলেট জেলা পূর্ব শিবিরের সভাপতি এস.এম. মনোয়ার ও জেলা পশ্চিমের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা দক্ষিণের নায়েবে আমীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান, সিলেট জেলা উত্তরের সেক্রেটারী মাওলানা ইসলাম উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী নুরুল ইসলাম বাবুল ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, আলেম, পেশাজীবি, শিক্ষক, সাংবাদিক সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
এদিকে কুলাউড়া থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : গতকাল ১২ এপ্রিল রবিবার বাদ যোহর গায়েবানা জানাযা মৌলভীবাজারের পশ্চিম বাজার জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শত শত মুসল্লীর উপস্থিতিতে গায়েবানা জানাযা পূর্ববর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে সূরা সদস্য দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী ইঞ্জিনিয়ার এম শাহেদ আলী, মৌলভীবাজার পৌর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা আহমদ ফারুক, সদর উপজেলা আমীর মোঃ আলাউদ্দিন শাহ, ছাত্রশিবির শহর সভাপতি ফখরুল ইসলাম, সাবেক শহর সভাপতি হাফেজ তাজুল ইসলাম ও শহর শিবিরের সেক্রেটারী মুর্শেদ আহমদ চৌধুরী প্রমুখ। বক্তারা বলেন, যারা ষড়যন্ত্র করে তাকে হত্যা করেছে এবং ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছে ইতিহাস কখনো তাদেরকে ক্ষমা করবে না। এই জালিম সরকারকে বিচারের নামে অবিচারের এবং পরিকল্পিত এ হত্যাকান্ডের জন্য জনতার আদালতে একদিন জবাবদিহি করতে হবে। বক্তারা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার প্রতিবাদে ২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর মধ্যে রোববার শহীদ কামারুজ্জামানের শাহাদাত কবুলের জন্য দোয়া অনুষ্ঠান এবং আজ সোমবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল। ঘোষিত এ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করে তোলার জন্য জামায়াতে ইসলামীর সকল জনশক্তি ও দেশবাসীর প্রতি। এছাড়া জেলার বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল ও রাজনগরে কামারুজ্জামানের গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে।