কাজিরবাজার ডেস্ক :
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে এক হজার ৬৫০ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা পৃথক ২০টি রিটের ওপর জারি করা রুল খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়েছেন চেম্বার আদালত।
রিটকারীদের করা আপিল আবেদনের শুনানি নিয়ে শনিবার (১৮ সেপ্টম্বর) চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের চেম্বার আদালত শুনানির জন্য ২০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করে আদেশ দেন। আদেশের বিষয়টি ণ্ডনিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মুহাম্মদ (এসকে) মোর্শেদ।
এদিন আদালতে রিটকারীদের পক্ষ শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিএম ইলিয়াস কচি। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জিনারেল এএম আমিন উদ্দিন, তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মুহাম্মদ (এসকে) মোর্শেদ ও ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে এক হজার ৬৫০ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা পৃথক ২০টি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুল গত ১৬ সেপ্টেম্বর খারিজ করে রায় দিয়েছিলেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চ। এর ফলে এক হাজার ৬৫০ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া বৈধ বলে জানিয়েছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মুহাম্মদ মোরশেদ।
পরে উচ্চ আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করেন সংক্ষুব্ধ রিটকারীরা। ওই আপিলের শুনানির পরে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্যে রাখেন।
আদালতে ওই দিন রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ, প্রবীর নিয়োগী, সুব্রত কুমার কুণ্ডু ও সালাউদ্দিন রিগ্যান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মুহাম্মদ মোরশেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
রিটকারীদের পক্ষের আইনজীবীরা জানান, ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি এক হাজার ৬৫০ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে সব ধরনের পরীক্ষা শেষে ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি ফল প্রকাশ করা হয়। এতে কোটা পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ না করে প্রাথমিক ফল প্রকাশ করা হয়েছে উল্লেখ করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেন মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৩৪ প্রার্থী।
ওই আইনজীবীরা আরও জানান, এতে ফল না পেয়ে মো. রাশেদুল ইসলামসহ চাকরিপ্রার্থী ৩৪ জন রিট আবেদন করেন। পরবর্তীতে আরও অনেকে রিট করেন। ওই সব রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার সুব্রত কুমার কুন্ডু ণ্ডবলেন, কৃষি সম্প্রসারণে এক হাজার ৬৫০ কর্মকর্তার নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট খারিজের পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) উপ-সহকারী কর্মকর্তা পদে নিয়োগের উদ্যোগ নেন। ওই খবর পেয়ে রিটকারীরা আপিল আবেদন করেন। ওই আপিল আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন চেম্বার বিচারপতি।
এর আগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) উপ-সহকারী কর্মকর্তা পদে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয় গত ১৭ জানুয়ারি। কিন্তু নিয়োগে সুপারিশপ্রাপ্ত থেকে বঞ্চিতদের মধ্য থেকে রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এ নিয়োগে স্থিতাবস্থা জারি করে।
এরপর গত বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্ট তা খারিজ অর্থাৎ নিয়োগ আদেশ বৈধ বলে ঘোষণা করেন। ওইদিনই ডিএই দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক অতিরিক্ত পরিচালকদের বরাবর চিঠি ইস্যু করে। যাতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত এক হাজার ৬৫০ জন প্রার্থী হতে স্ব-স্ব অঞ্চলের অধীনে নির্বাচিত প্রার্থীদের আগামীকাল রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় যোগদানের জন্য নিয়োগপত্র জারি করাসহ ওইদিনই যোগদানের আদেশ দেন।
ব্যারিস্টার সুব্রত কুমার কুন্ডু আরেও বলেন, ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে এক হাজার ৬৫০টি স্থায়ী পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে ২৮ হাজার ৫৩৫ জন প্রার্থী আবেদন করেন। তাদের মধ্যে ৫১১৪ জন প্রার্থী প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি তাদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার দুদিনের মাথায় ১৭ জানুয়ারি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এক হাজার ৬৫০ জন প্রার্থী নির্বাচন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।
রিটকারীরা বলছেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ৬নং শর্তাবলির কলামে জেলা কোটাসহ সরকার কর্তৃক পরিচালিত অন্যান্য সব কোটা বিধি অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু টাঙ্গাইল গোপালগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকটি জেলায় তা অনুসরণ করা হয়নি। সুপারিশ বঞ্চিত প্রার্থীদের একটি অংশ হাইকোর্ট বিভাগে জেলা কোটাসহ অন্যান্য কোটা অনুসরণ না করার কারণে গত বছরের ১৭ জানুয়ারি নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকাকে চ্যালেঞ্জ করে রিট পিটিশন দায়ের করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগ ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন এবং উক্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা দেন।
এমতাবস্থায়, ডিএইর এরূপ তড়িঘড়ি করে নিয়োপত্র জারি ও যোগদানের আদেশ একজন সমঝদার ব্যক্তির নিকট চরম প্রশ্নবিদ্ধ হওয়াটাই স্বাভাবিক।