‘চা-বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ’ এর পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের কাছে ৫ দফা দাবিতে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। স্মারকলিপি পেশের পূর্বে একটি মিছিল শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সংগঠনের সংগঠক অধীর বাউরীর সভাপতিত্বে এবং রানা বাউরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট নগর শাখার সভাপতি রেজাউর রহমান রানা, মালনীছড়া চা বাগানের সাহেদা আক্তার, লাক্কাতুরা চা বাগানের জয় চাষা, তারাপুর চা বাগানের সঞ্জীব রায়,বুরজান চা বাগানের তাপস নায়েক, মৃত্তিঙ্গা চা বাগানের রতন পাল, খাদিম চা বাগানের মিঠুন বিশ্বাস, হিলুয়াছড়া চা বাগানের রঞ্জু গঞ্জু প্রমুখ।
সভায় বক্তার বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল চা। চা জনগোষ্ঠির অমানুষিক পরিশ্রমে শুধু নান্দনিক সৌন্দের্যের চা বাগানই গড়ে উঠছে না,সচল হচ্ছে দেশের অর্থনীতির চাকা। এছাড়া দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ও রয়েছে এই জনগোষ্ঠির বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্যি স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও শিক্ষাসহ সকল মৌল মানবিক অধিকার বঞ্চিত চা শ্রমিকরা। আজ সারা দেশের ১৬৬টি বাগানের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে মাত্র ৬টিতে, আর মাধ্যমিক স্কুল আছে ৩টিতে। এরপরও যে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে চূড়ান্ত আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে শিক্ষার উপকরণই তারা ক্রয় করতে পারে না। তাই বাগান কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে শিক্ষা বৃত্তি চালু এবং বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণও সরবরাহ করা মানবিক। আবার যারাও বা এত বাধা অতিক্রম করে উচ্চ শিক্ষা কিংবা রাষ্ট্রীয় কোন আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে যান, শুরু থেকেই তারা পিছিয়ে থাকেন। তাই পিছিয়ে পরা এ জনগোষ্ঠির সামগ্রিক বিকাশের স্বার্থে উচ্চ শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে ‘বিশেষ কোটা’ পদ্ধতি অবিলম্বে চালু করতে হবে। অন্যদিকে যে ভূমির উপর চা শ্রমিকরা দেড়শত বছরেরও অধিক সময় থেকে বাস করে আসছেন, সেই ভূমিতে নেই কোন অধিকার। আবার চা বাগানে অনেক কর্মক্ষম যুবক-যুবতী আছেন, যাদের উপযুক্ত কাজের সুযোগ নেই, আবার এদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষিতও। এমনিতর পরিস্থিতিতে পিছিয়ে পরা এ জনগোষ্ঠির জন্যে প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় বিশেষ আয়োজন। কিন্তু আশু সমাধান হিসেবে বাগানের বেকার যুবকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যোগ্যতার নিরিখে বাগানের বিভিন্ন পদে চাকুরি যেমন দিতে হবে তেমনি নিশ্চিত করতে হবে ভূমির অধিকারও। এমনিতর পরিস্থিতিতে নি¤œতর ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসক বরাবওে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। স্মারকলিপি গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল ইসলাম, এ সময় তিনি চা বাগানের শিক্ষার অধিকার বাস্তবায়ন করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ব্যাপারে আশ্বাস প্রদান করেন। বিজ্ঞপ্তি