স্পোর্টস ডেস্ক :
আগের বিশ্বকাপটা ছিল বাংলাদেশ দলের জন্য স্বপ্নময়। দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিজেদের সেরা সাফল্য হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল। কিন্তু ভারতের কাছে হেরে সেমিফাইনালের দ্বার উন্মুক্ত হয়নি। চার বছর পর ভিন্ন দেশের ভিন্ন মাটিতে, মেলবোর্ন থেকে সেই লড়াইটা এবার বার্মিংহামের এজবাস্টন! আজকের ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ করবে সেমিতে ওঠার স্বপ্ন বেঁচে থাকবে বাংলাদেশ দলের নাকি শেষ হয়ে যাবে আবার। আজ চলমান বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার জন্য টাইগারদের জিততে হবে প্রতিপক্ষ ভারতের বিপক্ষে। জিতলে ৯ পয়েন্ট নিয়ে রেসে থাকবে দল, তখন শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই শুধু সম্ভাবনা থাকবে সেমিতে ওঠার। হারলেই বাদ পড়তে হবে। প্রতিপক্ষ সেই ভারতও আজ জেতার জন্য মরিয়া হয়েই নামবে। কারণ এখন পর্যন্ত শেষ চার নিশ্চিত না হওয়ায় বিরাট কোহলির দলকে একটি অন্তত জিততেই হবে বাকি ম্যাচগুলো থেকে। বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে তারা সেই জয়ে ফিরতেই নামবে।
২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার কারণেই এবার আত্মবিশ্বাস এবং প্রত্যাশা অনেক বেশি বাংলাদেশ দলকে নিয়ে। স্বপ্নালু অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও। তিনি বিশ্বকাপ অভিযানে যাওয়ার আগে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন সেমিতে খেলার। তার সতীর্থরাও তেমন আশাই জানিয়েছিলেন। কথায়ই শুধু নয় এবার শুরু থেকেই স্বপ্নের সেই পথে যাত্রাটা দারুণভাবে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ দলের। প্রথম ম্যাচেই শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দেন মাশরাফিরা। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তানকেও পরাস্ত করে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের টানা জয়ে শেষ চারে ওঠার স্বপ্ন বাস্তব করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। চলমান বিশ্বকাপে নানাবিধ নাটকীয়তা শেষে এখন ৭ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে ৬ নম্বরে থেকেও সম্ভাবনা টিকিয়ে রেখেছে টাইগাররা। তবে দুই মহাদেশীয় চরম প্রতিপক্ষ, বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি দুই দল ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে অবশ্যই জিততে হবে। রবিবার ইংল্যান্ডের কাছে ভারত হেরে যাওয়াতে এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে বাংলাদেশ দল। সেই সঙ্গে প্রার্থনা করতে হবে পরবর্তী ম্যাচে ইংল্যান্ডের পরাজয়। আর যদি ইংলিশরা পরের ম্যাচ জিতে যায়, সেক্ষেত্রে শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বড় হার প্রার্থনা করতে হবে ইংলিশদের কাছে। তাতে করে শেষ দুই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ নেট রানরেটে অন্তত কিউইদের ধরার সুযোগ থাকবে। তবে ভারত-পাকিস্তানের মতো দুই চরম ক্রিকেট শত্রুর সঙ্গে মোকাবেলায় জয়ের পাশাপাশি নেট রানরেট বাড়িয়ে নেয়া খুবই দুঃসাধ্য কাজ টাইগারদের জন্য। তাই আপাতত ভারতের বিপক্ষে আজ এজবাস্টনে জিততে চাইছে বাংলাদেশ।
২০০৭ বিশ্বকাপে প্রথমবার ভারতের মুখোমুখি হয়েই ৫ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ দল। সেই পরাজয়ের ধাক্কায় গ্রুপ পর্ব থেকেই সেবার ছিটকে গিয়েছিল ভারত। আর বাংলাদেশ উঠেছিল সুপার এইট পর্বে। পরের বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে ৮৭ রানে হারায় ভারত। তবে নাটকীয়তা আর উত্তেজনার সৃষ্টি ২০১৫ বিশ্বকাপের শেষ আটে। দারুণ খেলে কোয়ার্টারে পা রাখা টাইগাররা ১০৯ রানে হেরে যায় ভারতের কাছে। সেই ম্যাচে বিতর্কিত আম্পায়ারিং ছিল বিশ্বব্যাপী চরমভাবে সমালোচিত। মাত্র ১২৬ বলে ১৩৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে কোণঠাসা করেছিলেন ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা। তিনি আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে জীবন ফিরে পেয়ে ওই শতরান করেছিলেন। এবার তাই দুঃসহ সেই স্মৃতি আবার ভর করবে টাইগারদের ওপর। এবারও ভারতের বিপক্ষে সেমিতে ওঠার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার লড়াই। আবারও রোহিত আছেন এবং দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এ ওপেনার ৩টি শতরানও হাঁকিয়েছেন। ভারতের আরও বড় শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের পেস বোলিংয়ে দুরন্ত মোহাম্মদ শামি, জাসপ্রিত বুমরাহকে নিয়ে। আজ ভুবনেশ্বর কুমারও যোগ হতে পারেন এ দু’জনের সঙ্গে। ইতোমধ্যে ইনজুরি সমস্যা কাটিয়ে উঠেছেন তিনি। ইংলিশদের বিপক্ষে দুই স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল ও কুলদীপ যাদব বেধড়ক পিটুনি হজম করায় তাদের মধ্যে একজন একাদশের বাইরে যাবেন। এছাড়া পায়ের পাতার ইনজুরিতে ছিটকে গেছেন বিজয় শঙ্কর। তাই ভারতের ব্যাটিং নির্ভর করবে রোহিত, কোহলি ও অভিজ্ঞ মহেন্দ্র সিং ধোনির ওপরে।
বাংলাদেশের এবার দাপুটে দল হয়ে ওঠার নেপথ্যে রয়েছে সাকিব আল হাসানের অবিশ্বাস্য ধারাবাহিক নৈপুণ্য। ৬ ম্যাচে ২ শতক ও ৩ অর্ধশতক হাঁকিয়ে তিনি ৪৭৬ রান করেছেন এবং ১০ উইকেট নিয়েছেন। ভারতীয়দের সব নজর, মনোযোগ ও পরিকল্পনা যে সাকিবকে ঘিরেই থাকবে তা একপ্রকার নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। এ ম্যাচেই সর্বশক্তি নিয়ে সেরা একাদশ সাজাতেই উন্মুখ টাইগাররা। এইবার আর কোনভাবেই ভারতের কাছে সেমির স্বপ্নটার সমাধি দেখতে নারাজ মাশরাফিরা। তাই ‘মিস্টার ফিনিশার’ খ্যাত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও পূর্ণ বিশ্রাম নিয়ে কাটিয়ে উঠেছেন ইনজুরি সমস্যা, অনুশীলনও করেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা একাদশ নিয়েই নামবে বাংলাদেশ। বোলিংয়ে দলের মূল ভরসা মুস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। বরাবরই ভারতের বিপক্ষে উজ্জ্বল বাঁহাতি মুস্তাফিজের বোলিংয়ে অনেক বেশিই নির্ভর করতে হবে বাংলাদেশকে। এখন পর্যন্ত ৩৫ ওয়ানডেতে মুখোমুুখি হয়ে মাত্র ৫ জয় পাওয়ার পরেও বাংলাদেশ দল আত্মবিশ্বাসী আজ জেতার জন্য। কারণ এ বিশ্বকাপে প্রোটিয়া-উইন্ডিজ নতি স্বীকার করেছে হাইস্কোরিং ম্যাচে। বাংলাদেশ দলেরও মূল শক্তি হয়ে উঠেছে ব্যাটিং। সেদিক থেকে আজ জ্বলে উঠতে হবে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীমের ব্যাট। সেই সঙ্গে গত এশিয়া কাপের ফাইনালে লিটন দাস ওপেনিংয়ে নেমে ভারতের বিপক্ষে যে বিস্ফোরক সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন, তার উইলো থেকেও ঝলক আশা করছেন মাশরাফিরা। তামিমের সঙ্গে তারই ওপেনিংয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ২৫ হাজার ধারণক্ষমতার এজবাস্টনে অবশ্য গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিতে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। উভয় দলের জন্যই ছিল বিপুল সমর্থন। তবে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। দুই বছর পর এখানে কি সেই প্রতিশোধ নিতে পারবেন মাশরাফিরা? ২০০৭ বিশ্বকাপের স্মৃতিতে আবার কি গর্জে ওঠে প্রতিপক্ষকে ক্ষত-বিক্ষত করতে পারবে টাইগাররা? প্রায় ১০/১২ হাজার বাংলাদেশী সমর্থক থাকবেন তাদের সমর্থন দিতে। এবার সেমিতে ওঠার স্বপ্ন বাঁচাতে পারবেন মাশরাফিরা? হারাতে হবে ভারতকে, তবেই আছে সুযোগ।