পিন্টু দেবনাথ, কমলগঞ্জ থেকে :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে মাঝ চৈত্রে বৈশাখী ঝড়ের সাথে গত দুই দিনে ভারী বৃষ্টিপাত ও প্রচন্ড বেগে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। ঝড়ে বাড়ি ঘর ও রাস্তার ধারের গাছপালা বিধবস্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। টমোটোসহ নানা ফসলী জমির ক্ষতি সাধিত হয়েছে । বুধবার বিকাল সাড়ে ন ৫টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত প্রায় আধাঘন্টা ব্যাপী কাল বৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। চৈত্র মাসে দুই দিনের ভারী বৃষ্টিতে কমলগঞ্জের ধানি জমি, নালা নর্দমা ও বিভিন্ন স্থানের রাস্তাঘাটে পানি জমে থাকে। বৃষ্টিপাতের কারণে লোকজনের স্বাভাবিক চলাফেরায়ও বিঘœ ঘটে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কম ছিল। শ্রীমঙ্গলস্থ আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক হারুন-অর-রশীদ বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) দুপুরে এ প্রতিনিধিকে বলেন, সাধারণত চৈত্রের শেষে বৈশাখের শুরুতে হালকা ঝড় বৃষ্টি হয়ে থাকে। তবে বুধবার বিকালের ঝড় বৃষ্টি মোটামুটি বড় ধরনেরই ছিল। আগামী দুই দিনও এ ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে কমলগঞ্জ উপজেলাসহ পুরো মৌলভীবাজার জেলায়। বুধবার বিকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল সদরে ২০ মি:মি: পরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় বলে তিনি (আবহাওয়া পর্যবেক্ষক) জানান। তবে শ্রীমঙ্গল সদর ছাড়াও কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলা সদরসহ অন্যান্য স্থানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণের তারতম্য হতে পারে। ভারী বর্ষণের কারণে দফায় দফায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। তবে বুধবার বিকাল পাঁচটায় আকাশ কালো করে সৃষ্ট বৈশাখী ঝড়ে কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাহাড়ি এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে পড়ে বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বুধবার বিকাল পাঁচটা থেকে বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) সকাল ১০ টা পর্যন্ত কমলগঞ্জ বিদ্যুৎ বিহিন অবস্থায় ছিল। এ অবস্থায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনালের অধীন ৩৫ হাজার গ্রাহক চরম ভোগান্তিতে পড়েছিলেন।
বুধবার বিকালে হঠাৎ করে প্রচন্ড বেগে ঝড় হয়। ঝড়ে কমলগঞ্জের উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গাছ ও গাছের ডাল ভেঙে প্রায় ৪০টি স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে যায়। এতে করে বুধবার রাত থেকে গোটা কমলগঞ্জ অন্ধকার হযে পড়ে। বৃহস্পতিবার বিকালে শুধু মাত্র উপজেলা সদরের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করেছে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ অফিস। প্রচন্ড ঝড়ে রাস্তাঘাট, বাড়ির শত শত গাছপালা উপড়ে পড়ে। ঝড়ের কারণে অনেক স্থানে ঘরের টিনের চাল উড়ে যাওয়ায় খবর পাওয়া গেছে। উপজেলা তিলকপুর, মাধবপুর, পতনউষার এলাকায় টমোটোসহ নানা ফসলে ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম এম এ হাসনাত বলেন, ঝড়ে কারণে বিভিন্ন গ্রামে গাছ পালা ভেঙ্গে লাইনে পড়ে যাওয়া বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সমস্যা হয়েছে। এক ধরনের ঘূর্ণি ঝড়ের মত ঝড় হওয়ায় পাহাড়ি এলাকা দিয়ে চলমান ৩৩ কেভি প্রধান বিদ্যুৎ লাইনের কিছু যন্ত্রাংশের ক্ষতি সাধন হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রাম এলাকায়ও চলমান বিদ্যুৎ লাইনের ক্ষতি সাধন হয়। আংশিক মেরামত করে বুধবার রাতে কয়েকবার চেষ্টা করেও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থায়ীভাবে চালু করা যায়নি। বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করার কিছুক্ষণের মধ্যে আবারও ট্রিপ করে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বিদ্যুৎ কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লাইন মেরামত করে সকাল দশটায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়। তিনি আরো বলেন তাদের রেকর্ড অনুযায়ী ১৪ থেকে ১৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ ছিল না। তবে বৃষ্টি আর বিরুপ আবহাওয়ার কারণে মেরামত কাজে বিঘœ ঘটছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগেই পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে জানান পবিসের ডিজিএম।
এদিকে কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন বলেন, রোপিত বোরোর, মৌসুমী ফল আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, আনারস, লেবু ও বিভিন্ন জাতের শাক সব্জির জন্য এ বৃষ্টিটা উপকারী।