হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রতনপুরে পরকীয়া প্রেমের বলি ট্রাক্টর চালক জুয়েল মিয়া (২৫) খুনের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে স্ত্রী-শ্বাশুড়িসহ ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। গতকাল শনিবার ভোরে সদর ওসি মোঃ নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে এসআই ইকবাল বাহার ও মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে রতনপুর গ্রামের মৃত ভিংরাজ মিয়ার কন্যা নিহতের স্ত্রী রূপালী আক্তার (১৯)। তার মা সরূপা খাতুন (৪৫) বাতাসর গ্রামের চাঁন মিয়ার পুত্র ছাবু মিয়া (২৫) ও মকবুল হোসেনের পুত্র নুর আলম (২০), মৃত নইম উল্লার পুত্র কবির আহমেদ (৪৫), আব্দুল বারীর পুত্র এনামুল হক (২৫) ও তার ভাই সাইদুল হক (২৬), নইম উল্লার পুত্র বাবুল (৪০) কে আটক করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত সুন্দরী স্ত্রী রূপালী আক্তার ও শ্বাশুড়ী সরূপা খাতুনসহ কয়েকজন খুনের ঘটনা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।
উল্লেখ্য, উপজেলার বাতাসর গ্রামের আব্দুল গণি মিয়ার পুত্র ট্রাক্টর চালক জুয়েল মিয়ার সাথে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে রতনপুর গ্রামের রূপালী বেগমের। এক পর্যায়ে পরিবারের অমতে এক বছর পূর্বে কোর্টে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের কিছুদিন পর জুয়েল বুঝতে পারে তার স্ত্রী পরকীয়া প্রেমে আসক্ত। প্রায় ১ মাস পূর্বে রাত ১০ টায় শ্বশুর বাড়ি গেলে স্ত্রী রূপালীকে বাতাসর গ্রামের লাল মিয়ার পুত্র পরকীয়া প্রেমিক এবাদুর রহমান নামে এক যুবকের সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত অবস্থায় দেখতে পায় এবং তাকে হাতে নাতে ধরে এলাকার মুরব্বীদেরকে জানানো হয়। পরে বিচারের মাধ্যমে রূপালীকে জুয়েল তালাক দেয়। এরপর হতে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন মোহরের টাকার জন্য তাকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এমনকি বিভিন্ন সময় হুমকিও দেয়।
নিহত জুয়েলের পিতা আব্দুল গণি জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যায় তার পুত্র জুয়েল কাজ শেষে বাড়ি ফিরে আসে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সে বাড়ি না ফিরলে তার মোবাইল ফোনে কল দেয়া হয়। কিন্তু জুয়েল ফোন রিসিভ করেনি। এক পর্যায়ে মোবাইল রিসিভ হলেও কেউ কোন কথা বলেনি। পরে পরিবারের লোকজন তাকে খুঁজতে থাকেন। রাত প্রায় ১১টায় রতনপুরস্থ শ্বশুর বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি ধানের জমিতে জুয়েলের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ডাক্তার দেবাশীষ রায় জানান, হাসপাতালে আনার পূর্বেই জুয়েল মারা গেছে। রাত ১২টায় সদর ওসিসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ পাওয়ার স্থান থেকে মহিলা ও পুরুষের দুই জোড় জুতা, কচস্টেপ, রক্তমাখা জামা-কাপড়, লাঠি, শাবল, দা, সিগারেটের প্যাকেট, গ্যাস লাইট ও মোবাইলসহ ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়। এরপর অভিযান চালিয়ে উল্লেখিতদেরকে আটক করা হয়। তবে লম্পট এবাদুর ও রূপালীর ভাই উজ্জল পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে পারলেই মূল কাহিনী উদঘাটন সম্ভব হবে। খোজঁ নিয়ে জানা যায়, জুয়েল মিয়া সোনালী ব্রিকস ফিল্ডের টাক্টর চালক ছিল। তার খুনের খবর চাওর হলে শত শত শ্রমিক তাকে এক নজর দেখার জন্য হাসপাতালে ছুটে যান। অনেকে জানান বিষয়টি পরকীয়া প্রেমের কারনে হয়েছে। বিষয়টি মেম্বার আব্দুর রউফ ও সামসু মিয়া শেষ করে দিয়েছে। কিন্তু এরপরও কেন তাকে খুন করা হল এর বিচার দাবী করা হয়।
গতকাল শনিবার লাশের ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের জিম্মায় হস্তান্তর করা হয়। এব্যাপারে সদর থানার ওসি মোঃ নাজিম উদ্দিন জানান, পরকীয়া প্রেমের কারণে এ ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। আজ রবিবার আটককৃতদেরকে কোর্টে প্রেরণ করে রিমান্ডে আনা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আরো রহস্য জানা যাবে। এ নৃশংস হত্যাকান্ড নিয়ে হবিগঞ্জে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।