সংলাপ-সমঝোতার অপেক্ষায় বিএনপি

51

1_126689কাজিরবাজার ডেস্ক :
আলোচনার মাধ্যমে দেশের বর্তমান চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সরকার ও বিএনপি জোটের ওপর দেশি-বিদেশি চাপ বাড়ছে। সরকার যদিও আলোচনায় আগ্রহী নয়, তবে বিএনপি সংলাপে আগ্রহী। সরকারকে সংলাপের টেবিলে আনতে দেশে বিদেশে তাদের তৎপরতাও চলছে। বিএনপি মনে করে, বিরাজমান পরিস্থিতিতে সংলাপে বসলে যৌক্তিক দাবিগুলো পাস কাটানোর সুযোগ পাবে না সরকার। সমঝোতায় আসতেই হবে। এতে অবসান হবে দুই মাসব্যাপী আন্দোলনের। গতকাল শুক্রবার বিএনপির মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদের দেয়া বিবৃতিতেও সংলাপ সমঝোতার কথা বলা হয়েছে। বিবৃতিতে তিনি বলেন, নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচনের লক্ষ্যে জাতিসংঘসহ সব পক্ষের অর্থবহ সংলাপের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোট গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। আমরা জাতীয় রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে আলোচনা, সংলাপ, সমঝোতায় বিশ্বাসী। সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই সরকারি মহলের শুভবুদ্ধির উদয় হবে বলে জনগণ আশা করে। এদিকে চলমান আন্দোলন সফলতার দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। তাদের মতে, দলের হাইকমান্ডকে নেতাকর্মী থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা, সিনিয়র নেতাদের কারাবন্দি, হামলা-মামলা, গুম-খুন, ক্রসফায়ারসহ নানা হুমকির মধ্যেও আন্দোলন দুই মাস পেরিয়েছে। রাজধানী এখন সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে দীর্ঘতম এ আন্দোলনে রাজপথে টিকে থাকাটাই সবচেয়ে বড় সফলতা বলে দাবি করছেন বিএনপি জোট নেতারা।
এরই মধ্যে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণে দেশের প্রধান দুই দলের শীর্ষ দুই নেত্রীকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। ওই চিঠিকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল। মহাসচিবের চিঠির জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন ঘিরে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য বর্তমান সরকারই দায়ী। এতে বলা হয়েছে, এ অবস্থায় দেশের মানুষ আরেকটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। আর জনগণের এ দাবি নিয়ে রাজপথে এসেছে বিএনপি। কিন্তু সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের গুম-খুন করছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু বাংলাদেশ নয়, কোনো দেশই বর্তমান সরকারের কাছে নিরাপত্তা পেতে পারে না। চিঠির জবাবে আরও বলা হয়েছে, বিএনপি এবং তাদের জোট বাংলাদেশের গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে, মানুষের মৌলিক অধিকার ফেরাতে জাতিসংঘের মতোই অত্যন্ত আগ্রহী। যে কোনো ধরনের সংলাপ বা আলোচনার জন্য তার দল আগে থেকেই প্রস্তুত। আলোচনার মাধ্যমে এদেশের রাজনীতি একটি সুষ্ঠু সমাধানের দিকে এগিয়ে যাবে, যাতে করে আইনের শাসন, মানুষের মৌলিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে।
রাজনৈতিক সঙ্কট ও চলমান অস্থিরতা দূর করতে মঙ্গলবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ ১৬ দেশের কূটনীতিকরা। সূত্র জানায়, বৈঠকে বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি তিনটি প্রস্তাব দেন তারা। এর একটিতে সম্মতি দিয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনটি প্রস্তাবের একটি হলো শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে সব দলের সমন্বয়ে জাতীয় সরকারের অধীন অন্তর্বতীকালীন নির্বাচন। দ্বিতীয় প্রস্তাব- রাষ্ট্রপতির অধীনে সব দলের সমন্বয়ে ২০১৬ সালের প্রথমদিকে জাতীয় সরকারের অধীন অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচন। তৃতীয়টি হলো জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দিয়ে সংলাপ শুরুর নিশ্চয়তা। জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কূটনীতিকদের দেয়া প্রস্তাবের মধ্যে দ্বিতীয়টিতে সম্মতি জানিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রপতির অধীনে সব দলের সমন্বয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচন- এ প্রস্তাব মেনে নেন। কূটনীতিকরা এ বার্তাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও পাঠিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এখনও কোনো জবাব দেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এমন পরিস্থিতিতে কূটনীতিকরা মনে করছেন প্রধানমন্ত্রীর ওপর এখন সব নির্ভর করছে। প্রধানমন্ত্রীই পারেন বাংলাদেশকে খাদের কিনার থেকে টেনে তুলতে।
চলমান আন্দোলন সফলতার দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নেতারা। তাদের মতে, বিএনপির শীর্ষ নেতাকে বিচ্ছিন্ন, সিনিয়র নেতাদের কারাবন্দি, হামলা-মামলা, গুম-খুন, ক্রসফায়ার, ট্রাক-বাসের চাপায় মেরে ফেলার হুমকির মধ্যেও আন্দোলন ৫৭ দিন পেরিয়ে গেছে; সারা দেশ থেকে ঢাকা বিচ্ছিন্ন। এতদিন রাজপথে টিকে থাকাটাই সবচেয়ে বড় সফলতা বলে জোটের নেতাদের দাবি।
দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে ৬ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধের ডাক দেন ২০ দলীয় জোটপ্রধান খালেদা জিয়া। ৫ মার্চ সে অবরোধের দুই মাস পেরিয়েছে। এ সময়ে থেমে থেমে দেয়া হয়েছে হরতাল, বিক্ষোভ, গণমিছিলের মতো কর্মসূচিও। দুই মাসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অর্জন কী- এ প্রশ্ন সর্বসাধারণ থেকে শুরু করে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও। প্রশ্ন থাকলেও হিসাব-নিকাশের দাঁড়ি টানতে এখনই রাজি নন বিএনপি নেতারা। আর যদি দাঁড়ি টানতেই হয়, তাহলে যোগ-বিয়োগের হিসাবে সাফল্যের পাল্লাটাই তাদের ভারি বলে দাবি দলটির। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, দুই মাস হয়ে গেল আন্দোলন চলছে। এ আন্দোলনের সবচেয়ে বড় অর্জন দীর্ঘসময় ধরে রাজপথে টিকে থাকা। আর বিশেষ অর্জন এর মধ্য দিয়ে দেশের জনগণকে তাদের দাবির প্রতি সজাগ করতে পারা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী আহমেদ আযম খান বলেন, ৬ জানুয়ারি থেকে বিএনপি জোটের প্রধান খালেদা জিয়ার ডাকে অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকা দলটি এখন আরও সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে। অবরোধের পাশাপাশি থেমে থেমে হরতাল দেয়া হয়েছে। ফলে বিএনপির আন্দোলন প্রতিনিয়ত আরও শক্ত অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। দলটির কূটনৈতিক দেখভাল করেন এমন এক নেতা বলেন, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে আলোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে কূটনৈতিক মহলে। দেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা সমাধানে সরকারের ওপর নানামুখী চাপ আসছে জাতিসংঘ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ, বিভিন্ন সংগঠন থেকে। এটিও চলমান আন্দোলনের সাফল্য। আন্দোলন না হলে এ বিষয়ে তারা তো কোনো কথা বলতেন না।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সংলাপের দরজা খোলা রেখেই ২০ দল আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তবে সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে নির্বাচনের ইস্যুতে। সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা ছাড়া কোনো সংলাপে বিএনপি বসবে না।