“এভাবে চলতে থাকলে ক’দিন পর না খেয়ে মরতে হবে” ॥ চলমান সংকট নিরসনে সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ চান দু’দলের সমঝোতা

157

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
“ঢানা হরতাল-অবরোধে দেশ পেছনের দিকে চলে যাচ্ছে। ২০ দলের নেতাকর্মীরা জনগণের উপর যে সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে এতে দেশের উন্নয়ণ বিঘিœত করছে তারা”। নির্বাচন দিলে জনসাধারণ যা চায় তা হবে। বর্তমানে আমার বড় সমস্যা, আগের মতো এখন আয় রোজগার করতে পারচ্ছি না। দেশের এ অবস্থাথাকায় চলতে থাকলে আর ক’দিন পর না খেয়ে মরতে হবে। পেটের কারণে এখন রাস্তায় আতংকের মধ্যে গাড়ী চালাচ্ছি। ঘরে বসে থাকলেতো আর কেউ ভাত দিবো না ভাই। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০ নাগাদ দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে এভাবে মন্তব্য করলেন দক্ষিণ সুরমার গালিমপুর গ্রামের ও হুমায়ুন রশীদ চত্বরের ৫৫ ঊর্ধ্ব  সিএনজি অটোরিক্সা চালক জমির আলী রবি।
দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটে সিলেটের সকল পেশার লোকজন উদ্বিগ্ন। সরকারের অনঢ় অবস্থান ও বিরোধী দলের টানা হরতাল অবরোধের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা দেশে স্বাভাবিক অবস্থা দেখতে চান, বসবাস করতে চান শান্তিপূর্ণভাবে।
সিলেট জেলা বারের আইনজীবী আলিম উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে সংলাপ আয়োজন করা হলে দেশে শান্তি ফিরে আসবে ও সংকট সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে।
পাথর ব্যবসায়ী শাব্বির আহমদের অভিমত, বিবদমান দুই দলকে আলোচনায় বসতে হবে। আলোচনার মাধ্যমেই সংকট সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে। ব্যবসায়ী মোঃ ফখর উদ্দিনও অনুরূপ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব।
জৈন্তাপুরের প্রভাষক মুজিবুর রহমান বলেন, সুশীল সমাজের উদ্যোগে রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশের চলমান সংকটের সমাধান সম্ভব। সিলেট বিজিবি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী শিক্ষক মোঃ সাইদুল হক সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, সমঝোতার মাধ্যমেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব। এতে চলমান সংকটের সমাধান হবে।
নগরীর দরগা মহল্লার টেইলারিং  ব্যবসায়ী মোঃ হুমায়ুন কবির খান বলেন, সরকারী দলের উদ্যোগে সংলাপ আয়োজনের মাধ্যমেই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠাতা সম্ভব। রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বকুল মনে করেন, কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া সংকটের সমাধান হবে না।
নগরীর হুমায়ুন রশিদ চত্বর সিএনজি অটোরিক্সা উপশাখার (গোয়ালাবাজার রোড) ম্যানেজার রুবেল আহমদ মিন্টু বলেন, দেশের এমন পরিস্থিতির কারণে জনগণের রাস্তায় নেমে আসা উচিত। দুই নেত্রী সংলাপের মাধ্যমে একটা সমঝোতায় চলে গেলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। দেশের মানুষ আতংক থেকে মুক্তি পাবে।
সিএনজি অটোরিক্সা চালক মোহাম্মদ আলী জানান, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য খুবই কষ্ট হচ্ছে। চোখের সামনে গাড়ি ভাংচুর ও আগুন দেয়া হচ্ছে। আতংকের মধ্যে পেটের জন্য গাড়ি চালাতে হয়। আগে এক হাজার টাকা দিনে রোজগার করতাম, এখন দুই শ টাকাও রোজগার করতে পারছিনা। আমরা শান্তি চাই। সকল দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেই শান্তি আসবে বলে আমি মনে করি।
জেলা কোর্ট লকাপের কনস্টেবল রনজিত বাড়ি যাওয়ার পথে জানান, পরিবার নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে বাড়ি যাচ্ছি। সড়কে ঝুঁকি নিয়েই হবিগঞ্জ যাচ্ছি। এছাড়া তো কোনো উপায় নেই।
লকাল কোষ্টার (গোয়ালাবাজার-শেরপুর) লাইনম্যান মোঃ বিরাই বক্স বলেন, এ রোডে ৮০টি যাত্রীবাহী বাস রয়েছে। হরতাল-অবরোধের কারণে এখন চলে ৩০/৩৫টি বাস। আজ যে বাস চলছে কালকে এগুলো বন্ধ থাকবে। এভাবে দেশের অবস্থা চলতে থাকলে গাড়ীগুলো রটেশনে চলবে। এ পর্যন্ত আমাদের রোডে সহিংসতায় ৭/৮টি গাড়ী ভাংচুর হয়। পুলিশ পাহারায় প্রতিদিন রাত ৮ টা পর্যন্ত চলে। এ রোডে এ পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এখন পেটের কারণে চালকরা আতংকে গাড়ী চালাচ্ছে।
হবিগঞ্জী বাসের লাইনম্যান কাজল জানান, হবিগঞ্জী রোডের ১২০টি গাড়ী আছে। এখন চলছে ৪০টি বাস। এ রোডে হবিগঞ্জ বাস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ বেশী করা হয়েছে। ৫টার পর গাড়ি বন্ধ রাখতে হয়।
সিলেট-ঢাকা রোডের গাড়ির লাইনম্যান মদন মিয়া জানান, ২৫০টি গাড়ি প্রতিদিন চলতো। এখন হরতাল-অবরোধে মিতালি, সুরমা, লাক্সারী বড় বাস, নিউ লাইন, আল-মোবাবারকা, আল-আরজু, ইউনিক, হানিফ, গ্রীণ লাইন, এনা ও শ্যামলী সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় দেড়শ’টি ঢাকা-সিলেটে রোডে চলে পুলিশ নিরাপত্তায়।
রিক্সা চালক মাখন মিয়া বলেন, আগের মতো রুজি নেই। এখন বেলা ১ টায় হইছে মাত্র ৩০ টাকা রুজি করছি। এভাবে সংসার চালাবো কি করে। বহু কষ্টে আছি ভাই।