কাজিরবাজার ডেস্ক :
গ্রেফতারি পরোয়ানা ঝুলছে মাথার উপর। এ অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আত্মসমর্পণ করবেন নাকি তাকে গ্রেফতার করা হবে- এনিয়ে দুশ্চিন্তায় দলটির নেতাকর্মীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
এরই মধ্যে রবিবার আদালত থেকে নির্দেশনা এল বেগম জিয়ার গুলশানের কার্যালয় তল্লাশির। নিজের বাসা ছেড়ে গত তিন জানুয়ারি থেকে তিনি এই কার্যালয়েই বসবাস করছেন।
ওদিকে এগিয়ে আসছে ৪ মার্চ। ওইদিন বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে দুটি দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্য নেয়ার কথা। তবে খালেদা জিয়ার মামলার আইনজীবীরা বলছেন, দুটি মামলাই জামিন যোগ্য। সে হিসেবে বেগম জিয়া সেদিন জামিন চাইতে আদালতে যেতেও পারেন।
বিএনপির দলীয় একটি সূত্র জানায়, বেগম জিয়া মানসিকভাবে শক্ত আছেন। তিনি গ্রেফতারকে ভয় করছেন না। তবে নির্ধারিত তারিখে তিনি আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইতে পারেন। কারণ, দুটি মামলাই জামিন যোগ্য। খালেদা জিয়া তার ঘনিষ্টদের কাছে আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘মিথ্যা’ মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। এখন আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসার জন্য গ্রেফতারি পরোয়ানাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু এসব করে তাকে আন্দোলনের পথ সরিয়ে আনা যাবে না।
জানতে চইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘পরিস্থিতির ওপর সবকিছু নির্ভর করবে। বিএনপি চেয়ারপারসন আদালতে উপস্থিত হয়েছে জামিন চাইবেন কিনা তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে শিগগির এটি চূড়ান্ত হবে।’
গ্রেফতারি পরোয়ানার পর কার্যালয় তল্লাশির নির্দেশনার ব্যাপারে জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সরকার সাজানো নাটক চিত্রায়নের চেষ্টা চলছে। যারা তল্লাশি করবেন তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু নিয়ে ভেতরে ঢুকে পরে গণমাধ্যমের সামনে বলবে এটা সেটা পাওয়া গেছে। তাই যখন তল্লাশি দল কার্যালয়ে ঢুকবে তার আগে তাদের দেহ তল্লাশি চালিয়ে ঢোকাতে হবে। এজন্য নিরপেক্ষ লোক দিয়ে তল্লাশি চলাতে হবে।’
সরকারি একাধিক সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়টি সরকারও গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। তাছাড়া তারাও তাকিয়ে আছেন ৪ মার্চের দিকে। ওদিন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের কথা রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এর আগে গ্রেফতারি পরোয়ানা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যকর করা হতে পারে। তবে গ্রেফতার করলেও খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়টি সাব জেল হিসেবে ঘোষণা করা হতে পারে। অথবা তাকে তার বাসায় নিয়ে সেখানেও রাখা হতে পারে।
খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারে পরোয়ানা দেয়ার পর থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে দলের আন্দোলনের হাল কে ধরবেন তা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়। যে কারণে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির রাতে বিচারপতি টি এইচ খানের বাসায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বৈঠক করেন। সেখানে তারা কীভাবে আইনের লড়াইয়ের মাধ্যমে বিএনপি নেত্রীর গ্রেফতার এড়ানো কিংবা জামিনের ব্যবস্থা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়।
বিএনপির একাধিক দলীয় সূত্র বলছে, দলের চেয়ারপারসন যে করেই হোক কার্যালয়ে থাকতে চাইছেন। তিনি ওখান থেকে বের হতে চাইছেন না। কারণ, লাগাতার আন্দোলনের যে পরিকল্পনা নিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট এগোচ্ছে তা সফল করতে হলে তাকে কার্যালয়েই অবস্থান করতে হবে। তিনি বাসায় চলে গেলে তাকে আর বের হতে দেয়া হবে না। তখন আন্দোলনের কোনো গতি থাকবে না, এমনটাও মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সাবেক সেনা প্রধান মাহবুবুর রহমান মনে করেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা, তল্লাশির নির্দেশনা এসবই বিএনপির আন্দোলনকে কোণঠাসা করে দিতে। তবে এসব করে আন্দোলনের গতি বাড়বে বৈ কমবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকার চাইছে যে করেই হোক বেগম জিয়াকে কার্যালয় থেকে বের করতে। কারণ, গত প্রায় দুইমাস কার্যালয়ে থেকে তিনি যেভাবে আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে গেছেন তা সরকারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের একাধিক মন্ত্রীও তাকে কার্যালয় ছাড়া করতে নানা হুমকি ধমকি দিয়েছে। আদতে এসব করে কোনো কাজ হবে না।’