পিন্টু দেবনাথ, কমলগঞ্জ থেকে :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন চা বাগান থেকে ব্যাপকহারে ছায়াবৃক্ষ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। কতিপয় কর্মকর্তা, কর্মচারীরা চা বাগানের বিভিন্ন টিলা থেকে ছায়াবৃক্ষ হিসাবে প্রতিনিয়ত মূল্যবান গাছ গাছালি সাবাড় করছেন। চাতলাপুর চা বাগান থেকে ট্রলি বোঝাই কাঠ পাচারের সময় শনিবার দুপুরে বিজিবি ৪০ দশমিক ৫৬ ঘনফুট বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ আটক করেছে। ফলে এভাবে প্রতিনিয়ত ছায়াবৃক্ষ চুরি হওয়ায় চায়ের উৎপাদন হ্রাস পেয়ে শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনছে। সরেজমিন কয়েকটি চা বাগান ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ডানকান ব্রাদার্সের চাতলাপুর, শমসেরনগর, আলীনগর ও এর ফাঁড়ি চা বাগান এবং (ন্যাশনাল টি কোম্পানী) এনটিসির কুরমা, চাম্পারায় চা বাগান থেকে ব্যাপকহারে ছায়াবৃক্ষ চুরি হচ্ছে। সীমান্তবর্তী চাতলাপুর চা বাগানের সবকটি সেকশন থেকে গাছ কেটে নেয়ার পর সেকশন সমূহ বিরান ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। বাগানের শ্রমিকরা বলেন, চাতলাপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপকসহ আরও কিছু কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারী যোগসাজষে গাছ চুরির সাথে দীর্ঘদিন ধরে সম্পৃক্ত রয়েছেন। চা বাগান থেকে গাছ কেটে বাগানের ট্রাক্টরযোগে পার্শ্ববর্তী শমসেরনগর, নসিরগঞ্জ ও পীরেরবাজারে স’মিলে গাছ পাঠানোর পর সেগুলো বিক্রি করেন। এই সব স’মিল সমূহে চাতলাপুর চা বাগানের গাছ বেশী চিরানো হয় বলে তারা জানান। শ্রমিকরা বলেন, চাতলাপুর বাগান ব্যবস্থাপক ইতিপূর্বে বাগানের ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, সীমান্তবর্তী চাতলাপুর চা বাগানের সেকশন থেকে গাছ কেটে ট্রলিযোগে পাচারের সময় বিজিবির একটি দল ৭ টুকরোয় ৪০ দশমিক ৫৬ ঘনফুট বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ আটক করে। বিজিবি চাতলাপুর ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার দাইমুল ইসলাম কাঠ আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চা বাগান এলাকা থেকে আটককৃত কাঠ বোঝাই ট্রলি বিজিবি ক্যাম্পে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই এলাকার বিভিন্ন চা বাগান থেকে এভাবেই প্রতিনিয়ত কাঠ চুরি হচ্ছে। এ ব্যাপারে চাতলাপুর চা বাগান ব্যবস্থাপক ইফতেখার এনাম এর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিক, যা ইচ্ছা তা লিখেন। আমার বক্তব্য নিয়ে কি করবেন।’
এদিকে শমসেরনগর ও এর ফাঁড়ি দেওছড়া, আলীনগর ও এর ফাঁড়ি কামারছড়া, সুনছড়া চা বাগান থেকে অব্যাহতহারে গাছ চুরির ফলে বৃক্ষ শূন্য হয়ে পড়ছে চা বাগান সমূহ। ছায়াবৃক্ষ কমে যাওয়ায় বিনষ্ট হচ্ছে চা গাছ। এদিকে এনটিসি’র কুরমা, চাম্পারায় চা বাগান থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল চা বাগান ম্যানেজমেন্ট ও শ্রমিকদের জিম্মি করে নিয়মিতহারে গাছ চুরি করে নিচ্ছেন। ডানকান ব্রাদার্স শমসেরনগরের ফাঁড়ি দেওছড়া ডিভিশনের ১৬টি সেকশনের সবকটি সেকশন থেকে গাছ হরিলুট চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চা বাগানের একজন শ্রমিক সর্দার দেওছড়া ডিভিশনের গত দুই বছরের চিত্র তুলে ধরে বলেন, দিনের বেলা গাছ চুরি হয়ে যাচ্ছে। বাগানের ১৬টি সেকশনের প্রতিটি সেকশন থেকে গত কয়েক বছরে কয়েক সহস্রাধিক ছায়াবৃক্ষ চুরি হয়েছে। এভাবে অব্যাহতহারে ছায়াবৃক্ষ চুরির ফলে চায়ের উৎপাদন হ্রাসের আশঙ্কা রয়েছে। চাতলাপুর চা বাগানের সাবেক পঞ্চায়েত সভাপতি সাধন বাউরী, ইউপি সদস্য সিতারীম বীন জানান, চাতলাপুর চা বাগান, শমসেরনগর, আলীনগর থেকে প্রতি রাতে ট্রাকযোগে গাছ পাচারের ঘটনা ঘটছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, চা বাগান সমুহে বৃক্ষ নিধন বন্ধ না হলে সম্পূর্ণ চা শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। গাছ চুরির বিষয়ে ম্যানেজমেন্ট যথাযথ ভূমিকা না নেয়ায় চুরি বাড়ছে। কিছু সংখ্যক কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বাগানের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে জানানো উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। সংশ্লিষ্টদের মতে, চা বাগান থেকে ব্যাপকহারে শেডট্রি পাচার হওয়ায় চা শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, পরিবেশ বিপর্যয়ের সন্মুখীন ও উৎপাদন হ্রাস এবং শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকরা বেকার হচ্ছে।