স্টাফ রিপোর্টার :
৭২ ঘণ্টা হরতালের দ্বিতীয় দিন সিলেট নগরী ও দক্ষিণ সুরমায় পুলিশের সাথে নেতাকর্মীদের মিছিলে ধাওয়া, গাড়ী ভাংচুর ও রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে হরতাল পালিত হয়। দ্বিতীয় দিনের হরতালে বিচ্ছিন্ন দু’একটি ঘটনা ছাড়া কোথাও বড় ধরনের কোন সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।
গতকাল হরতালে নগরীতে জনজীবন ছিল স্বাভাবিক। হরতাল উপেক্ষা করে অধিকাংশ দোকানপাট ও বিপণীবিতান খোলা রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। সকাল থেকে দিনভর নগরীতে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। নগরীর আঞ্চলিক সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল করলেও আন্ত:জেলা বাস চলাচল বন্ধ ছিল। সিলেট থেকে সব ক’টি ট্রেন ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, সব ধরনের নাশকতা এড়াতে সিলেট নগরীজুড়ে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ ও র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে গাড়িযোগে টহল দিচ্ছিল তারা। মাঠে ছিল বিজিবিও। এছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতেও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার দুপুর ২ টার দিকে নগরীর মানিকপীর রোডে জড়ো হয়ে স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। এমন সময় কোতোয়ালী থানার এসি সাজ্জাদ এর নেতৃত্বে পুলিশ এসে হঠাৎ তাদের ধাওয়া করে। এ সময় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন গলির ভেতর ঢুকে যায়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় পুলিশ একজন কে আটক করে। পরে পুলিশ মিছিলের সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা না পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া। সকাল ১০টায় মিছিল বের মদন মোহন কলেজ ছাত্রদল। মিছিল শেষে রিকাবীবাজার ভিআইপি পয়েন্ট মোড়ে রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে পিকেটিং ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছে নেতাকর্মীরা। গতকাল দুপুর সোয়া ১টার দিকে ২০ দলীয় জোটের চলমান অবরোধ-হরতালের সমর্থনে বরইকান্দি এলাকায় মিছিল বের করে ছাত্রদল। জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ মিছিল থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকা মেট্রো-গ, ১৭-৪২৫৬ নম্বরের একটি কার গাড়ি ও অপর একটি সিএনজি অটোরিক্সা ভাংচুর করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছুলে নেতাকর্মীরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। হরতালের সমর্থনে বেলা ১টায় নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকায় জেলা ছাত্রদল নেতা লিটন আহমদের নেতৃত্বে একটি মিছিল করে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। এদিকে,গত রবিবার মধ্যরাতে নগরীর নবাব রোড, ঘাষিটুলার বিভিন্ন বাসাবড়িতে রাতভর অভিযান করেছে যৌথবাহিনী। ঐসব এলাকা থেকে স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা শামীম আহমদ লোকমানকে আটক করার খবর পাওয়া গেছে। এ সময় ১০ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক মিজানুর রহমান নিজাম, টিটু আলতাফ হোসেন টিটু, বাসায় ব্যাপক তল্লাশি চালায় বলে তাদের পারিবারিক সূত্র থেকে জানা গেছে। এ সময় ঘরে আসবাবপত্র ভাংচুর ও মালামাল ওলটপালট করার অভিযোগ করেছে পরিবারের সদস্যরা। অভিযানের সময় পরিবারের সদস্যদের সাথেও খারাপ আচরণ করে পুলিশ। আলতাব হোসেন টিটুর বাসার সোকেশের কাঁচও ভেঙ্গে ফেলা হয়।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) রহমত উল্লাহ জানান, নাশকতা এড়াতে অন্যান্য দিনের ন্যায় নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে চৌকি বসিয়ে পুলিশ তল্লাশি চলছে। তিনি আরো জানান, হরতালে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটের সদস্যরা টহল জোরদার ছিল। তাছাড়া গতকাল রাত থেকে সোমবার হরতালের দ্বিতীয় দিনে মহানগর জামায়াত নেতা এডভোকেট মনিরুল ইসলামসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।