কাজিরবাজার ডেস্ক :
সহিংসতা, নাশকতা ও টানা এক মাস ধরে বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ চললেও জরুরি অবস্থার আশঙ্কা বাতিল করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি নাশকতা নিরসনে নতুন আইন করার কথাও নাকচ করে দেন।
তিনি বলেন, অনেককেই বলতে দেখছি- হয়ে গেল, এসো গেল ইমার্জেন্সি। ইমার্জেন্সি লাগবে কেন? আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা আছে। কিভাবে এ সন্ত্রাস দমানো যায় সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। জনগণকে সাথে নিয়েই আমরা এ অবস্থার মোকাবেলা করতে পারবো ইনশাল্লাহ।
ইমার্জেন্সির স্বপ্ন দেখে লাভ হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অলীক-অলৌকিক স্বপ্ন যারা দেখছে, যারা দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে চায়, আমাদের রক্ত থাকতে তা হতে দেবো না।
তিনি আরও বলেন, জরুরি অবস্থা জারি করার মতো পরিবেশ কেউ সৃষ্টি করতে পারেনি। কেউ যদি করতে চায় জনগণই রুখে দেবে।
গতকাল বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, সানজিদা খানম ও আব্দুর রহমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
অতীতের জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইয়াজ উদ্দিন জরুরি অবস্থা জারি করতে পেরেছিলেন, কারণ তিনি একই সাথে সরকার প্রধান ও রাষ্ট্র প্রধান ছিলেন। এক্সিকিউটিভ (নির্বাহী) ক্ষমতায় তিনি জরুরি অবস্থা জারি করতে পেরেছিলেন। এখন যদি জরুরি অবস্থা জারি করতে হয় তাহলে, প্রধানমন্ত্রীকে লিখে দিতে হবে তারপর রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে কিছু লোক আছেন, যারা দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলে তাদের ভালো লাগে না। অসাংবিধানিক পন্থায় কাউকে আনা যায় কি না সেজন্য ব্যস্ত থাকেন।
তিনি বলেন, সংবিধানের ৭ম অনুচ্ছেদের ‘খ’ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে যে, কেউ যদি সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে তাহলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। আবার এখানে সর্বোচ্চ শাস্তির (ক্যাপিট্যাল পানিশমেন্ট) ব্যবস্থা আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার হত্যার পর এদেশে বার বার ক্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৮/১৯ বার ক্যু হয়েছে। বহু মানুষ মারা গেছেন। আমরা চাই না দেশে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটুক। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়েই এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারবো।
তিনি বলেন, যারা বোমা মারছে, যারা এর অর্থ যোগানদাতা, যারা হুকুমদাতা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থ কোথা থেকে আসছে, কারা দিচ্ছে সেটা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
‘প্রকাশ্যে পেট্রোল, গান পাউডার বিক্রি করতে দেওয়া হবে না নির্দেশ দিয়েছি। আর গান পাউডার কোথা থেকে আসছে খুঁজে বের করা হচ্ছে। আর বোতাল কোথা থেকে আসে তাও খুঁজে বের করা হচ্ছে’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া নিজের ভুলের খেসারত নিজে দিচ্ছে না। দিচ্ছেন দেশের মানুষ। তিনি মানসিক বিকৃতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। খালেদা জিয়া উন্মাদ হয়ে গেছেন।
আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে লিপ্ত, যারা ধরা পড়ছে, তারা কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে আবার বিপুল উৎসাহে নেমে পড়ছে। এজন্য আইনজীবীদের সর্তক থাকতে হবে। যাদের কোর্টে সোর্পদ করা হচ্ছে, তারা জামিন যেন না পায়। তাদের কর্মকাণ্ডের গভীরতা বিচার করেই ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
এ সময় তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত যেটা করছে এটাতো মেনে নেওয়া যায় না। সাধারণ মানুষের ওপর বোমা মারবে, এ ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করা যায় না। আসলে বিএনপি-জামায়াত কোনো রাজনীতি করছে না। তারা সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদী তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা সন্ত্রাস জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী।
তিনি বলেন, তারা সাধারণ মানুষকে প্রতিপক্ষ করছে। এসব দমনে নতুন আইন প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। যে আইন আছে তার যথাযথ প্রয়োগ হলেই হবে।
চলমান সংহিতা ও নাশকতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনার পর কিছু কিছু লোক আছে রাজনীতিকেই গালি দিচ্ছে। কিন্তু এটা কি রাজনীতি? তারা কি রাজনীতি করছে? আমরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে আছি। বিএনপি নেত্রী মানুষের লাশের উপর দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চান।
আব্দুর রহমানের অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করেছে। শুধু বর্জনই করেনি। ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করছে। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের পর এক বছর ভালোভাবেই চলছিলো। দেশের মানুষের মধ্যে যখন আস্থা স্বস্তি ফিরে এসেছে, দেশে আজ যখন এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষ যখন উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখছে। তখন কোনো কথা-বার্তা নাই, গত ৫ জানুয়ারি থেকে আবার ধ্বংসাত্মত কর্মকাণ্ড শুরু করলো।
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি বিএনপি সমাবেশ করতে না দেওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ জানুয়ারির কর্মসূচিতে জানা যায়, তিনি (খালেদা জিয়া) সভা করবেন, সেখানে বসে থাকবেন, আর উঠবেন না। ওখান থেকে সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আর উঠবেন না। আমাদের সেই ৫ মে’র কথা মনে আছে। সেই ৫ মে কী ঘটনা ঘটেছিল, কোনআন শরিফ পুড়িয়েছিল, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করেছিল। সেই আহ্বানও খালেদা জিয়াই দিয়েছিলেন। তিনি (খালেদা) ৪ মে সভা করে এ আহ্বান করেন। ঢাকাবাসীকে হেফাজতের সঙ্গে নেমে আসতে বলেছিলেন। ঠিক একই ধরনের ঘটনার পরিকল্পনা ছিলো গত ৫ জানুয়ারি। এ সম্পর্ক আইন শৃঙ্খলা-বাহিনীর কাছে তথ্য ছিলো। তাই তাদের সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ঠিক সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি তা নয়, অন্য জায়গায় করতে বলা হয়েছিল।