মোঃ শাহজাহান মিয়া, জগন্নাথপুর থেকে :
জগন্নাথপুরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি মার্কেটের ৫টি দোকান ও দোকানগুলোর মালামাল সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সেই সাথে অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন এক ব্যবসায়ী। ঘটনাটি ঘটেছে জগন্নাথপুর পৌর শহরের হাসপাতাল পয়েন্টে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাসপাতাল পয়েন্ট বাজারে স্থানীয় হবিবপুর আশিঘর গ্রামের বাসিন্দা সুহেল আমিনের এমদাদিয়া মার্কেট নামের একটি আধাপাকা টিনসেড মার্কেট রয়েছে। মার্কেটে সুহেল আমিনের অত্র অঞ্চলের নামীদামী এমদাদিয়া ফার্ম্মেসি, এমদাদিয়া স্টোর, নজরুল ইসলামের নজরুল ব্রাদার্স, ছায়াদ মিয়ার ছায়াদ এন্ড ব্রাদার্স ও আব্দুল হাকিমের ফ্লেক্সিলোডের দোকানসহ মোট ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গতকাল রবিবার ভোররাত সাড়ে ৪ টার দিকে হঠাৎ মার্কেটে আগুন দেখতে পান বাজারের নৈশপ্রহরী কুতুব মিয়া। এ সময় কুতুব মিয়া চিৎকার করে বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীসহ এলাকার লোকজনকে আগুনের খবরটি জানাতে থাকেন। লোকজন জড়ো হতে-হতে আগুনটি মার্কেটের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তে আগুনটি ভয়াবহ রুপ ধারন করে। আগুনের লেলিহাল শিখা দাউ-দাউ করে জ্বলে উঠে। আগুনের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায়। আগুনটি নেভানোর জন্য লোকজন প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকেন। এ সময় উপস্থিত লোকজন জানতে পারেন মার্কেটের ফ্লেক্সিলোডের দোকানের ভেতরে দোকানের মালিক আব্দুল হাকিম ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছেন। তাকে অনেক ডাকাডাকি করার পরও সে গভীর ঘুমে থাকায় দরজা খোলেনি। দোকানের সাটারের দরজাটি ভেতর থেকে লাগানো থাকায় লোকজন প্রথমে তাকে উদ্ধার করতে পারেননি। এ সময় সাঁটারের দরজাটি ভাঙার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তারা। অবশেষে দোকানের পিছনের দিকে থাকা জানালার গ্রীল ভেঙে লোকজন গিয়ে আংশিক অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন। দীর্ঘ দেড়ঘন্টা ব্যাপী প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন উপস্থিত জনতা। ততক্ষনে অগ্নিকাণ্ডে মার্কেটের ৫ টি দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। নিজেদের চোখের সামনে তাদের সারা জীবনের অর্জিত সম্পদ পুড়ে যাচ্ছে দেখে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা হতবাক হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অগ্নিকাণ্ডে সুহেল আমিনের ১ কোটি, নজরুল ইসলামের ২০ লক্ষ, ছায়াদ মিয়ার ৩০ লক্ষ ও আহত আব্দুল হাকিমের ১০ লক্ষসহ প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এছাড়া অগ্নিকাণ্ডে প্রতিবেশি যুক্তরাজ্য প্রবাসী জিলু মিয়ার দ্বিতীয়তলা মার্কেটের আংশিক ক্ষতি হয়। এই মার্কেটের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী মাসুক মিয়ার সুকৌশলে মার্কেটটি রক্ষা হয়। অগ্নিকাণ্ড চলাকালীন সময়ে জগন্নাথপুরে বিদ্যুৎ ছিল না। এ সময় মাসুক মিয়া একটি বড় জেনারেটর চালিয়ে পাইপের মাধ্যমে পানি দিয়ে আগুনের তীব্্রতা কমাতে সক্ষম হলে তাদের মার্কেটটি রক্ষা পায়। তবে কিভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, তা জানা সম্ভব হয়নি। এদিকে-অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে সিলেটের গোয়ালাবাজার থেকে একটি ও সুনামগঞ্জ থেকে আরেকটি দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে আসেন। ততক্ষনে আগুন নিয়ন্ত্রনে চলে আসে। এ সময় জগন্নাথপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সরজমিনে এলাকার সমবেত লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, একটি মাত্র ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের জন্য জগন্নাথপুরে প্রতি বছর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে। তা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি দেখছেন না? জগন্নাথপুরে ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন থাকলে অগ্নিকাণ্ডে এতো ক্ষতি হতো না। তাই জরুরী ভিত্তিতে জগন্নাথপুরে একটি ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন স্থাপন ও এই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সরকারিভাবে সহায়তা প্রদানের দাবি জানান এলাকাবাসী। যদিও জগন্নাথপুর পৌর এলাকার মমিনপুর হাওরে দীর্ঘ প্রায় ৪/৫ বছর ধরে ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের কাজ চলছে। তবে এখনো চালু হয়নি।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদেরকে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে তাদের তালিকা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সরকারি বরাদ্দ আসলেই আমরা তাদেরকে সহায়তা প্রদান করবো।