কাজিরবাজার ডেস্ক :
গোনাহ মাফ এবং শান্তি ও ঐক্য কামনায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার ৫০তম আসর। তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি ও ভারতের মাওলানা মোঃ সা’দের পরিচালনায় গতকাল রবিবার বেলা ১১টা ২২ মিনিটে টঙ্গীর তুরাগতীরে শুরু হয় ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের এ মোনাজাত। ৩২ মিনিটের মোনাজাতে শরিক হন দেশ-বিদেশের তাবলিগ-অনুসারীসহ কয়েক লাখ সাধারণ মুসল্লি। এতে মহান আল্লাহ পাকের দরবারে দুই হাত তুলে চোখের পানি ফেলে দোয়া করেন সবাই। এ সময় ‘আমিন আমিন’ ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে টঙ্গীর তুরাগতীর ও আশপাশের এলাকা। মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো তাবলিগ। শুক্রবার শুরু হয় তিন দিনব্যাপী ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এর আগে ৯ জানুয়ারি প্রথম পর্বের ইজতেমা শুরু হয়। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয় ১১ জানুয়ারি। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ভোর থেকেই টঙ্গীর দিকে ছিল মানুষের ঢল। বিএনপি জোটের অবরোধ-আতঙ্কের পাশাপাশি প্রচ- শীত ও আগের দিনের বৃষ্টির ভোগান্তি উপেক্ষা করেই তুরাগতীরের ইজতেমা ময়দানে সমবেত হন লাখ লাখ মুসল্লি। ফজরের নামাজের পর থেকে বিশেষ ট্রেন, বাসসহ বিভিন্নভাবে এসে ইজতেমা মাঠ ও তার আশপাশে অবস্থান নেন অনেকে। মোনাজাত উপলক্ষে শনিবার মধ্যরাত থেকেই টঙ্গী থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও আশপাশের সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সে কারণে দীর্ঘ পথ হেঁটে হেঁটেই ইজতেমাস্থলে পৌঁছেন অনেক মহিলা ও নানা বয়সী মানুষ।
মোনাজাত শুরু হওয়ার অনেক আগেই ১৬০ একরের ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে টঙ্গী শহর ও আশপাশের এলাকাও জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মাঠে পৌঁছতে না পেরে চারপাশের রাস্তা ও অলিগলি, বাসাবাড়ি, কলকারখানা, অফিস, দোকানের ছাদ এবং তুরাগ নদীতে নৌকায় বসে আখেরি মোনাজাতে শরিক হন লাখ লাখ মানুষ। এ উপলক্ষে আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিসে ছুটি ছিল। অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কাজকর্ম বন্ধ রেখে বা অঘোষিত ছুটি নিয়ে যোগ দেন মোনাজাতে।
টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর জেলা প্রশাসক নূরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার হারুন-অর রশিদসহ সরকারি-বেসরকারি অনেক কর্মকর্তা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে মোনাজাতে যোগ দেন।
এছাড়া রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ টিভিতে সম্প্রচারিত মোনাজাতেও শরিক হন দেশ-বিদেশের অনেক মুসলমান।
মোনাজাতে মাওলানা সা’দ কান্নাজড়িত কণ্ঠে উর্দু ও আরবি ভাষায় প্রার্থনা করে বলেন, হে আল্লাহ তুমি আমাদের সব গোনাহ মাফ করে দাও। তুমি তো ক্ষমাকারী। সারা দুনিয়ার মুসলমানদের কবুল কর। মুসলমানদের হেদায়েত নসিব কর। সারা বিশ্বে শান্তি বর্ষিত কর। তাবলিগওয়ালাদের কবুল কর। মুসলমানদের হেফাজত কর। ইজতেমা আয়োজনকারীদের কবুল কর। তাদের বেহেশত নসিব কর। সবাইকে ঈমানদার বানিয়ে দাও। এ আল্লাহ ইসলামের দাওয়াতকারীদের কবুল কর। আমাদের সবাইকে মাফ করে দাও। এ সময় সবাই ‘আমিন আমিন’ বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মুসল্লিরা। এর আগে ফজরের নামাজের পর থেকে হেদায়েতি বয়ান করেন মাওলানা সা’দ।