কুলাউড়া রেলওয়ের পরিত্যক্ত কোয়ার্টারগুলোয় বসতি গেড়েছে অপরাধীরা

274

শাহ আলম শামীম, কুলাউড়া থেকে :
কুলাউড়া রেলওয়ের পরিত্যক্ত কোয়ার্টারগুলোয় বসতি গেড়েছে অপরাধীরা। এসব কোয়ার্টারগুলোকে ঘিরে সংঘঠিত হয় নানা অপকর্ম। বহিরাগতরা এসব পরিত্যক্ত বাসা দখলে নিয়ে এসব অপকর্ম পরিচালিত করছে। রেলওয়ে থানা, কুলাউড়া থানা এবং উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি অবগত হলেও রহস্যময় কারণে কোন প্রতিকার নিচ্ছে না।
কুলাউড়ার রেলওয়ে জংশন ষ্টেশনের বিশাল এলাকাজুড়ে আবাসিক এলাকা। এখানে রেলওয়ে স্টাফ কোয়ার্টার ১৫০টি। এর মধ্যে ৬০টি বেদখল হয়ে গেছে। এছাড়া পরিত্যক্ত ঘোষিত আরও শতাধিক বাসা দখলে নিয়েছে বহিরাগতরা। বেদখল হওয়া বাসাগুলোয় অবৈধ বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ রয়েছে। স্থানীয় ও রেলওয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এলাকার ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ভাসমান লোকেদের দেয়া হয়েছে ভাড়া। ভাড়ার মোটা অংক যায় রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার পকেটে। ভাড়া করা এসব বাসায় চলে মদ, গাঁজা, হেরোইন ও ফেনসিডিলসহ নানান মাদক ব্যবসা। সন্ধ্যার পর বসে জুয়া, নারীঘটিত নানা অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যকলাপ। কোয়ার্টাগেুলোতে এসব অসামাজিক কার্যকলাপের কারণে বিপথগামী হচ্ছে এলাকার অনেক স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ যুবসমাজ। স্থানীয় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ও উৎকন্ঠায় থাকতে হচ্ছে। ষ্টেশনের উত্তর ও দক্ষিণ কলোনি এলাকায় সন্ধ্যা নামলে মানুষ নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে না। মানুষের কাছে রেলওয়ের কলোনি এক বিপদজনক এলাকা হিসেবে পরিচিত।
গত ১০ জানুয়ারি রেলওয়ের দক্ষিণ কলোনির বাসিন্দারা ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পূর্ত) বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। স্থানীয়দের মতে ওই কলোনির পরিত্যক্ত ঘরে কমপক্ষে ২০ বছর থেকে বসবাস করছে রোকেয়া নামক এক মহিলা। স্থানীয়রা ওই বাসাকে একটি পতিতালয় বলে জানান। এছাড়া জুয়ার আসরের সর্দার লিয়াকত। একাধিক বাসায় মাদক সেবন ও বিক্রি চলে প্রকাশ্যে।
স্থানীয় ও রেলওয়ে প্রশাসনের বিষয়টি জানা থাকলেও রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে। তারা বেদখল হওয়া বাসাগুলো পুনরুদ্ধার করার কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না।
রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা বন্দোবস্ত এনে শর্ত ভঙ্গ করে পাকা দালান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান করতে চাইলেও নানা কারণে তা ব্যর্থ হচ্ছে।
কুলাউড়া রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গির হোসেন জানান, রেলওয়ে কলোনির অসামাজিক কার্যকলাপ বা আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখবে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। তারা যদি কোন সহযোগিতা চায় তবে আমরা সহযোগিতা করবো।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য জানান, বেশির ভাগ কোয়ার্টার নষ্ট হওয়ার কারণে রেলওয়ের কোন কর্মকর্তা কর্মচারীরা এসব কোয়ার্টারে থাকে না। আর এ কারণেই বাইরের লোকেরা এসব কোয়ার্টার দখল করে বসবাস করছে। বেদখল হওয়া বাসাগুলোর কার্যকলাপ আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দক্ষিণ কলোনির বাসিন্দাদের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি দেখে রেলওয়ের সিলেট অফিস থেকে। বাসা ভাড়া আত্মসাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, লোকেরা অনেক কিছু বলতে পারে, এটা তাদের স্বাধীনতা। আমি বাসা ভাড়া আত্মসাৎ করার প্রশ্নই আসে না। গত ডিসেম্বর মাসে রেলওয়ের এস্টেট ডিপার্টমেন্ট অবৈধ বাসা ও জায়গা জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযানের পরিকল্পনা করে। কিন্তু শেষতক অর্থাভাবের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।