শাহ আলম শামীম, কুলাউড়া থেকে :
কুলাউড়া উপজেলার মনু ও টিলাগাঁও ষ্টেশনের মধ্যবর্তীস্থানে ৩১৫ কিলোমিটারের ৬ নম্বর এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর রাত (আনুমানিক সাড়ে ৩টায়) দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্রগ্রামগামী আন্ত:নগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন। ট্রেনের ৬টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে।দুর্ঘটনার পর থেকে সারাদেশের সাথে সিলেটের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ঘটনার কারণ অনুসন্থানে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন ষ্টেশন মাস্টার মির্জা মোঃ শামসুল ইসলাম জানান, সিলেট থেকে রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য ছেড়ে আসে। মাইজগাঁও ষ্টেশনে আসার পর ট্রেনটিতে যান্ত্রিক ত্র“টি দেখা দেয়। ত্র“টি সারিয়ে ৩ টায় কুলাউড়া ষ্টেশনে পৌঁছায়। কুলাউড়া ষ্টেশন ছেড়ে যাওয়ার পর রাত আনুমানিক সাড়ে ৩ টায় টিলাগাঁও ও মনু রেলওয়ে ষ্টেশনের মাঝখানে দুর্ঘটনা কবলিত হয়। এতে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৬টি বগি লাইনচ্যুত হয়। বগিগুলো হলো ৮৩০৯, ৮৪৯৭, ৯১৭১, ৭০১১, ২১৪৩ ও ৯৩৯৬। তবে দুটি বগি পার্শ্ববর্তী জমিতে ছিটকে পড়ে। এতে কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে কুলাউড়া ও মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহত ট্রেনযাত্রী শাহাদাত হোসেন শুভ, সেলিনা খাতুন, রওসনা খাতুন, জয়নাল আবেদীন ও ট্রেনে কর্তব্যরত রেলওয়ে জিআরপি পুলিশ বোরহান জানান, ট্রেনটি মাইজগাঁও ষ্টেশনে আসার পর ইঞ্জিনের পেছনের বগিতে যান্ত্রিক ত্র“টি দেখা দেয়। মাইজগাঁও ষ্টেশনে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ট্রেনটি আটকে মেরামত করা হয়। ট্রেনের দুটি বগির মধ্যবর্তী সংযোগস্থানে তার দিয়ে বেধে সচল করে চালানো হয়। মাইজগাঁও ষ্টেশন ছাড়ার পর থেকেই বগির যাত্রীরা আতঙ্কে ছিলেন। আর কুলাউড়া ষ্টেশন ছাড়ার পর বেশিরভাগ যাত্রী ইঞ্জিনের পেছনের বগি থেকে সরে যান। দুর্ঘটনার আগে বিকট শব্দ করে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। ভয়ানক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার কোন কল্পনাই করেননি আহত যাত্রীরা। দুর্ঘটনার ট্রেনে অবস্থানরত বিভিন্ন গন্তব্যে কমপক্ষে ৫ শতাধিক যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হন।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সিলেট, মৌলভীবাজার ও কুলাউড়া ৩টি ইউনিট, কুলাউড়া থানা পুলিশ, রেলওয়ে জিআরপি থানা পুলিশ দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে। জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান, কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, পুলিশ সুপার মো. তোফায়েল আহমদ, সহকারী পুলিশ সুপার জুনায়েদ আলম সরকার, অফিসার ইনচার্জ অমল কুমার ধর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ জানুয়ারি) সকাল ৭টায় কুলাউড়া থেকে একটি রিলিফ ট্রেন এবং আখাউড়া থেকে অপর একটি রিলিফ ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে যায় এবং ট্রেনটি উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। রাত আনুমানিক ৭টা পর্যন্ত ট্রেন উদ্ধার কাজ শেষ হবে ও সারাদেশের সাথে রেললাইন চালু হতে পারে বলে রেলওয়ে সূত্র দাবি করে।
এদিকে দুর্ঘটনার পর শমসেরনগর ও শ্রীমঙ্গলে ষ্টেশনেট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন আটকা পড়েছে। অপরদিকে কুলাউড়া ষ্টেশনে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা কয়েকটি ট্রেন আটকা পড়ে আছে।
ট্রেনের চালক কবির দুর্ঘটনার জন্য ট্রেন লাইনে কোন সমস্যা ছিলো বলে তিনি মনে করেন না। কুলাউড়া জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ট্রেনটি যান্ত্রিক ত্র“টির কারণেই দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে। কোন নাশকতার ঘটনা ঘটেনি।
ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (মেকানিক) শ্রীপদ দত্ত ও ঊর্ধ্বতন সহকারী প্রকৌশলী (পথ) এরফানুর রহমান দুর্ঘটনার জন্য নাশকতার আশঙ্কা করছেন। দুর্ঘটনায় রেললাইনের ২০ ফুট জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
খবর পেয়ে বিভাগীয় রেলওয়ে কর্মকর্তা পূর্বাঞ্চল (ডিআরএম) কামরুল হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি ঘটনাটি নাশকতামূলক হতে পারে বলে দাবি করেন। তবে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলামকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।
কুলাউড়া থানা অফিসার ইনচার্জ অমল কুমার ধর জানান, নাশকতার কোন সম্ভাবনা নেই। রেললাইন ও যান্ত্রিক ত্র“টিই এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান জানান, এটা কোন নাশকতা নয়। যান্ত্রিক ত্র“টির কারণেই দুর্ঘটনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।