কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জাতীয় প্রেসক্লাবের গেট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ‘অবরুদ্ধ’ থাকার পর মঙ্গলবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে প্রেসক্লাব থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। আটকের পর তাকে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে রাজধানীর বকশীবাজার এবং রংপুর বিভাগে সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাকে আজ আদালতে নেয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এদিকে ফখরুলের গ্রেফতারের প্রতিবাদে তার নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিকাল থেকে আজ সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে স্থানীয় বিএনপি। এর আগে সোমবার বিকালে কৌশলে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের একটি সমাবেশে যোগ দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। এরপরই সেখানে অবস্থানরত আওয়ামী প্রজন্ম লীগের বিরোধিতা ও আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক নেতাদের প্রতিবাদে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ও গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেফতারের জন্য প্রেসক্লাবের তিনটি গেটে অবস্থান নেয়। কার্যত তখন থেকেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রেসক্লাবেই রাতযাপন করেন তিনি।
মির্জা ফখরুলকে গ্রেফতারের বিষয়ে রাজধানীর রমনা জোনের এসি শিবলী নোমান সাংবাদিকদের বলেন, শাহবাগ ও চকবাজার থানায় তার বিরুদ্ধে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টাসহ বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন মির্জা ফখরুল। তিনি এ সময় দেশবাসীকে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সর্বাত্মক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কারণে প্রেসক্লাবে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। দেশ ভয়াবহ এক পরিস্থিতিতে চলছে। দেশ ভয়ঙ্কর এক কারাগারে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্র আজকে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। সরকার আমাদের সভা-সমাবেশের অধিকার হরণ করেছে। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের ঐতিহ্যগত আতিথেয়তা গ্রহণ করেছেন। এজন্য তিনি সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান।
এর আগে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, যতক্ষণ না মির্জা ফখরুলের নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে, ততক্ষণ তিনি এখানেই থাকবেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা বরাবরই প্রেসক্লাবে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রেসক্লাবের দরজা তাদের জন্য খোলা ছিল। এটা নিয়ে কেউ কটাক্ষ করেননি। শওকত মাহমুদ আরও বলেন, মির্জা ফখরুল প্রেসক্লাব থেকে বের হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সাংবাদিকরা তাকে যেতে দেননি। কারণ বাইরে গেলেই তাকে গ্রেফতার করা হতো। শওকত মাহমুদের সংবাদ সম্মেলনের পরই সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হন জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, বিএফইউজে মহাসচিব এমএ আজিজ, ডিইউজে (একাংশ) সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, বিএফইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি এম আবদুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলন শেষে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বের হওয়ার চেষ্টা করেন মির্জা ফখরুল। এ সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও সমর্থক সাংবাদিকদের প্রবল বাধার মুখে পড়েন। তারা ‘জয় বাংলা’ সেস্নাগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিএনপিপন্থী সাংবাদিকরা তাকে নিরাপত্তা দিয়ে প্রেসক্লাবের মূল ফটক পর্যন্ত নিয়ে আসেন। সেখানে পুলিশ মির্জা ফখরুলের গাড়ি আটকে দেয়। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশের তর্কবিতর্ক ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। প্রেসক্লাবের সামনে সে সময় গোয়েন্দা পুলিশের একটি মাইক্রোবাস, একটি প্রিজন ভ্যান ও পুলিশ ভ্যান ছিল। বেশ কিছুক্ষণ ফটকে আটকে রাখার এক পর্যায়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের ব্যক্তিগত গাড়িতে উঠে পড়ে। তারপর বিকাল সোয়া ৪টার দিকে গাড়িটি মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ের দিকে রওনা হয়। গাড়ির সামনে ডিবির মাইক্রোবাস এবং পেছনে প্রিজন ভ্যান ও পুলিশ ভ্যান ছিল।
এর আগেই প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহানের নেতৃত্বে আওয়ামীপন্থী সাংবাদিকরা মির্জা ফখরুলকে প্রেসক্লাব থেকে বিতাড়ন করতে সময় বেধে দেন। সেটি কাজে না এলে কনফারেন্স লাউঞ্জে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
ঠাকুরগাঁওয়ে হরতাল : ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকাল ৫টা থেকে আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হরতাল আহ্বান করেছে জেলা বিএনপি।
মঙ্গলবার বিকালে হরতালের ঘোষণা দেন ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মির্জা ফয়সাল আমিন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেফতারের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে প্রতিবাদ সভায় জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মির্জা ফয়সাল আমিন ঠাকুরগাঁও জেলায় হরতাল আহ্বান করেন।
রংপুর বিভাগে আজ হরতাল : রংপুর ব্যুরো ও লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, মির্জা ফখরুলকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবিতে বুধবার রংপুর বিভাগের আট জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে হরতালের এ ঘোষণা দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুুলু।