কাজিরবাজার ডেস্ক :
৫ জানুয়ারি যতই ঘনিয়ে আসছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ততই নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। ক্ষমতাসীন দল ঐদিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ অন্তত ১৬ টি স্পটে সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ ঐ দিন ক্ষমতাসীনরা গোটা রাজধানী তাদের দখলে নিতে চাইছে। আওয়ামী লীগের কথা-বার্তা ও কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে, তারা বিএনপি-জামায়াতকে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়।
পাশাপাশি তারা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রশাসনকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ বিরোধী রাজনৈতিক দলের। সরকারের পক্ষ থেকেও বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপিকে শুক্রবার পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি।
এদিকে সমাবেশ করার বিষয়ে বিএনপিও মরিয়া হয়ে উঠেছে। সরকারের অনুমতির তোয়াক্কা না করার ঘোষণাও দিয়েছে দলটি।
বিএনপির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে পাঁচ জানুয়ারিকে “গণতন্ত্র হত্যা দিবস” হিসাবে ঘোষণা দিয়ে ঐ দিন ঢাকার রাজপথ নিজেদের দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার অনুমতি না দিলেও পাঁচ জানুয়ারি রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশ হবেই। এ নিয়ে রাজনীতির মাঠ বেশ গরম হয়ে উঠেছে। পাঁচ জানুয়ারি কী হবে, এই নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহল ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। রয়েছে অনিশ্চয়তাও।
সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন উদ্দিন খান বলেন, প্রশাসন অনুমতি না দিলেও বিএনপি ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করবে। ঐ সমাবেশ কেউ প্রতিহত করতে পারবে না।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বিএনপির সমাবেশ প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ৫ জানুয়ারি বিএনপিকে কোনো সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। ঐ দিন রাজধানীতে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। বিএনপি সমাবেশ করতে চাইলে তা প্রতিহত করা হবে।
দুই দলের এমন মনোভাবে নতুন বছরে রাজনৈতিক হানাহানির শঙ্কা করছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাদের ভাষ্য, ঐ দিন সমাবেশ নিয়ে দুই দলের নেতাদের বক্তব্যে রাজনীতির মাঠে আবার সংঘাতের হর্ষধ্বনি শোনা যাচ্ছে। কেউ যদি সহিষ্ণু মনোভাব না দেখায় তাহলে সংঘাত অনিবার্য বলেই ধরে নেয়া যায়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে আবার রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি দায়িত্বশীল আচরণ না করে তাহলে সংঘাত অনিবার্য বলেই আমার কাছে মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই সরকার জনগণের সমর্থন নিয়ে গঠিত হয়নি। তাই রাজনীতিতে এখন যে চলমান অস্থিতিশীলতা রয়েছে তা কাটাতে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। তা নাহলে দেশ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হবে। এ জন্য চলমান সংকট সমাধান জরুরি।
জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নতুন বছর শুরু হয়েছে হরতাল দিয়ে। তাই ধরাই যায় নতুন বছরটি কেমন কাটবে। আমাদের দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। তাই এখন সরকারি দল আওয়ামী লীগের উচিত বিরোধী দলকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সহযোগিতা করা। আর বিরোধী দলেরও উচিত দায়িত্বশীলভাবে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা। পরস্পর সহযোগিতার মনোভাব না থাকলে উগ্র ও অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতা নেওয়ার চেষ্টা করবে। যেটা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য কাম্য নয়।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ‘একনায়কতন্ত্র’ স্টাইলে দেশ চালাচ্ছে। গণতন্ত্র রক্ষায় এই অবস্থা থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রপ্রিয়। এটা সরকারকে বুঝতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।