হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জশীটভূক্ত আসামী হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আলহাজ্ব গোলাম কিবরিয়া গউছকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল রবিবার বেলা ১১টায় গোলাম কিবরিয়া গউছ হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া আক্তার এর আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেন। দীর্ঘ ৫৫ মিনিট শুনানী শেষে বিচারক গউছের জামিন আবেদন না-মঞ্জুর করেন।
আদালতে বাদীপক্ষে সরকারী কৌসুলী এম আকবর হোসেন জিতু, চৌধুরী আবু বকর সিদ্দিকী, নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটো, সুলতান মাহমুদ, শাহ ফখরুজ্জামান এবং বিবাদী পক্ষে আরিফ চৌধুরী, খালেকুজ্জামান চৌধুরী, আলহাজ্ব সালেহ আহমেদ, সামসু মিয়া চৌধুরী, মঞ্জুর উদ্দিন আহমেদ শাহীন, কামাল উদ্দিন আহমেদ সেলিম ও এম এ মজিদসহ উভয়পক্ষে শতাধিক আইনজীবী মামলার শুনানীতে অংশ নেন।
ইতোপূর্বে ২১ ডিসেম্বর কিবরিয়া হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুননেছা পারুল হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চতুর্থ দফার সর্ম্পূরক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
ওই প্রতিবেদনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌর মেয়র আলহাজ্ব গোলাম কিবরিয়া গউছসহ ৩৫ জনকে আসামী করা হয়। ওই দিন আদালত হারিছ চৌধুরী, আরিফুল হক চৌধুরী এবং আলহাজ্ব জি কে গউছসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী করেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যেরবাজারে আওয়ামী লীগের জনসভা শেষে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়া, তার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী ছিদ্দিক আলী, আবদুর রহিম ও আবুল হোসেন। এছাড়া হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এডভোকেট মো. আবু জাহির এমপি, এডভোকেট আবদুল আহাদ ফারুক, আবদুল্লাহ সর্দারসহ আহত হন ৭০ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন।
আদালতপাড়ায় গউছের বক্তব্য : আদালতে আত্মসমর্পণের পূর্বে গোলাম কিবরিয়া গউছ বলেন, আমি গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। এর বিচার দেশবাসীর কাছে দিলাম। আমি নির্দোষ। আশা করি আমি ন্যায় বিচার পাব।
এদিকে মেয়র আলহাজ্ব গোলাম কিবরিয়া গউছকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও পুলিশের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি, পুলিশ সদস্যসহ বিএনপি’র শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ যুবদল ও ছাত্রদলের ৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। এছাড়াও সংঘর্ষ চলাকালে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল নেতাকর্মীরা অন্তত ১০টি গাড়ী ভাংচুর করে।
আহতদের মধ্যে হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য আহতরা হবিগঞ্জ সদর আধুনকি হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। রবিবার দুপুরে হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, জামিন আবেদন না-মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর হয়।
প্রতিবাদে বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে শহরে মিছিল বের করে। পরে এ মিছিল থেকে শহরের সার্কিট হাউজ রোড এলাকার গণপূর্ত ভবন, জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজ, ব্যাটারি চালিত টমটম এবং একটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেট কারসহ ১০ গাড়ী ভাংচুর করে।
এ সময় পুলিশ মিছিলকারীদের ধাওয়া করলে বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে কাঁধে। এ সময় পুলিশ প্রায় ৩০ রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। পরে এ সংঘর্ষ শহরের ফায়ার সার্ভিস রোড এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন সংঘর্ষের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শহরে নিরাপত্তা জোরদারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।