দীর্ঘদিন ধরে বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের অন্তর্দ্বন্দ্ব চলমান ছিল। প্রকাশ্যে এর বহি:প্রকাশ না হলেও দুটি গ্র“পে বিভক্ত হয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা পৃথক ভাবে দলীয় কর্মসূচী পালন করে আসছিল। মূলত ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারীর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং চলতি বছরের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর থেকে ক্রমান্বয়ে দলীয় বিভক্তি প্রকট আকার ধারণ করে। এতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান মফুর এবং সাধারণ সম্পাদক আনহার মিয়ার অনুসারীরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং তারা আলাদা- আলাদা ভাবে দলীয় কার্মসূচীও পালন করতে দেখা যায়। বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে চলে আসা দীর্ঘ দিনের বিভক্তি নিরসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ ও জেলার নেতৃবৃন্দরা উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলা আওয়ামীলীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনকে সামনে রেখে গতকাল রবিবার বালাগঞ্জ এম এ খান অডিটোরিয়ামে এক বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। কঠোর পুলিশী নিরাপত্তার বর্ধিত সভা শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ করার জন্য বালাগঞ্জ থানা পুলিশের পাশাপাশি সিলেট থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্যে দিয়ে সূচিত সভার এক পর্যায়ে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরীর বক্তৃতাকালে সভার শেষ পর্যায়ে কোন্দল নিরসন নিয়ে সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী মাইকে বক্তব্য দেয়ার এক পর্যায়ে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহবান জানালে মঞ্চে উপবিষ্ট মফুর অনুসারীরা চিৎকার দিয়ে বলে উঠে আমরা “এক হতে চাই না” এমন শ্লোগান শুরু করলে আনহার অনুসারীরাও পাল্টা শোর-চিৎকার শুরু করে। এ সময় উভয় পক্ষে মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং হাতাহাতিতে রুপ নেয়। এ সময় দলীয় নেতৃবৃন্দ উভয় পক্ষকে শান্ত করেন। পরবর্তীতে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ানের বক্তব্য চলাকালে আবার হট্টগোলের সৃষ্টি হয় এবং নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজী মোস্তাকুর রহমান মফুরে সভাপতিত্বে ও সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এড. নাসির উদ্দিন খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা কালে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, আর বিভাজন নয়, এবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। বড় দলে অনেক ছোট-খাটো ত্র“টি-বিচ্যুতি থাকতে পারে তাই দলীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে ব্যক্তি স্বার্থ পরিহার করে সবাইকে এক হয়ে মাঠে কাজ করতে হবে। আগামীতে পুরনো দিনের সকল গ্লানী মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তিনি বালাগঞ্জের দলীয় রাজনীতির কথা উল্লেখ করে আরও বলেন, মফুর-আনহারের নেতৃত্বে বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও সুসংগঠিত হবে এবং অতিতের সকল ব্যর্থতার দায়ভার তিনি তার কাধে নিয়ে নেতাকর্মীদের কাছে দু:খ প্রকাশ করেন। বর্ধিত সভায় বক্তৃতা করেন, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েছ এমপি, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক এড. শেখ মকলু, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক এড. রনজিত সরকার, সাংস্কৃতিক সম্পাদক এমাদ উদ্দিন মানিক, উপ-দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরী, বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনহার মিয়া, যুগ্ম সম্পাদক এম এ মতিন চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ-সভাপতি হিমাংশু রঞ্জন দাস সহ বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলী, যুবলীগ, মহিলালীগ, ছাত্রলীগ সহ অংগ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভা শেষে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের সম্মুখে জেলা সভাপতি মাইকে ঘোষনা দিলে উপজেলা আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ উভয়কে এক হয়ে কাজ করার আহবান জানিয়ে একে অপরের সাথে করমর্দন করান। বিজ্ঞপ্তি