আফতাব চৌধুরী
ঘুষ ও দুর্নীতি আমাদের দেশের জনজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জড়িয়ে পড়েছে। মনে হয় যেন ইহা সমাজ সংস্কৃতিরই একটা অঙ্গ। এর ফলে দেশের সর্বস্তরে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি, জননিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে। সমাজের বিশেষ করে সরকারী বিভিন্ন অফিস এবং বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। আমাদের জাতীয় জীবনে ঘুষ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ধারণ করে নিয়েছে। সুযোগসন্ধানী কিছুসংখ্যক অবাঞ্ছিত ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি এবং আমলারা মিলে এমন এক শক্ত পরিকাঠামো তৈরি করেছেন যে, একে ভেদ করার কোনও উপায় বুঝি সাধারণ জনগণের কাছে আর নেই। দেশের সব সুযোগ-সুবিধা অবাঞ্ছিত, অযোগ্য, অপদার্থরা ঘুষ বা উৎকোচের মাধ্যমে করায়ত্ত করে নিচ্ছে। যোগ্য ও গুণীরা, প্রচন্ড বেদনা, হতাশ ও ক্ষোভের সঙ্গে এসব শুধু অবলোকন করছেন। কেউ কেউ হয়তো মুল্যবোধ ত্যাগ করে অবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘুষ দিয়ে কোনও সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে। মোট কথা, ঘুষ দেওয়া-নেওয়াকে এখন আর কেউ বড় অপরাধ বলে ভাবে না। এটা যে কোনোও জাতির জীবনের পক্ষে খুবই দুর্ভাগ্যের সূচক। যে জাতির জীবনে উৎকোচের লাগামহীন প্রচলন ঘটে সে জাতির জীবনে কোনও নিরাপত্তা থাকে না, কোনও মূল্যবোধ গড়ে ওঠে না। নৈতিক অধঃপতনই হয়ে পড়ে তাদের ললাটলিপি। মানুষের মধ্যে হতাশা, ক্রোধ, বিশ্বাসহীনতা, হীনমন্যতা ও আদর্শহীনতা প্রকট হয়ে উঠে।
ইসলামের মূল গ্রন্থ পাক কোরআনে ঘুষ বা উৎকোচ ব্যবস্থাকে ‘সুহত’ শব্দের দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে। সুহতের শাব্দিক অর্থ- কোনও বস্তুকে মূলোৎপাটিত করে ধ্বংস করে দেওয়া। উৎকোচ বা ঘুষকে সুহত বলার কারণ এই যে, এটি শুধু গ্রহীতাকেই ধ্বংস করে না, সমগ্র দেশ ও জাতির ক্ষতি করে এবং জননিরাপত্তা ধ্বংস করে। যে দেশে ঘুষ চালু হয়ে যায় সেখানে আইন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। অথচ, আইনের উপরই দেশ ও জাতির স্থায়িত্ব এবং শান্তি নির্ভরশীল। আইন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে কারও জীবন-সম্পত্তি এবং ইজ্জত-আবরু সুরক্ষিত থাকে না। তাই ইসলাম ঘুষ বা উৎকোচকে কঠোরতম হারাম হিসাবে চিহ্নিত করেছে। ঘুষের উৎসমুখ বন্ধ করার জন্য পদস্থ কর্মকর্তা কর্মচারী ও শাসকদের দেওয়া উপঢৌকনকে ঘুষ বলে আখ্যায়িত করে হারাম (নিষিদ্ধ) করে দেওয়া হয়েছে।
এক বাণীতে হযরত মোহাম্মদ (সা:) বলেছেন- আল্লাহ ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতার প্রতি অভিসম্পাত দেন এবং ওই ব্যক্তির প্রতিও, যে উভয়ের মধ্যে দালালি বা মধ্যস্থতা করে।
ইসলামের পরিভাষায় ঘুষের সংজ্ঞা হলো- যে কাজের পারিশ্রমিক গ্রহণ করা আইনত সিদ্ধ নয় সেটা গ্রহণ করা। উদাহরণ, যে কাজ করা কোনও ব্যক্তির কর্তব্যকর্মের অন্তর্ভুক্ত সে কাজের জন্য কোনও পক্ষ থেকে বিনিময় গ্রহণ করাই ঘুষ। সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী স্বীয় কর্তব্যকর্ম সম্পাদন করতে বাধ্য। ওই ব্যক্তি যদি সংশ্লিষ্ট কোনও লোকের কাছ থেকে সে কাজের বিনিময়ে কিছু গ্রহণ করে, তবে তা ঘুষের অন্তর্ভুক্ত। কন্যাকে পাত্রস্থ করা পিতা-মাতার দায়িত্ব। তারা কারও কাছ থেকে বিনিময় গ্রহণ করতে পারে না। এখন কোনও পাত্রকে কন্যাদান করে পিতা-মাতা যদি কিছু গ্রহণ করে তবে তাও ঘুষ।
কেউ যদি ঘুষের বিনিময়ে ন্যায়সঙ্গত কাজও করে দেয়, তবে সে পাপী এবং ঘুষের অর্থও তার পক্ষে অবৈধ। পক্ষান্তরে, যদি কেউ ঘুষ গ্রহণ করে কারও অন্যায় কাজ করে দেয় সে উল্লেখিত পাপ ছাড়াও অধিকার হরণ এবং আইনের বিকৃতি সাধনের কঠোর অপরাধে অপরাধী।
মানবসমাজে সেই আদিকাল থেকেই ঘুষ চলে আসছে। ক্ষমতা ও আইনের কেন্দ্রবিন্দুতে যারা ছিল তাদের হাত ধরে সমাজে ঘুষ বা উৎকোচ প্রথা চালু হয়। প্রাচীন যুগে রাজা, বাদশাহকে আল্লাহর প্রতিনিধিরূপে গণ্য করা হতো। তাই রাজা বা বাদশাহ আল্লাহর নামে, আল্লাহর দেওয়া বিধান অনুসারে দেশ শাসন করতেন। কোনও রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠান নিজের সুষ্ঠু পরিচালনা ও উন্নতির লক্ষ্যে কিছু বিধিবিধান সংবলিত একটি সংবিধান রচনা করে এবং সর্বক্ষেত্রে তা মান্য করে চলার অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। এই সংবিধানের আওতায় কিছু আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইন কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগের মাধ্যমে সংবিধান কার্যকর হয় এবং সংবিধানের লক্ষ অর্জিত হয়। কিন্তু যখনই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ঘুষের প্রচলন চালু হয় তখন আইনের বিকৃতি শুরু হয়। আইনের বিকৃতিসাধন করে যখন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হয় তখন তা সংবিধান বহির্ভূত কাজ হিসেবে পর্যবসিত হয় এবং প্রতিষ্ঠানের সার্বিক ক্ষতি সাধিত হয়।
আমাদের রাষ্ট্রও একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং সামগ্রিক উন্নতির জন্য একটি মহৎ সংবিধান আছে। আমাদের সংবিধানের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জিত হলে আমরা জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে একটি সম্মানজনক আসন লাভ করতে পারি। রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে আমাদের দেশ কিছুটা অগ্রসর হলেও জাতি হিসেবে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাদের সংবিধানের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। আমাদের দেশ সামাজিক অসাম্য, দুর্নীতি, বিচ্ছিন্নতা, নৈতিক অধঃপতন ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। অথচ এমন হওয়ার কথা ছিল না। আমরা মহৎ একটি সংবিধানের অনুসারী হয়েও মহান জাতি হিসাবে কেন নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হলাম তার কারণ খুঁজলে দেখা যাবে, ঘুষ বা উৎকোচের অবাধ প্রচলন আমাদের সামাজিক মূল্যবোধকে হরণ করে নিয়ে সংবিধান অনুসৃত আইন-কানুনগুলোকে পাশ কাটিয়ে এক শ্রেণীর, আমলা এবং রাজনৈতিক নেতারা এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করেছে যে, দেশে আইনের শাসন চলছে অথবা চলছে না ঠিক বলা যাবে না।
কোনও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তির পক্ষে ঘুষ গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করা বিশ্বাসঘাতকতার নামান্তর। প্রতিষ্ঠানের মঙ্গল সাধনের অঙ্গীকার দিয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তি যখন ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থবিরোধী কাজ করে অরাজকতার সৃষ্টি করে তখন তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্তির বিবেক, চরিত্র এবং স্বভাবের উপর পড়ে। ফলে তার বিবেক, চরিত্র এবং স্বভাব বিনষ্ট হয়ে যায়। হীন স্বভাবের একজন লোকের আচার-আচরণ হয় হীন ও অমার্জিত। ফলে লোকটি তার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী তথা সামজের দৃষ্টিতে অপ্রিয় ও অশ্রদ্ধার পাত্র হয়ে উঠে। কিন্তু অনুশোচনার বিষয়, তার এই অবস্থার উপলব্ধি হয় জীবনের সন্ধ্যাবেলায় যখন সবকিছু ফুরিয়ে যায়। পরিতাপের বিষয়, পরিবার তথা সমাজের কাছে নিজেকে অধিক গ্রহণযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে যে লোকটি জীবনের সব মুল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে ঘুষের টাকায় আপনজনের জন্য এতসব সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দিল তারাই কিনা জীবনসায়াহ্নে তার প্রতি অশ্রদ্ধা, অনাদর পোষণ করে। এটা অতি স্বাভাবিক। অর্থ দিয়ে মানুষের কাছে থেকে শ্রদ্ধা লাভ করা যায় না। স্বভাব, চরিত্র, মন, মানসিকতায় নিজেকে সমুন্নত করতে পারলে তবেই মানুষ শ্রদ্ধাস্পদ হয়, ভালবাসা পায়।
ঘুষদাতা সাধারণত একজন অবাঞ্ছিত স্বার্থপর ব্যক্তি যদিও কিছু ক্ষেত্রে সে ঘুষের শিকার। সে অন্যায়ভাবে সুযোগ-সুবিধা আদায়ের দোষে দুষ্ট, যদিও ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ে কিছু ক্ষেত্রে ঘুষের বলি। ঘুষদাতা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রলোভিত করে এবং অবৈধ কাজে উৎসাহিত করে। সুতরাং ঘুষদাতা দেশের আইন- শৃঙ্খলার অবনতি নৈতিক অবক্ষয় ও অরাজকতা সৃষ্টিতে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করার জন্যও দায়ী। আবার অনেক সরকারী কমকর্তা, কর্মচারী বা ঘুষ গ্রহীতা নানা অযুহাতে সেবা গ্রহণকারীদের হয়রানি করে থাকেন, উদ্দেশ্য ঘুষ আদায়। বাধ্য হয়েই তখন সেবা গ্রহণকারী ঘুষ দিয়ে কাজ আদায় করে থাকেন। ঘুষ না দিলে তার বৈধ কাজই আর হবে নাÑ হয়রানীর শিকার হতে হবে।
আমাদের দেশে ঘুষ বা উৎকোচ একটি প্রতিষ্ঠানিক রূপ ধারণ করে নিয়েছে। জাতীয় জীবনে ঘুষ এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে, এর বাইরে গিয়ে চিন্তা করার অবকাশ যেন আর নেই। একটা সময় ছিল যখন ঘুষের লেনদেন চলত টেবিলের নীচ দিয়ে। ঘুষদাতা ও গ্রহীতা কাজটাকে লজ্জাজনক মনে করত। এখন আর তা নেই। আজকাল ঘুষের লেনদেন বুক ঠুকে সম্পূর্ণ উলঙ্গভাবে সংঘটিত চচ্ছে। উকিল যেভাবে তার মক্কেলের কাছ থেকে পারিশ্রমিক চেয়ে নেন বা দর কষাকষি করেন ঠিক সেভাবেই জনগণের সেবক জনগণের কাছ থেকে পারিশ্রমিক চেয়ে নিচ্ছেন। ন্যায়-অন্যায় বলে আর সামান্যই অবশিষ্ট আছে। টাকা দিলে সব হয়। ন্যায়কে অন্যায় করা যায়, অন্যায়কে ন্যায় করা যায়। কোনও অপরাধী এখন তার অপরাধ করতে ভয় পায় না, কোনও কর্মচারী কাজে গাফিলতি করতে কুন্ঠিত হয় না, কোনও নেতা বা আমলা সরকারি তহবিল তছরুপ করতে দ্বিধা করেন না। কারণ, জবাবদিহি হলে টাকা ঢাললেই সাতখুন মাপ। কাজেই ভয় নেই, এগিয়ে যাও মন্ত্রে সবাই দীক্ষিত, পিছনে ফিরে এখন আর তাকায় না কেউ। আমাদের দেশের ঘুষের রমরমা বাজারে অবাঞ্ছিতদের ভিড়। অবাঞ্ছিত ও অযোগ্য লোকেরা টাকার বিনিময়ে দেশের অধিকাংশ সুযোগা-সুবিধা করায়ত্ত করে নিচ্ছে। বাঞ্ছিত, উপযুক্ত এবং যোগ্য ব্যক্তিরা ক্রমশ দুর্বল ও একঘরে হয়ে পড়েছে। সমাজ এখন দুর্বৃত্ত ও অপরাধীদের ভিড়ে ঠাসা। এদের উৎপাতে সমাজজীবন টলায়মান। কারও বলার কিছু নেই, করার কিছু নেই, প্রতিবাদের পথও প্রায় বন্ধ। কারণ, প্রতিবাদে কোনও কার্যকরী প্রতিকার হয় না, যা হয় তা ভন্ডামির নামান্তর। বেড়ে যায় ব্যক্তিগত শত্র“তা। আজকাল শত্র“তার পরিণাম জীবন নাশ। এখন আর কেউ কাউকে কিল, ঘুষি, থাপ্পড় মারে না। কারণ, এরূপ করলে প্রতিপক্ষ তাকেও আবার কিল, ঘুষি মারার সুযোগ পায়। সুতরাং প্রতিপক্ষকে একেবারে খালাস করে দিলেই উঠোন পরিষ্কার হয়ে যায় আর থানা, আদালতে কিছু টাকা ঢাললে কাপড় সাফ-সুতরো হয়ে যায়। সমাজে একবার নিজের সম্বন্ধে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে পারলে পথ পরিষ্কার থাকে। টাকা থাকলে জবাবদিহির সম্ভাবনা থাকে খুব কম। আমরা এখন এমনই এক সমাজে বসবাস করছি। আমাদের সমাজে এখন নিয়মশৃঙ্খলার ধার কেউ ধারে না। যে যার সুবিধা মতো চলছে। ধরা-বাঁধার বালাই নেই। এরপর সমাজ চলছে, জীবনও চলছে, কারণ, প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে মানুষ প্রকৃতির হাতের ক্রীড়নক। এন্ডি মুগার পোকা যেমন নিজস্ব নিঃসৃত বিষ্ঠায় আবদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায়, মানুষও তেমনি তার অপকর্মের ফাঁদে পড়ে হা-হুতাশ করছে। সার কথা, মানুষ নিজের অপকর্মের দ্বারা নিজের বাসস্থানকে কলুষিত করে জীবনের মহৎ উদ্দেশ্যকে বিফল করছে। মানবজীবনে এর চেয়ে বড় কী দুর্ভাগ্য আর হতে পারে।
ঘুষের সংস্কৃতি যেভাবে আমাদের দেশে ঘাঁটি গেড়েছে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া এত সহজে সম্ভব না হলেও দেশের মানুষ যদি ঘুষের অপকারিতা প্রকৃত অর্থে উপলব্ধি করে এবং তা থেকে মুক্তি পেতে বদ্ধ পরিকর হয় তবেই ঘুষ বা উৎকোচের অপসংস্কৃতি থেকে আমাদের দেশ ও জাতি মুক্তি পাবে। কারণ, জনসাধারণের সদিচ্ছার সামনে কোনও কিছুই বাধা হয়ে টিকে থাকতে পারে না। এখন প্রশ্ন হলো, এই সদিচ্ছার উন্মেষ ঘটবে কীভাবে? কোনও এককপথে তা সম্ভব নয়, এটা একটা সামগ্রিক প্রয়াসের ফলশ্র“তিতে অর্জিত হবে। আমাদের স্কুল কলেজের পাঠ্যক্রমে বস্তুবাদী অর্থকরী পাঠদানের পাশাপাশি নৈতিক চরিত্র গঠনের পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে। এ পাঠদান ধর্মীয় শিক্ষা। ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া কোন ভাবেই মানুষের নৈতিক চরিত্রের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে নিজেরা ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে এবং দেশকে গভীরভাবে ভালোবাসতে শিখে সেদিকে লক্ষ্য রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠক্রম চালু করতে হবে। আমাদের সামাজিক মূল্যবোধকে জাগ্রত ও উন্নত করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রচারমাধ্যম বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। প্রচারমাধ্যমগুলো অনৈতিক, মূল্যবোধ বর্জিত ও ধ্বংসাত্মক জীবনবোধের চর্চা ও প্রচার বন্ধ করে নৈতিক, মূল্যবোধ সংবলিত ও গঠনমূলক জীবনবোধের চর্চা ও প্রচার শুরু করলে মানুষের মনে সুস্থতা ফিরে আসবে, মানুষ সুস্থ সমাজ গঠনে ব্রতী হবে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অবস্থার আশু পরিবর্তন প্রয়োজন। আমাদের দেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তাই দেশের সার্বিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে গেলে গণতান্ত্রিকভাবে জনগণকে এগুতে হবে। দেশের প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থা দেশের পটপরিবর্তনের বড় হাতিয়ার। এই হাতিয়ারের যথোপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ দেশের আমূল পরিবর্তন আনতে পারে। প্রথমত, দেশের জনগণকে নিজেদের দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল করে রাজনৈতিকভাবে সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। দ্বিতীয়ত, ধর্ম, ভাষা, জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে সবার কাছে পরিচিত সমাজকর্মীদের মধ্য থেকে সৎ, শিক্ষিত, অভিজ্ঞ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কর্মঠ এবং ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের নেতা হিসেবে বেছে নিয়ে নির্বাচিত করতে হবে। তৃতীয়ত, অশিক্ষিত, অসৎ, দুর্নীতিবাজ, ভন্ড, প্রতারক নেতাদের চিহ্নিত করে তাদের রাজনৈতিক ময়দান থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। চতুর্থত, আগেকার দিনের মতো যেভাবে জনগণের তথা দেশের সেবায় অনেক আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠার পর দেশের জনগণ কাউকে নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিত, আমাদের আজকের রাজনৈতিক ক্ষেত্রকে ঠিক সেভাবে গড়ে তুলতে পারলে অনভিজ্ঞ, প্রতারক, দুর্নীতিবাজ, মাফিয়াদের হাত থেকে আমাদের রাজনৈতিক পরিমন্ডল মুক্ত হবে। সারকথা জনগণ যদি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়-প্রশাসন বা দূরদৃষ্টি সম্পন্ন, কর্মঠ এবং সৎ সমাজকর্মীদের নির্বাচিত করে সরকার গঠন করতে পারে তাহলেই দেশের আমলাতন্ত্রের মধ্যে ঘুষ বা উৎকোচের যে অবাধ বিচরণ সেটাও টুটি চেপে ধরে ক্রমাগত প্রয়াসে যাবতীয় অরাজকতার অবসান ঘটিয়ে নৈতিক উন্নতির মাধ্যমে একটি উন্নত জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বসভায় স্থান নিতে পারব, তাতে সন্দেহ নেই।