হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বাংলার মানুষ শান্তিতে থাকে। কিন্তু বিএনপি যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই সন্ত্রাসের জন্ম দেয়। তারা সন্ত্রাসের রাজনীতিতে দেশকে শ্মশানে পরিণত করে। তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা খুন হয়েছেন। তারা সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করেছে। বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছিল, যারা স্বাধীনতা সংগ্রামে এ দেশের মা-বোনকে ধর্ষণ করেছিল। শুধু তাই নয়, বিএনপি ক্ষমতায় এসে সারাদেশে একই সাথে ৫শ’ স্থানে বোমা ও গ্রেনেড হামলা করেছিল। যুবসমাজের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। বিএনপির দুই ভালো গুন আছে, সেটি হলো সন্ত্রাস আর মানুষ খুন। হবিগঞ্জের মাটিতে সফল অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াকে গ্রেনেড দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় হবিগঞ্জ নিউফিল্ড মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল মজিদ খান এমপি’র পরিচালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আবু জাহির এমপি।
স্মরণকালের বিশাল সভায় শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে আজ তাদের শাস্তি হয়েছে। তিনি লাখো শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানি করেছেন। একদিন জনগণের আদালতে তারও বিচার হবে।’
তিনি বলেন, আমরা যখন এর আগে ক্ষমতায় ছিলাম তখন সারাদেশে যে উন্নয়ন কাজ শুরু করেছিলাম বিএনপি ক্ষমতায় এসে সবক’টি উন্নয়ন প্রকল্প বাতিল করে দেয়। এতে দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়ে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার আগে একজন দিনমজুর যত টাকা রোজগার করতো তা দিয়ে একবেলা খাবার কিনতে পারতো না। কিন্তু এখন একজন দিনমজুর যা রোজগার করে তা দিয়ে একদিনের খাবার কেনার পরও তার কাছে উদ্ধৃত থাকে এমন ব্যবস্থা আমরা করেছি।
ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়নের কথাও তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এখন গ্রামে বসে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব হচ্ছে। আর কাউকে না খেয়ে মরতে হচ্ছে না। আমরা বর্তমানে প্রচুর খাদ্য মজুদ করেছি। বিদেশে চাল রফতানী করতে পারছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে এক অর্থে ভালোই হয়েছে। জাতীয় সংসদে এখন খিস্তি-খেউর শোনা যায় না। সংসদ ভালোভাবে চলছে। সংসদের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান তার সময়ে না-কি দেশে উন্নয়নের জোয়ার বয়েছিল। তিনি জোয়ার দেখাতে পারেন আর না পারের ভাটার টান দেখিয়েছেন। তিনি জোয়ারের ঠেলায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দিলেন। জোয়ার না ভাটা, তা বোঝার বোধশক্তিই উনার নেই। বিএনপি নেত্রী গ্যাস ও বিদ্যুতের উৎপাদন কমালেন, কিন্তু দাম বাড়ালেন বোমাবাজি, গ্রেনেড ও সন্ত্রাসের।
সভায় বক্তৃতা করেন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, এডভোকেট মাহবুব আলী এমপি, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি, আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী এমপি, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন কামরান, লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান মুশফিউল আলম আজাদ, নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরী, বাহুবল উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই, জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, জেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম, সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান শামীম, হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোটে নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটো প্রমুখ।
সভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হবিগঞ্জ নিউফিল্ডের জনসভাস্থলে আধুনিক স্টেডিয়াম, ডায়াবেটিস হাসপাতাল, নার্সিং ইনস্টিটিউট, জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম ও কমিউনিট সেন্টার, জেলা শিল্পকলা একাডেমী ভবন, সার্ভার ষ্টেশন, আলেয়া জাহির কলেজ, শায়েস্তাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন, আনসার ও ভিডিপি কার্যালয় ভবনের উদ্বোধন এবং শাহজিবাজার (৩৩০ মেগাওয়াট) কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এদিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র হবিগঞ্জের বিবিয়ানায় সম্প্রসারণ প্রকল্প এবং বিবিয়ানা-ধনুয়া গ্যাস পাইপলাইন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে বিবিয়ানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত সংযোগ সড়ক এবং নবীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন উদ্বোধন করেন তিনি। শনিবার দুপুর পৌণে ১২টায় তিনি এসব প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিস্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে রওয়ানা হয়ে দুপুরে হবিগঞ্জের বিবিয়ানায় পৌঁছান। শেভরন পরিচালিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা থেকে এখন প্রতিদিনি ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। শেভরন জালালাবাদ ও মৌলভীবাজারেও গ্যাস তুলছে।
শেভরন জানায়, বিবিয়ানার সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হবে। এর ফলে শেভরন পরিচালিত তিনটি ক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। শেভরন আরও জানায়, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ২৪০০ ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হলেও চাহিদা আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি।
প্রধানমন্ত্রী বিবিয়ানা দক্ষিণ ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিবিয়ানা-৩ ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভিত্তিস্থাপন করেন এবং বিবিয়ানা-২ ৩৪১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে এক সুধী সমাবেশে যোগ দেন।