স্টাফ রিপোর্টার :
ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ ও হল দখলকে কেন্দ্র করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে এক বহিরাগত ছাত্র লীগ নেতা নিহত ও পুলিশসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে শাবি প্রক্টর প্রফেসর ড. হিমাদ্রি শেখর রায়সহ ৫জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। শাবি কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার মধ্যে ছেলেদের এবং আজ শুক্রবার সকাল ৯ টার মধ্যে মেয়েদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। তবে, দফায় দফায় সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা সংঘর্ষে লিপ্ত হলেও পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করেনি। এ ছাড়া, সশস্ত্র তান্ডব চালানোর পর খুনিরা দীর্ঘসময় ক্যাম্পাসে অবস্থান করে। পরে তারা প্রশাসনের সহযোগিতায় নির্বিঘেœ ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায়।
নিহত বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতা সুমন দাস (৩০) সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এলএলবি অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। পাগলা সুমন হিসেবে পরিচিত এই ছাত্রলীগ নেতা দলের ছাত্রলীগ বিধান গ্র“পের সক্রিয় কর্মীঅ এক বছর আগে সে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ছিল বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। সুমন দাসের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার শ্যামারচরে। তার বাবা ভূমি সার্ভেয়ার। তিন বোনের সে একমাত্র ভাই ও সবার বড়।
ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, শাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ ও সহ-সভাপতি অঞ্জন রায় গ্র“পের মধ্যে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতংক দেখা দেয়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উভয় গ্র“পের মধ্যে আবার ব্যাপক গুলিবর্ষণ শুরু হয়। সংঘর্ষে শাবি প্রক্টর প্রফেসর ড. হিমাদ্রি শেখর রায়সহ ৫জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে সুমন দাস হাসপাতালে মারা যায়। সে অঞ্জন গ্র“পের কর্মী ছিল। এছাড়া খলিল নামে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের এক ছাত্রের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে। এর পর হামলায় অঞ্জন রায়ও গুরুতর জখম হয়েছেন। তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশও হামলার শিকার হয়েছে।
এর আগে সকালে ছাত্রাবাসে ব্যাপক ভাঙচুর করে ছাত্রলীগের একাংশ। হামলাকারীরা শাহপরান হলে অন্তত ৪০টি কক্ষ ভাংচুর করে। একই সময়ে তারা দ্বিতীয় ছাত্র হলেও ভাংচুর করে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একাধিক সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, গুলিবিদ্ধ নিহত সুমন ইন্টারন্যাশনাল। ওসমানী হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: আব্দুস সালাম জানান, ওসমানী হাসপাতালে আনার পর সুমনের মৃত্যু হয়। জানা যায়, গত বছর ৮ মে সঞ্জীবন চক্রবর্তীকে সভাপতি ও ইমরান খানকে সাধারণ সম্পাদক করে শাবি ছাত্রলীগ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কমিটি ঘোষণা করা হলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সঞ্জীবন চক্রবর্তী ও তার সমর্থকরা এতদিন ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেননি। ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণে ছিল সহ-সভাপতি অঞ্জন রায় এবং উত্তম কুমার দাশ ও তাদের সমর্থকদের।
এদিকে সংঘর্ষের জেরে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার মধ্যে ছেলেদের হল ত্যাগ এবং আজ শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে মেয়েদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বেলা ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরী সিন্ডিকেট বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান সিন্ডিকেট সদস্য ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রফেসর ড. ফারুক উদ্দিন। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া।
অপর দিকে সংঘর্ষের সময় ৬ পুলিশ সদস্যকে হলের রুমে তালা দিয়ে রেখেছিল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষ শেষ হওয়ার পর জালালাবাদ থানার ওসি তদন্ত সুহেল আহমদ তাদেরকে উদ্ধার করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাবির বঙ্গবন্ধু হলের ২০২ নম্বর রুমে এ ঘটনা ঘটে। সুহেল আহমদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী জালালাবাদ থানার ৬ পুলিশ সদস্যকে ২০২ নম্বর রুমে তালা দিয়ে রাখে। পরে তালাবদ্ধ রুম থেকে এক পুলিশ সদস্য মোবাইল ফোনে বিষয়টি থানায় অবগত করেন। পরে আমরা সেখানে গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করি। তবে, ছাত্রলীগের কোন গ্রুপের নেতাকর্মী পুলিশকে তালা মেরে রেখেছিল তা বলতে পারেননি ওসি সুহেল।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেন জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় কাউকে আটক কিংবা থানায়ও কোন মামলা দায়ের বা কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি ক্যাম্পাস এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে ওসি জানান।