বালাগঞ্জে ছাত্রদল নেতার স্মরণ সভায় মির্জা ফখরুল ॥ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সরকার ক্ষমতা দখল করেছে

14
বালাগঞ্জে নিহত ছাত্রদল নেতার কবর জিয়ারত করে মোনাজাত করছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ।

ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা :
জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালে বালাগঞ্জে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সায়েম আহমদ সোহেলের কবর জিয়ারত ও তার পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করতে ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ গতকাল সোমবার তার বাড়িতে যান। বেলা তিনটার দিকে নেতৃবৃন্দ উপজেলার পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নের নলজুড় গ্রামস্থ

বালাগঞ্জে নিহত ছাত্রদল নেতার স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোহেলের বাড়িতে পৌঁছে কবর জিয়ারত ও সোহেলের মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিয়ে সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। এরপর সোহেল স্মরণে তার বাড়ির আঙ্গিনায় আয়োজিত সংক্ষিপ্ত স্মরণ সভায় বিএনপির মহাসচিব ঐক্যফ্রন্ট নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, আওয়ামীলীগ একটি দেউলিয়া দলে পরিণত হয়েছে। তাদের দেউলিয়াত্বের প্রমাণ ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে এই জালিম সরকার ক্ষমতা দখল করেছে। নির্বাচনের দিন মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা করতে যাওয়ায় আপনাদের সন্তান সোহেলকে নির্মম ভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ওই দিন সোহেলের সাথে এ দেশের ১৮ কোটি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিহত সোহেলের বুকের রক্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারকে উৎখাত করতে হবে। সোহেলের এই ত্যাগ বৃথা যাবেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে এবং আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। বালাগঞ্জের মানুষ হচ্ছে প্রতিবাদি তারা প্রতিবাদ করতে জানে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শহীদ সোহেল মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার স্বপ্ন দেখেছিল তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা দৃড় প্রতিজ্ঞ, সে অমর হয়ে থাকবে। জালিম আওয়ামীলীগ সরকার আপনাদের এম ইলিয়াস আলীকে গুম করে রেখেছে। ইলিয়াস ফিরবে এই আশায় তার পরিবার প্রতিক্ষার প্রহর গুণছে। ইলিয়াসের ছোট্ট মেয়ে তার মায়ের কাছে জানতে চায় তার বাবা কবে কখন আসবে। তিনি বলেন, আমরা আপনাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে এখানে এসেছি, কোনো রক্তই বৃথা যাবে না, গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আজ সোহেলের বাবা-মা আমাদেরকে কাছে জানতে চেয়েছেন তাদের ছেলেকে কেন হত্যা করা হল? কিন্তু কারো কাছে এই কথার উত্তর নেই। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে হাজারো সোহেলের বাবা-মায়ের বুক খালি হবে। এরকম হাজারো প্রশ্নের কোনো উত্তর মিলবে না। বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা জায়গীরদারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, এ পর্যন্ত কোনো স্বৈর শাসকই চিরস্থায়ী ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। দেশের সর্বস্তরের মানুষ আজ প্রতিবাদি হয়ে ওঠছে। এই প্রতিবাদ যখন আন্দোলনে রুপ নেবে তখন জণগনের মুক্তি আসবে, বেগম খালেদা জিয়াও মুক্ত হবেন। সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ খান জামাল এবং বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান ও সহ সাধারণ সম্পাদক আলা উদ্দিন রিপনের যৌথ পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব ও নিহত সোহেলের চাচাতো ভাই বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান। স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: শাখাওয়াত হোসেন জীবন, গণফোরাম নির্বাহী সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হাবিবুর রহমান বীর প্রতীক, সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাবেক এমপি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শফি আহমদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, বিএনপি নেতা কলিম উদ্দিন মিলন, মিজানুর রহমান চৌধুরী, কাইযুম চৌধুরী, সিসিক কাউন্সিলর কয়েস লোদী, বালাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা বিএনপি নেতা আলহাজ্ব আবদাল মিয়া, ওসমানীনগর উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা বিএনপি নেতা ময়নুল হক চৌধুরী ও নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর ছোট ভাই স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা আছকির আলী প্রমুখ। এছাড়া স্মরণ সভায় সিলেট বিভাগের জেলা-উপজেলা থেকে আগত বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী আবার সংলাপের ডাক দিয়েছেন। তবে সংলাপের এজেন্ডা কী হবে সেটি জানানো হয়নি। সংলাপে অংশ নিতে পুনরায় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন বিষয়ক এজেন্ডা চায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল সোমবার দুপুরে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)’র মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের আগে যেসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ হয়েছিল, তাদের সঙ্গে আবারও সংলাপ হওয়ার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নির্বাচনের আগে ওই সংলাপে অংশ নিয়েছিল বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, জাতীয় পার্টি, যুক্তফ্রন্টসহ আরও বহু দল। ওই সংলাপের সময়ই বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা ঘোষণা করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এজেন্ডায় যদি বিগত নির্বাচন বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীরন নির্বাচনের বিষয় থাকে, তা হলে আমরা সংলাপ নিয়ে চিন্তাভাবনা করব। কারণ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে সংলাপ হয়েছিল তা অর্থবহ হয়নি। জামায়াত নিয়ে ড. কামালের বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জামায়াত নিয়ে কামালের বক্তব্য গণফোরামের। এটি ঐক্যফ্রন্টের বক্তব্য নয়। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে এখনও কোনো আলাপ-আলোচনা করিনি। জামায়াত ইস্যুতে ঐক্যফ্রন্টে ফাটল ধরবে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঐক্যফ্রন্টে কোনো ফাটল ধরার সুযোগ নেই। অটুট থাকবে। কারণ আমরা অভিন্ন দাবিতে একসঙ্গে আন্দোলন করছি। উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, উপজেলা নির্বাচনে এলে তো সরকার পরিবর্তিন হয় না। কাজেই এটি নিয়ে এতটা গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন যে অযোগ্য বিশ্ব তা দেখেছে। তাদের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচন হতে হবে সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচন।
সোমবার সকাল পৌনে ১২ টায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এসে পৌঁছে প্রথমে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন। পরে নেতৃবৃন্দ হযরত শাহপরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সফরকারী টিমে ছিলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী, মহাসচিব হাবিবুর রহমান বীর প্রতীক, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব প্রমুখ।
মাজার জিয়ারতের সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সাথে ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে বিএনপি’র দলীয় প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরসহ বিএনপি ও বিএনপি’র অঙ্গ সংগঠনের নেতা এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অসংখ্য নেতাকর্মী। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বালাগঞ্জে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত ছাত্রদল নেতা সায়েমের বাড়িতে যান। সেখানে তারা কিছুক্ষণ অবস্থান করেন ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে বিকেলে তারা ঢাকায় ফিরে যান। সফরকারী টিমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির নেতাদের মধ্যে মাহমুদুর রহমান মান্নার ঢাকায় একটি অনুষ্ঠান থাকার কারণে তিনি সিলেট আসেননি।