সিকৃবি সংবাদদাতা
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)। তারা প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ চেয়ে প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়েছেন। রবিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। ছাত্রদলের ব্যানার ছেঁড়া ইস্যুতে সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হন। তারা আট দফা দাবিও জানিয়েছেন।
রাতে ব্যানার ছেঁড়া নিয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল-এলাকাবাসীর সঙ্গে ছাত্রলীগ সমর্থিত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ- এমন শিরোনামে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানারও ছেঁড়া হয়।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি বিবৃতি সামনে সামনে আসে। এতে বলা হয়, কুচক্রী মহল পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে টানানো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তা-সংবলিত ব্যানার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা-সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন রাষ্ট্রবিরোধী ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় কর্মকাÐের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, তদন্তবিহীনভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ সমর্থিত শিক্ষার্থী আখ্যা দেওয়া হয়েছে। উ™‚¢ত পরিস্থিতিতে সিকৃবি প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে বৈঠকের আহŸান জানায়। তবে শিক্ষার্থীরা তা নাকচ করে সবাইকে নিয়ে কথা বলতে চান বলে জানান।
এ বিষয়ে জানতে সিকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক আলিমুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্রদলের ব্যানারের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে টানানো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তা-সংবলিত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটি বিবৃতি ড্রাফট (খসড়া) করেছিলাম। ছাত্রদলের ব্যানারের সঙ্গে ভর্তির ব্যানার ছেঁড়া রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধের সামিল কি না, তা উল্লেখ করা হলেও তা গণমাধ্যমে পাঠানো হয়নি। সেটি কীভাবে প্রকাশ পেল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান উপাচার্য। তিনি বলেন, ভর্তি নস্যাৎ করতে সারা দেশে এরকমই হচ্ছে। এর পেছনে একটি মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সার্বিক বিষয় খতিয়ে প্রতিবেদন দিতে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। গতকাল কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আন্দোলনকারীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে উ™‚¢ত পরিস্থিতি নিরসনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বসে আলোচনা করে সুরাহার চেষ্টা চলছে বলেও জানান উপাচার্য। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও এলাকাবাসীর সঙ্গে ছাত্রলীগের সমর্থক শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ এবং ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় ফটকের বাইরে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে ছাত্রদলের সাঁটানো ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনার জের ধরে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে সেনাসদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
সংঘর্ষের ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটি বাতিল করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। শিগগির এ ইউনিটের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়। কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনের অনুমোদনক্রমে আরও দুটি বিজ্ঞপ্তি সংগঠনের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেন দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
এর একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. সাহেদুল ইসলামকে (রোমেন) প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হলো। সেই সঙ্গে ছাত্রদলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশ দেওয়া হলো।’
অপর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- ‘সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার যথাযথ তদন্তের জন্য ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ও প্রচার সম্পাদক শরীফ প্রধান ওরফে শুভর নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। রোববারের মধ্যে এ কমিটিকে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে লিখিতভাবে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
যদিও এ ঘটনায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার রাতে গঠিত তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. এমদাদুল হক, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কাওছার হোসেন ও অধ্যাপক ড. শাহানা বেগম। এ কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।