ওসমানী বিমানবন্দরে স্বর্ণের বারসহ আটক হোসাইন ষড়যন্ত্রের শিকার

4

সিলেট প্রেসক্লাবে পিতার সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত ২৮ আগস্ট প্রায় ১৬ কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণসহ আটক হোসাইন আহমদ (২০) ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। এলাকার ছগাম গ্রামের রফিক আহমদের ছেলে শাহনুর তাকে ফাঁসিয়েছেন।
সোমবার দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেছেন হোসাইনের বাবা গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল ইউনিয়নের ঘোড়ামারা কান্দি গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দুবাই যাওয়ার এক মাস পর মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে দ্রæত দেশে ফিরছিলেন হোসাইন। একই ইউনিয়নের ছগাম গ্রামের রফিক আহমদের পুত্র শাহনুর তাকে একটি ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে সেটি তার লোকজনের কাছে পৌঁছে দিতে বলেন। কিন্তু ওসমানী বিমানবন্দরে স্বর্ণ উদ্ধারের বিষয়টি তাকে হতবাক করে।
নুরুল ইসলাম বলেন, একই এলাকার পরিচিত মানুষ হওয়ায় সরল বিশ^াসে আমার ছেলে হোসাইন ব্যাগটি সাথে করে নিয়ে আসে। সাধারণত বিদেশ থেকে কেউ ফিরলে পরিচিত অনেকের মালামাল সঙ্গে আনেন। শাহনুর নিজের এলাকার হওয়ায় একদম সরল ও স্বাভাবিকভাবেই তার ব্যাগটি আমার ছেলে নিয়ে আসে। কারণ শাহনুর বলেছে- অল্প কিছু মালামাল সে দিয়েছে তার বাড়ির জন্য। আমার ছেলে তখনো জানতো না এই ব্যাগটিতে কি রয়েছে।
স্বর্ণ আটকের খবরে নিজেরাও বিস্মিত হয়েছেন জানিয়ে হোসাইনের বাবা বলেন, সিলেট এয়ারপোর্টে বিমান নামার পর ইমিগ্রেশন শেষ করে আমার ছেলে যখন বাইরে বের হয়ে আসে তখন আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। বের হতে দেখে এগিয়ে গেলে দেখি কিছু মানুষ আবার তাকে ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে। পরে জানতে পারি তারা গোয়েন্দা সংস্থার লোক। কিন্তু কি কারণে তাকে ভেতরে নিয়ে গেছেন প্রথমে আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। পরে, জানা যায়Ñ শাহনুরের দেওয়া ব্যাগ তল্লাশি করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ১০৫টি স্বর্ণের বার ও চারটি স্বর্ণের চাকপিন্ড পেয়েছেন। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা। নিজের ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে নুরুল বলেন, আমার ২০ বছর বয়সী ছেলে এ ধরনের সাহস কোনোভাবেই করতে পারবে না। তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আমার অবুঝ নিরপরাধ সন্তান আজও জেলহাজতে। হোসাইনকে একাধিকবার রিমান্ডে নেওয়ার তথ্য জানিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, হোসাইনকে একাধিকবার রিমান্ডে নিলেও রহস্যজনক কারণে পুলিশ তার কোন বক্তব্য রেকর্ড করেনি। রিমান্ডে নিয়ে আবার কোনো কথা না বলেই জেলে পাঠিয়ে দেয়। ফলে সে প্রকৃত ঘটনা কারো কাছে তুলে ধরতে পারছে না।
শাহনুর পরিকল্পিতভাবে তাকে ফাঁসিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, আমরা শাহনুরের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছি। সে শিকার করেছে আমার ছেলের অজান্তে সে ওই ব্যাগের মধ্যে স্বর্ণ ঢুকিয়ে দিয়েছিল। তার সাথে কথোপকথনের সেই রেকর্ড আমার কাছে রয়েছে।
নুরুল ইসলাম আরও বলেন, হোসাইনকে জেল থেকে বের করিয়ে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিল শাহনুর। অথচ গত দেড় মাসেও খোঁজখবর নেয়নি। ফলে আমার নিরপরাধ ছেলেটি জেলে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে।
তিনি বলেন, মায়ের অসুস্থতার খবরে যে ছেলে বিদেশ যাওয়ার একমাসের মধ্যে পাগল হয়ে দেশে ফিরছিল সেই ছেলে এখন মাকে দেখতে না পেয়ে জেলহাজতে। এদিকে তার মা এখন ছেলের জন্য পাগলপ্রায়। ভাইবোনেরা সবসময় দুশ্চিন্তায় রয়েছে। পিতা হিসেবে আমি নিজেই নির্বাক। কাউকে শান্তনা দিতে পারছি না।
এই বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তিনি ছেলে হোসাইন আহমদের নিঃশর্ত মুক্তি ও ঘটনার মূল হোতা শাহনুরকে আটক ও শাস্তির দাবি জানান এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।