কাজির বাজার ডেস্ক
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পদ্মা নদীতে চুবানি এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নদীতে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
রোববার চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি সৌরভ প্রিয় পাল বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে এ মামলা করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ১৮ মে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার যে গভীর ষড়যন্ত্র ও নীলনকশা তার মনে সুপ্তভাবে বিদ্যমান ছিল এবং প্রকাশ্য বিষোদগারের মাধ্যমে তা দেশবাসীর কাছে প্রকাশ করেন। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন- পদ্মা সেতুতে নিয়ে খালেদা জিয়াকে টুস করে ফেলে দেওয়া উচিত, একইসঙ্গে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধের চেষ্টায় নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পদ্মা নদীতে দুটি চুবানি দিয়ে সেতুর ওপর তোলা উচিত বলে মন্তব্য করেন।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আদালত মামলা আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অথবা সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন আদালত।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম হত্যা মামলার প্রতিবেদন ১৫ অক্টোবর : মুদি দোকানদার আবু সায়েদকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৫ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত। রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকী আল ফারাবী এ দিন ধার্য করেন।
এদিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করেননি। এজন্য আদালত মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন ওই দিন ধার্য করেন। এর আগে ১৩ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে এসএম আমীর হামজা নামে এক ব্যক্তি মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এরপর শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে মোহাম্মদপুর থানাকে নির্দেশ দেন আদালত। মোহাম্মদপুর থানা পরদিন মামলার মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ ও যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে গত ১৯ জুলাই বিকাল ৪টার দিকে মোহাম্মদপুর থানাধীন বছিলায় ৪০ ফিট চৌরাস্তায় আবু সায়েদ নিহত হন। এরপর গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এটিই প্রথম মামলা হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে সারা দেশে শতাধিক মামলা হয়েছে।
মামলার বাদী আদাবর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী এসএম আমীর হামজা শাতিল। তিনি সচেতন নাগরিক হিসেবে একজন নিরীহ নাগরিক হত্যার বিচার চেয়ে এই মামলা করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা মিছিল সমাবেশ করে। ওই সব শান্তিপূর্ণ মিছিলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। বহু ছাত্র-জনতা নিহত ও আহত হন। গত ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরে বসিলার ৪০ ফিট এলাকায় ছাত্র-জনতা শান্তপূর্ণ মিছিল সমাবেশ করছিল। সেখানেও পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। রাস্তা পার হওয়ার সময় স্থানীয় মুদি দোকানদার আবু সায়েদ মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তিনি ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন।
মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, নিহত সায়েদকে তার গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদায় নতুন বস্তি প্রধান হাটে নিয়ে দাফন করা হয়। তার মা, স্ত্রী, ছেলে সন্তান সেখানেই থাকেন। এ কারণে তারা ঢাকায় এসে মামলা করতে অপারগ। এজন্য বিবেকের তাড়নায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য মামলাটি করেছেন তিনি।