শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো দু’টি মামলা

3

কাজির বাজার ডেস্ক

জেলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের ৩১৩ নেতাকর্মীর নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় এই দায়ের করা হয়। মামলায় ৩১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মুন্সীগঞ্জ শহরের কৃষিব্যাংক চত্বরে গুলিতে নিহত ডিপজল সরদারের নানী শেফালী বেগম বাদী মামলা দায়ের করেন। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ইন্সপেক্টর(তদন্ত) হারুনুর রশিদ গতকাল সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় মুন্সীগঞ্জ- আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব ছাড়াও আসামি করা হয়েছে সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক লুৎফরর হমান, সাবেক সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আনিছউজ্জামানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের।
মামলায় ৩১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানাযায়, গত ৪ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারকে পদত্যাগের একদফা দাবিতে সুপার মার্কেট চত্বরে ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছিল। সে সময় মুন্সীগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ স¤পাদক সাজ্জাদ হোসেন সাগরের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ডিপজলকে গুলি করা হয়। এছাড়াও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করে। মামলার অন্য আসামিরা তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। এক পর্যায়ে ছাত্র-জনতার ওপর এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ করতে করতে তারা সেই স্থান ত্যাগ করে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় কেরানীগঞ্জের শিক্ষার্থী নাদিমুল হাসান এলেনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৯০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
এ মামলার বিষয় শুক্রবার (৩০ আগস্ট) ঢাকার কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের পূর্বশান্তপাড়া এলাকার বাসিন্দা মা কিসমত আরা রাজধানীর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামে আদালতে বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। জানা যায়, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সূত্রাপুর থানাধীন কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের কাছে ওয়াসা পানির পাম্পে কাছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের ছোড়া গুলিতে নাদিমুল হাসান এলেনের মৃত্যু হয়। নাদিম বোরহানউদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী এবং কেরানীগঞ্জের লায়ন শপিংমলের একজন কর্মচারী ছিলেন। মামলার উল্লেখযোগ্য অপর আসামিরা হলেন, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, হাসান মাহমুদ, শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলে শামস পরশ, জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাঈদ খোকন কাজী ফিরোজ রশীদ, অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, আব্দুল্লাহ আল মামুন, হাবিবুর রহমান, সৈয়দ নুরুল ইসলাম, হারুন-অর-রশীদ, বিপ্লব কুমার সরকার।
এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের অজ্ঞাতনামা নেতারা পিওএম থেকে নিযুক্ত পুলিশ সদস্যসহ আরও ১০০ থেকে ১৫০ জন। এর মধ্যে আদালত বাদির জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগটি সূত্রাপুর থানা পুলিশকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এদিকে ইস্পাহানী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াজ হোসেন হত্যার ঘটনায় উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ ও হযরতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনসহ ৩১০ জনের নামে মামলা করেছেন নিহতের চাচা রমজান আলী; কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় এ হত্যা মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয়ে ২০০ জনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের মারধর, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ঘটনায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ ও থানা আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক ম.ই. মামুনসহ ৪১৩ (অজ্ঞাত ৩০/৪০) জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ে হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন, শুভাঢ্যা ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন, আগানগর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর শাহ, জিনজিরা ইউপি চেয়ারম্যান সাকুর হোসেন, কোন্ডা ইউপি ফারুক চৌধুরী।
শুক্রবার(৩০ আগস্ট) মামলা করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবির। তিনি মুঠোফোনে বলেন, এই মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।
এবিষয়ে জানতে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ ও থানা আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক মামুনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়া দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও মডেল থানা মামলায় আসামি করা উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদেরও মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।