মৌলভীবাজারে বন্যায় কৃষি ও মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি

13

কাজির বাজার ডেস্ক

গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে আসা প্রবাহিত পানির কারণে মৌলভীবাজারের সদর, রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী ও কমলগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন অসংখ্য বসতঘর, গ্রামীণ সড়ক, ফসলি জমি ও ছোট-বড় পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে কৃষি ও মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শামসুদ্দিন আহমেদ জানান, এবারের বন্যায় ৪৯ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমির ধান ও অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও ফসলের প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা হয়নি। কিন্তু অধিকাংশ ঘরবাড়ি থেকে পানি সরে গেলেও ফসলি জমিতে এখনো পানি রয়েছে, যা ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ আরও ভয়াবহ।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহনেওয়াজ সিরাজী জানান, এবারের বন্যায় ১ হাজার ৬৫০টি পুকুর ও দীঘির ২১০ টন মাছ পানির স্রোতে ভেসে গেছে। প্রাথমিকভাবে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা বলে জানা গেছে। তবে ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে, কারণ অনেকেই এখনো তাদের ক্ষতির তথ্য দেয়নি। সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহের পর ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের কষ্টের ছবি ফুটে উঠছে।
রাজনগরের কদমহাটা এলাকার বাসিন্দা সুহেল মিয়া জানান, তার দুটি পুকুরে প্রায় ১ লাখ টাকার পোনা মাছ ছিল, যা এবারের বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।
অন্যদিকে কমলগঞ্জ উপজেলার চৈত্রঘাট গ্রামের সুরুজ মিয়া জানান, তার ৩২ শতক ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে, যা তার প্রায় ৪০ হাজার টাকার ক্ষতি করেছে।
প্রশাসন ও অন্য সংস্থাগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় তৎপর রয়েছে জানিয়ে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, নদীর বাঁধ রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্বেচ্ছাসেবীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন।
জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, জেলার সাতটি উপজেলার ৫২টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রায় ২ লাখ ৩৭ হাজার ৯৫ জন মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন ৬২টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে এবং ১০২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বর্তমানে ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৮ হাজার ৫৮১ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসন ইতোমধ্যে ৫১৬ টন ত্রাণের চাল এবং ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তিনি আরও জানান, যদিও বন্যার পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, তবে এই বিপর্যয়ের পূর্ণ মাত্রা এবং সঠিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে আরও সময় লাগবে। আশ্রয়কেন্দ্র ও ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।