আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো ১১টি মামলা

11

কাজির বাজার ডেস্ক

কোটা সংস্কার আন্দোলনে হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাসহ আরো সিলেটসহ দেশজুড়ে এগারোটি নয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী-এমপি পুলিশসহ বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে চট্টগ্রামে হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সেতুমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৭৭ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় চট্টগ্রামে নিহত ফয়সাল আহমেদের পিতা জাকির হোসেন এ অভিযোগ দায়ের করেন। তার আইনজীবী হলেন মুহাম্মদ হুজ্জাতুল ইসলাম খান
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কো-অর্ডিনেটর বরাবর গতকাল এ আবেদন দাখিল করা হয়েছে। তদন্ত সংস্থার অফিস বিষয়টি নথিভুক্ত করে রেখেছেন (ডাইরি নং ৬৮২)। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইন ১৯৭৩ এর ৮ ধারা অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ এর ৩(২) ও ৪(১) (২) ধারা অনুযায়ী গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
শেখ হাসিনা ছাড়াও অপর আসামিরা হলেন, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন মাহতাব উদ্দিন আহমদ, আ.জ.ম নাছির উদ্দিন, রেজাউল করিম চৌধুরী, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীসহ ৭৭ জন।
মামলায় ঘটনার তারিখ উল্লেখ করা হয় ১৬ জুলাই। অভিযোগের ঘটনাস্থল উল্লেখ করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুর মোড়। মামলায় আসামিদের নির্দেশ ও পরিকল্পনায় অন্যান্য আসামিগণ দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে নির্মূল করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মিরপুর, রামপুরা ও সূত্রাপুর থানায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা : সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলাগুলো হয়েছে মিরপুর, রামপুরা ও সূত্রাপুর থানায়। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত মামলা তিনটির অভিযোগ এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনটি মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এতে মিরপুরে একটি বেসরকারি কোম্পানির অফিস সহায়ক ফিরোজ তালুকদার, রামপুরার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী রাসেল মিয়া ও সূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা জুনিয়র টেকনিশিয়ান এলেম আল ফায়দি নিহত হন।
এ নিয়ে ৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৩২টি মামলা হলো। এর মধ্যে ২৯টি হত্যার অভিযোগে, ১টি গণহত্যা, ১টি অপহরণ ও ৪টি গুলি করার অভিযোগে মামলা।
হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা : ফিরোজ তালুকদারকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলাটি করেন নিহত ফিরোজ তালুকদারের স্ত্রী রেশমি আক্তার।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাবেক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলি মিরপুর গোলচত্বর-১০ এলাকায় অবস্থান করা ফিরোজ তালুকদারের গায়ে লাগে। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রামপুরায় গুলি করে হত্যা : বেসরকারি চাকরিজীবী রাসেল মিয়াকে হত্যার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাঁর স্ত্রী শারমিন আক্তার। মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মুহিববুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াকিল আহমেদ, যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেন খান নিখিল, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ, ঢাকা মহানগর (উত্তর) মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, তাঁর স্বামী রাসেল মিয়া একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। রাসেল মিয়ার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। কোটাবিরোধী যৌক্তিক আন্দোলনে রাসেল মিয়া অংশ নিয়েছিলেন। গত ১৯ জুলাই বেলা দুইটার দিকে রামপুর গোলচত্বরে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি, তথা যৌথ বাহিনীর ছোড়া গুলি রাসেল মিয়ার বুকে লাগে। পরে তিনি মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, পরস্পর যোগসাজশে আসামিরা ছাত্রসমাজ ও জনসাধারণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। যৌথ বাহিনী সেদিন চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করে রাসেল মিয়াকে হত্যা করে।
সূত্রাপুরে মাথায় গুলি করে হত্যা : জুনিয়র টেকনিশিয়ান এলেম আল ফায়দি হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামসুল আলম।
মামলায় অন্য যাঁদের আসামি করা হয়েছে তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, ওয়ারী বিভাগের ডিসি ইকবাল হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য আবু সাঈদ খোকন, সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান সেলিম, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুর রহমান মিয়াজী, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রঞ্জন বিশ্বাস, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফ হোসেন ছোটন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন, সরকারি কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাওলাদার, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত মোড়ল ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মিরাজ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, আনোয়ারা বেগম, মোয়াজ্জেম, জুয়েল, জাহিদুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান, ফারহান লাবিব, সাজবুল, ইব্রাহিম সালিন, মীর মুকিত, অর্জুন বিশ্বাস, মাহিমুর রহমান, মিনুন মাহফুজ ও শাহরুখ আলম।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেছেন, গত ১৯ জুলাই বেলা দুইটার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর এলাকায় মিছিল বের করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শেখ হাসিনাসহ অন্য ব্যক্তিদের নির্দেশে সেদিন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাসহ পুলিশ নিরীহ ছাত্রদের ওপর গুলি ছোড়ে। এতে এলেম আল ফায়দির মাথায় গুলি লেগে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান।
শেখ হাসিনাসহ ৪৩০ জনের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা : রাজধানীর বাড্ডা থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার (২১ আগস্ট) রাজধানীর বাড্ডা থানায় এ মামলা করা হয়। বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আবদুর রউফ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রগতি সরণিতে মো. সুমন সিকদার (৩১) নামে এক যুবক গুলিতে নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের মা মোছা. মাছুমা এজাহারটি দায়ের করেন। এজাহারটি মামলায় নথিভুক্ত করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে নিহত মো. সুমন সিকদারের মা অভিযোগ করেন, গত ১৯ জুলাই দুপুর ১২টার দিকে সুমন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। এ সময় প্রগতি সরণিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিল হচ্ছিল। মিছিল লক্ষ্য করে আসামিরা গুলি ছুড়লে তা সুমনের শরীরে লাগে। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।
মামলার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক, বসুন্ধরা গ্রæপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, তার ছেলে বসুন্ধরা গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর, ৭১ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু।
এ ছাড়াও বাড্ডার ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী ও অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা-সোবহান-আনভীরসহ ১৭৯ জনের নামে হত্যা মামলা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বসুন্ধরা গ্রæপের চেয়ারম্যান আকবর সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ ১৭৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
নিহত হাফিজুল শিকদারের (২৮) পিতা আবু বকর শিকদার বাদি হয়ে বাড্ডা থানায় এই মামলা করেন।
এজহারে আসামি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইসিটি প্রতিমিন্ত্রী জুনাইদ আহদের পলক, তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা-১১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ওয়াকিল উদ্দিন ও একেএম রহমতুউল্যাহর নামও উল্লেখ করা হয়েছে।
এজহারে আবু বকর শিকদার বলেন, গত ২০ জুলাই বিকাল তিনটার দিকে আমার ছেলে তার কর্মস্থলে উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। এ সময় মেরুল বাড্ডার প্রগতি স্বরণিতে আসামাত্র আসামিদের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করে আমার ছেলে হাফিজুল শিকদারকে হত্যা করে। আসামিদের গুলিতে আমার ছেলের ঘাড়ের কাছ দিয়ে ঢুকে ভগল ভেদ করে বেরিয়ে যায়। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার ছেলেকে শনাক্ত করি।
আসামিদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করতে দেরি এবং থানার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মামলা করতে বিলম্ব হয় বলে এজহারে উল্লেখ করেন তিনি।
ল²ীবাজারে যুবক হত্যায় শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুরান ঢাকার ল²ীবাজারে এলেম আল ফায়দি নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালতে সামসুল আরেফিন নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী এ মামলা দায়ের করেন।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগটি সূত্রাপুর থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার বাদী সামসুল আরেফিন।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেনÑসাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক কমিশনার ডিএমপি হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার, ওয়ারীর ডিসি ইকবাল হোসেন, ঢাকা-৬ আসনের সাবেক এমপি আবু সাইদ খোকন, ঢাকা-৭-এর সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিম, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রহমান মিয়াজী, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রঞ্জন বিশ্বাস, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফ হোসেন ছোটন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজী, সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইন, কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন সাগর, সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাওলাদার, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত মোড়ল, সাধারণ সম্পাদক আশিকুল ইসলাম আশিক।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৯ জুলাই ল²ীবাজার এলাকায় জুমার নামাজ আদায়ের পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সিটি করপোরেশন মহিলা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরাসহ আপামর জনগণ বৈষম্যবিরোধী মিছিল করেন। আসামিরা গণভবনে বসে তাঁদের দলীয় নেতা-কর্মীদের এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করার নির্দেশ দেন।
তেজগাঁওয়ে শেখ হাসিনা, মুনতাসীর মামুন ও নিঝুম মজুমদারের বিরুদ্ধে মামলা : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় গুলিতে শিক্ষার্থী মো. তৌহিদুল হক নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ও নিঝুম মজুমদারসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হুদা চৌধুরীর আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী নিহতের বড় ভাই তারিকুল ইসলাম।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে তেজগাঁও থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদীর আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অপর উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ ও ডিএমপির বিপ্লব কুমার।
মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, আসামিদের নির্দেশে অজ্ঞাতনামা আরও ২ হাজার ৩০০ জন পুলিশ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ৪ আগস্ট তেজগাঁও থানাধীন ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজের নিচে সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে গুলি করে। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী মো. তৌহিদুল হক নিহত হন।
নারায়ণগঞ্জে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো দুইটি মামলা : জেলার সাইনবোর্ড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ড্রাইভার আবুল হোসেন মিজি নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, শামীম ওসমানসহ ৮০ জনের নামে আজ ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আজ বুধবার বিকেলে নিহত আবুল হোসেন মিজির মা সাহিদা বেগম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সাহিদা বেগম মামলার এজাহারে অভিযোগ করেন, গত ১৯ জুলাই শুক্রবার তার ছেলে আবুল হোসেন মিজি বাসের ড্রাইভিং করার জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে রওয়ানা হয়ে অটোরিকশা যোগে সাইন বোর্ড আসেন। ছাত্র-জনতার রাস্তায় অবস্থান করায় তিনি অটো থেকে নেমে পড়েন। এ সময় সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নির্দেশে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা- কর্মিরা সাইনবোর্ডে জড়ো হয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন পন্ড করতে গুলিবর্ষণ করেন। ওইসময় শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমীর ওসমান তার হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে গুলি করলে আবুল হোসেন মিজির পেটে গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিক মনির হোসেন, জুয়েল, আল আমিন, ইসলামসহ কয়েকজন মিলে তাকে উদ্ধার করে প্রোএকটিভ মেডিকেলে নিয়ে যান। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে আবুল হোসেন মিজি মারা যান।
এদিকে, জেলার রূপগঞ্জে গুলিবিদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থী রোমানের মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগী গাজী ও তার ছেলে গোলাম মর্তুজা পাপ্পাসহ ১০৫ জনকে আসামী করে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আজ বুধবার বিকেলে নিহত রোমানের খালা রিনা বাদী হয়ে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার বাদী এজাহারে বলেন, ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের খবরে ছাত্র জনতার আনন্দ মিছিল চলাকালে আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা পিস্তল ও অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রূপগঞ্জের চনপাড়া এলাকার জনকল্যাণ স্কুলের সামনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
এ সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে রোমান মিয়া আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পূর্বগ্রাম হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রোমান মিয়া নব কিশোলয় হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিল।