শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো পাঁচটি মামলা

2

কাজির বাজার ডেস্ক

নতুন করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় তাঁর বোন শেখ রেহানা, পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানা কামাল, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী লীগ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর ল²ীবাজার এলাকায় কবি নজরুল কলেজের ছাত্র ওমর ফারুককে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালতে মামলাটি করেন নিহত কলেজছাত্রের মা কুলছুমা আক্তার। এসময় আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে সূত্রাপুর থানা পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ওমর ফারুক মোহাম্মাদপুর থানাধীন কালভার্ট ফুট ওভারব্রিজের নিচে আন্দোলোনকারীদের মাঝখানে পড়ে যান। এসময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে।
মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ।
বগুড়ায় : বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে কমর উদ্দিন বাংগী (৪০) নামে এক রিকশাচালক নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৮২ জনের নাম উল্লেখ করে ৩৮২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে।
নিহতের স্ত্রী তহমিনা বেগম মঙ্গলবার দুপুরে সদর থানায় এ মামলা করেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি মজিবর রহমান মজনু ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি রাগেবুল আহসান রিপু। আসামিরা সবাই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, নিহত রিকশাচালক কমর উদ্দিন বাংগী বগুড়া সদরের আকাশতারা গ্রামের বাসিন্দা। গত ৪ আগস্ট বিকাল ৩টার দিকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছিল। রিকশাচালক কমর উদ্দিন বাংগী শহরের নবাববাড়ি সড়কে ডায়াবেটিস হাসপাতালের সামনে আন্দোলনে অংশ নেন। এ সময় শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের নির্দেশে অন্য আসামিরা তাকে হত্যা করে।
বগুড়া সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রিকশাচালক কমর উদ্দিন বাংগীকে হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী মঙ্গলবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৮২ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। এজাহারে অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।
এদিকে গত ৪ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বগুড়া শহরের সাতমাথায় সেলিম হোসেন (৪০) নামে এক স্কুলশিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ব্যাপারে নিহতের বাবা সেকেন্দার আলী গত ১৫ আগস্ট রাতে সদর থানায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ১০১ জনের নাম উল্লেখ করে ৪৫১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। আসামিরা সবাই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতা। এ মামলায় পুলিশ আবদুল লতিফ নামে এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দাবি করেন, শহরের ডায়াবেটিক হাসপাতালের সামনে রিকশাচালক কমর উদ্দিন বাংগী পুলিশের হামলায় নিহত হয়েছেন। এছাড়া শহরের সাতমাথায় ডাকবাংলোর সামনে আন্দোলনকারীরা পুলিশ ভেবে শিক্ষক সেলিম হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করে। আর এর দায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্যদের ওপর চাপানো হচ্ছে। তবে সুষ্ঠু তদন্ত হলে ঘাতকরা শনাক্ত হবে।
যাত্রাবাড়ীতে টোল প্লাজায় ফল দোকানি হত্যা : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ছাত্র-জনতার মিছিলে যাত্রাবাড়ীতে টোল প্লাজায় ফল দোকানি মো. ফরিদ শেখকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং বোন শেখ রেহানাসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) এ মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাকিল আহাম্মদের আদালতে মামলাটির আবেদন করেন নিহত ফরিদের বাবা মো. সুলতান শেখ। এসময় আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদেশ অপেক্ষমাণ রেখেছেন।
মামলার আবেদনে অপর আসামিরা হলেন ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, হাছান মাহমুদ, জুনায়েদ আহমেদ পলক, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, শেখ ফজলে নূর তাপস, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সৈয়দ নুরুল ইসলাম, হারুন-অর-রশিদ, বিপ্লব কুমার, হাবিবুর রহমান, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, আমির হোসেন আমু, সাদ্দাম হোসেন ও আবুল হাসান। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ‘গত ৪ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলন চলাকালে বিকাল সাড়ে ৩টায় ফরিদ শেখ যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের টোল প্লাজার দক্ষিণ পাশের রাস্তা দিয়ে তার ফলের দোকানে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলির আঘাতে মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। আশপাশের লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ আগস্ট সকাল ১১ টা ৪৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান তিনি।’
সোনারগাঁ : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নারায়ণগঞ্জের কাচঁপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে পরিবহন শ্রমিক জনি নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সোনারগাঁ থানায় নিহত জনির বাবা ইয়াসিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আমীর খসরু।
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবু, গোলাম দস্তগীর গাজী, আব্দুল্লাহ আল কায়সারসহ ১৮৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১২০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
রংপুর : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুরে পুলিশের গুলিতে সবজি বিক্রেতা সাজ্জাদ হোসেন নিহতের ঘটনায় আদালতে হত্যা মামলা করেছেন তার স্ত্রী জিতু বেগম। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৫৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে অন্তত ৩০০ জনকে।
মঙ্গলবার বিকেলে রংপুর অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাজু আহমেদ বাবুর আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে কোতোয়ালি থানাকে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন বকুল মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ১৯ জুলাই রংপুর মহানগরীর সিটি বাজার, রামমোহন মার্কেট ও কৈলাশরঞ্জন স্কুল সড়ক এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নির্বিচারে গুলি চালান। ওইদিন পুলিশের গুলিতে নগরীর পূর্ব শালবন এলাকার সবজি বিক্রেতা সাজ্জাদ হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
মামলার উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, হাসানুল হক ইনু, নাঈমুল ইসলাম খান, রাশেদ খান মেনন, মোহাম্মদ এ আরাফাত, অপু উকিল, সাবেক এমপি আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, জাকির হোসেন সরকার, আসাদুজ্জামান বাবলু, বদরগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র টুটুল চৌধুরী, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ ৮ পুলিশ কর্মকর্তা, উপজেলা এবং ইউপি চেয়ারম্যানসহ জেলা, মহানগর ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।