জাতীয় যুব দিবসের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী ॥ জেলা-উপজেলায় যুব কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে

22
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওসমানী মিলনায়তন প্রান্তে যুক্ত হয়ে জাতীয় যুব দিবসের উদ্বোধন এবং জাতীয় যুব পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি জেলা-উপজেলায় যুব কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে জানিয়ে বলেছেন, এর মাধ্যমে তারা যেন কাজ করতে পারে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কারণ প্রশিক্ষিত যুবশ্রেণি গড়ে তোলা একান্তভাবে অপরিহার্য। দেশে এখন কত প্রশিক্ষিত যুবক রয়েছেন, তারও একটি ডাটাবেজ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
মঙ্গলবার জাতীয় যুব দিবস-২০২২ এর উদ্বোধন এবং ‘জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা কারও কাছে হাত পেতে নয়, আমরা নিজের দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করব নিজের শক্তি, মেধা সম্পদ দিয়ে। এই চিন্তাটা আমাদের যুবকদের মাঝে সবসময় থাকতে হবে। এটা সম্ভব হলেই জাতির পিতার ভাষায় তিনি বলেন, বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী চলমান কোভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ভবিষ্যদ্বাণী- আসন্ন বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ ও খাদ্য সংকট মোকাবিলায় তরুণদের খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে নিয়োজিত থাকতে হবে বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আজকে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থাও বলছে বিশ্বে আগামীতে খাদ্যাভাব ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে, সে অবস্থায় আমাদের বাংলাদেশটাকে এর থেকে মুক্ত রাখতে হলে আমাদের প্রতি ইঞ্চি জমি যেমন আবাদ করতে হবে, তেমনি খাদ্য পণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। সেক্ষেত্রে আমি আমাদের যুব সমাজকে আহ্বান করব যেন আরও উদ্যোগ নেন।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মেসবাহ উদ্দিন ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আজহারুল ইসলাম খান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ‘জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২২’ এর বিজয়ী ২১ জনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। পুরস্কার হিসেবে একটি ক্রেস্ট, সনদ এবং নির্দিষ্ট মূল্যমানের চেক প্রদান করা হয়।
পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে মো. জাকির হোসেন এবং রীতা জেসমিন অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় যুব দিবসের একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি এবং এর থিম সঙ্গও পরিবেশিত হয়। প্রতি বছর ১ নভেম্বর জাতীয় যুব দিবস পালিত হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে-‘প্রশিক্ষিত যুব উন্নত দেশ : বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।’
প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, যার যার এলাকা ভিত্তিকও কাজ করতে পারেন, কেননা খাদ্য পণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে আমরা যেমন নিজেদের চাহিদা মেটাতে পারব, তেমনি অনেক দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশকে সহায়তা করতে পারব। আমাদের মাটি উর্বর আর সব থেকে বড় কথা আমাদের জনশক্তি, সেই জনশক্তিটাকেই আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা আমাদের দেশ দিয়ে গেছেন সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাতেই আমাদের এ দেশকে গড়ে তুলতে হবে। এটা মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে আমাদের যুবকরাই হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। যার যা কিছু ছিল তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করেই আমাদের জন্য বিজয় অর্জন করেছে। সেই বিজয়ী জাতি হিসেবে আমাদের সবসময় মাথা উঁচু করে চলতে হবে।
যুবকদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির দিকেই তাঁর সরকারের দৃষ্টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের মাঝে নেতৃত্বের যে গুণাবলী আছে এবং প্রতিভা আছে তা যেন বিকশিত হয় এবং তাদের কর্মক্ষমতা যেন দেশের কাজে লাগে সেজন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সরকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতি জেলা-উপজেলায় যুব কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে।
এর মাধ্যমে তারা যেন কাজ করতে পারে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে সেই উদ্যোগটাই নেওয়া হচ্ছে। কেননা একটি প্রশিক্ষিত যুবশ্রেণি গড়ে তোলা একান্তভাবে অপরিহার্য। তবে, আমাদের দেশে এখন কত প্রশিক্ষিত যুব শ্রেণি রয়েছে তার একটি ডাটাবেজ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
সরকারপ্রধান বলেন, এটা হলে বোঝা যাবে কারা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে এবং কারা এর বাইরে রয়েছে, তাদেরকেও তাঁর সরকার কর্মসংস্থানের আওতায় আনতে প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের সব থেকে বড় শক্তিই আমাদের যুব সমাজ। আর আজকে পৃথিবীর অনেক দেশই বয়োবৃদ্ধের দেশ হয়ে গেছে। এখনো বাংলাদেশের একটা বিরাট কর্মক্ষম যুব সমাজ রয়ে গেছে, যেটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, যুব সমাজের এই শক্তিটাকেই কাজে লাগানোর জন্য তাঁর সরকার ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে স্লোগান রাখে ‘তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার যুবসমাজকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির হালনাগাদ জ্ঞান দিয়ে গড়ে তুলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে, যাতে তারা পরিবর্তনশীল বিশ্বে প্রতিযোগিতার যোগ্য এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে সক্ষম হয়। তিনি ৬৪টি জেলায় ৬৪ হাজার যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের জন্য ঋণ প্রদানের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি এই উদ্যোগটি সময়োপযোগী কারণ বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ছে। আমরা আমাদের দেশকে বাঁচাতে পারব, যদি আমরা বায়োগ্যাস প্লান্ট এবং সৌরশক্তি স্থাপন করতে পারি।
সরকার প্রধান আরও বলেন, আমাদের যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য আমরা ১শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল সমগ্র বাংলাদেশে গড়ে তুলছি। যদি যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ নিতে পারে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে যে বিনিয়োগ হবে বা হচ্ছে, যত বেশি বিনিয়োগ হবে আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েদেরই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
কাজ কোনোটাই ছোট নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি আরেকটি কথা বলব, যেকোনো কাজ করে নিজের অর্থ নিজে উপার্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। কারণ কোনো কাজকে আমরা ছোট করে দেখি না। কোনো কাজকে আমরা ছোট করে দেখব না।
করোনা মহামারীর সময় ছাত্রদের আহ্বান জানালে তারা কৃষকদের ধান কেটে দিয়েছে যা অত্যন্ত গর্বের বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঠিক এভাবেই যুব সমাজ যেকোনো কাজ করবার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত রাখবে। যেটা আমাদের দেশকে উন্নত করে গড়ে তুলবে। যেকোনো সংকট সমাধানে যুবকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে উল্লেখ করে করোনা মহামারীর মধ্যে যুবকরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের নানাভাবে সহযোগিতা করায় অনুষ্ঠানে যুবকদের ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবকদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে চাই। আর সেদিকে লক্ষ রেখেই সারা বাংলাদেশে আমরা হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, বিশেষায়িত ল্যাব, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছি, যেখানে আমাদের যুব সমাজ প্রশিক্ষণ নিতে পারে। কেননা আমি বিশ^াস করি আমাদের যুব সমাজ মেধাবী এবং তারা সব কাজেই পারদর্শিতা দেখাতে পারবে।
২০০৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারে ‘রূপকল্প-২১’ এর মাধ্যমে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা তাঁর সরকারের একটি লক্ষ্য ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মাঝে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি এবং এরই মাঝে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। আর এই মর্যাদা ধরে রেখেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে সেজন্য সরকার ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।