কাজির বাজার ডেস্ক
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওরপাড়ের ভুকশীমইল গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব মকবুল আলী। তার বসতঘরসহ প্রায় ৩০ শতক ফসলি জমি বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্ত্রী, সন্তান আর নাতি-নাতনী নিয়ে সাতজনের পরিবার তার।
তিনি বলেন, ‘দুইটা হপ্তা (সপ্তাহ) ধরি (ধরে) পানির উপ্রেই আচি, এই পানি কমতির (কমার) কোনো লক্ষণ দেখলাম না (দেখছি না)। টুকটাক (অল্পস্বল্প) সবজি করছিলাম ইতাও (তাও) নষ্ট হই গেছে। এক একটা দিন যার (যাচ্ছে) খুবই কষ্টে।’
একই এলাকার মৎস্যজীবী দিজেন্দ্র দাস। পরিবার-পরিজন, গবাদিপশু নিয়ে সড়কে উঠেছেন ১০ দিন হলো। তিনি বলেন, ‘হাওরের লগে (পার্শ্বে) বাড়ি বানাইয়া (তৈরি) থাকি। মাছ ধইরা (ধরে) সংসার চালাই। ইবারের (এবারের) বন্যায় বাড়ি ভাঙি গেছে। মাথা গোঁজার জায়গা নাই। তাই রাস্তায় পরিবার ও গরু নিয়ে আইছি (এসেছি)। ওখন (এখন) সংসার চালাইতাম না ঘর ঠিক করতাম?’ শুধু মকবুল আলী বা দিজেন্দ্র দাস নন, সাম্প্রতিক বন্যায় হাওরপাড়ের কুলাউড়ার ভুকশীমইল, বরমচাল, ভাটেরা, জয়চন্ডী, জুড়ীর পশ্চিম জুড়ী, জায়ফরনগর, গোয়ালবাড়ি, বর্ণি, তালিমপুর, দাশেরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার বানভাসি হাজারো মানুষের গল্প যেনো একই সুতোয় গাঁথা।
স্থানীয়রা জানান, হাকালুকির বন্যায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার চারটি ওয়ার্ডের অনেক বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। নিমজ্জিত এলাকাগুলোর সড়ক যোগাযোগও এখন পর্যন্ত সচল হয়নি। নদ-নদীর পানি ধারণের ক্ষমতা কমে যাওয়ায় টুইটুম্বর হয়ে স্বল্প বৃষ্টি ও উজানের ঢলের পানি দ্রæত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। হাওরপাড়ের বানভাসি মানুষজন ভাল নেই। তারা খাদ্যসংকটের সঙ্গে বিশুদ্ধ পানির সমস্যায় ভোগছেন জানিয়ে ভুকশীমইল গ্রামের শিক্ষার্থী আজম মিয়া বলেন, ‘প্রায়ই বন্যার পানির সঙ্গে লড়াই করে এ এলাকার মানুষকে বাঁচতে হয়। জুড়ী নদীসহ হাকালুকি হাওরের নদ-নদী, খাল-বিল, নালা খনন না হওয়ায় তলদেশ দিন দিন ভরাট হচ্ছে।’
ভুকশীমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান জানান, এই ইউনিয়নে পানিবন্দি রয়েছেন প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার। তার মধ্যে তিন হাজার পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এবারের বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাস্তা ও কাঁচা ঘর। পাশাপাশি ইউনিয়নের মানুষ বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে রয়েছেন।
কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ বলেন, হাকালুকি হাওরের বেশি অংশই ভরাট হয়ে গেছে। ফলে এর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে অর্ধেকেরও বেশি। কুশিয়ারা নদী দিয়ে হাওরের পানি প্রবাহিত হতে দীর্ঘ সময় নেয়। অপরিকল্পিত বাঁধ অপসারণ করে, হাওরে বিল খনন, প্রবাহিত নদীগুলো খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে।’
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, কুশিয়ারা নদীর পানি ধীর গতিতে কমায় হাকালুকি হাওরের পানিও একই গতিতে কমছে।